ঘড়ি (Watches)

ঘড়ি এমন একটি যন্ত্র যা সময় নির্ধারণে সাহায্য করে। বিভিন্ন ধরনের ঘড়ি দেখতে পাওয়া যায়, যেমন হাত ঘড়ি, দেয়াল ঘড়ি ইত্যাদি। ঘড়ি আবিষ্কারের ইতিহাস-সূর্যঘড়ি : এটি প্রথম যান্ত্রিক ঘড়ি। আনুমানিক সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে মিসর ও ব্যালিবনে এর উৎপত্তি।যে যন্ত্রের বা ডিভাইসের সাহায্যে আমরা সময় জানতে পারি তাই হল ঘড়ি। এই ঘড়ি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে ।। যেমনঃ দেয়াল ঘড়ি, হাতি ঘড়ি, কাটা ঘড়ি,ডিজিটাল ঘড়ি, ইত্যাদি ।।
সময়ের জন্ম ঠিক কবে? এই প্রশ্নের উত্তর হয়ত অনেকের জানা নেই। সৃষ্টির আদি থেকেই মানুষ সময়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেই এগিয়ে নিয়েছে তার সভ্যতা আর ইতিহাস। আর সময়ের হাত ধরে মানুষের এই এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গী হতেই কালে কালে নানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে সময় দেখার যন্ত্র তথা ঘড়ি।একটা সময় ছিল, যখন সূর্যের অবস্থান দেখেই মানুষ ধারণা লাভ করত সময় সম্পর্কে। এমনকি মানুষের তৈরি প্রথম যান্ত্রিক ঘড়িতেও কাজে লাগানো হয়েছিল সূর্যের সময় ভিত্তিক অবস্থানের এই সূত্রকেই।
পৃথিবীতে দুই ধরনের প্রাণী আছে। সময় জানতে প্রাণীদের একভাগ ঘড়ি ব্যবহার করে আর আরেক ভাগ প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। এভাবে ভাগ করলে যারা ঘড়ি ব্যবহার করে, তাদের বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত করা জীববিজ্ঞানীদের কাছে একেবারে ভাত-মাছ হয়ে যাবে নিঃসন্দেহে। তবে আপাতত সেই তাত্ত্বিক গবেষণায় না গিয়ে সাধারণভাবে বলা যায়, আজকের দুনিয়ার আমজনতার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত যন্ত্রের নাম কম্পিউটার নয়, সম্ভবত ঘড়ি। কিন্তু এই ঘড়িকে প্রাচীনকাল থেকে অনেক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আজকের চেহারায় আসতে হয়েছে। শুরুতে সূর্যঘড়ি, বালুঘড়ি, আগুনঘড়ি, জলঘড়ি, চাবিটানা (স্পি্রংওয়ালা) ঘড়ি, ইলেকট্রনিকস ঘড়ি, পারমাণবিক ঘড়ি ইত্যাদি পার হয়ে এখন স্মার্ট যুগে এসেছে স্মার্টঘড়ি।
তবে মানবজাতির মধ্যে ঐহিত্য আর অ্যান্টিকের প্রতি দুর্বার আকর্ষণের কারণে এই স্মার্ট যুগেও এখনো মধ্যযুগের চাবিটানা ঘড়িকে বাতিল ঘোষণা করা যায়নি। সেই কারণে জাদুঘরের বদলে অনেকের হাতে হাতে এখনো এ ধরনের ঘড়ি শোভা পায়। কিন্তু আধুনিক ইলেকট্রনিকসে নির্ভরশীল অনেকের হয়তো মাথাতেই ঢোকে না, ব্যাটারি কিংবা বিদ্যুৎ ছাড়া এই যন্ত্র চলে কীভাবে! মধ্যযুগে আবিষ্কৃত এই যন্ত্র আসলে অনেক দিনই মানুষের বিস্ময়ের কারণ ছিল। কিন্তু ভেতরের কলকবজা সম্পর্কে একটু জানলে সেই রহস্য ভেদ করা সম্ভব।
আসলে চাবিটানা ঘড়ির শক্তির উৎস এক বিশেষ লম্বা প্যাঁচানো স্পি্রং (মেইন স্পি্রং), যাকে চলতি ভাষায় চাবি বলে অনেকে। এই ঘড়ি চালু করার শুরুতে চাবি ঘোরাতে হয়, যাকে বলে চাবিটানা বা দম দেওয়া। অর্থাৎ, স্পি্রংটি পেঁচিয়ে রাখা হয়। কিন্তু স্পি্রংটির স্বাভাবিক ধর্মের কারণে ধীরে ধীরে এর প্যাঁচ খুলে যেতে থাকে।
খ্রিস্টপূর্ব ষোড়শ শতকে মিসরে উৎপত্তি হয় পানিঘড়ির। বালিঘড়ির মতো করে কাজ করা এই ঘড়িটির নাম রাখা হয় ক্লেপসাড্রা। একটি বড় পাত্র থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় একটি ছোট পাত্রে পানি পড়ার মাধ্যমেই এগিয়ে চলে সময়ের কাঁটা। নিচের ছোট পাত্রের সঙ্গে জুড়ে থাকে একটি খাঁজযুক্ত দণ্ড। ওটাই একটু একটু করে ঘোরাতে থাকে সময়ের গিয়ার।
পানিঘড়ির হাত ধরেই আসে দিন, মাস ও ঘণ্টার ধারণা। গ্রিকরাই প্রথম বছরকে ১২ ভাগে ভাগ করে। এরপর উপবৃত্তাকার কক্ষপথকে ৩৬০ ডিগ্রি ধরে তাকে ১২ দিয়ে ভাগ করেই পাওয়া গেল মাসের ৩০ দিন।মিসরীয় ও ব্যাবিলনীয়রা সূর্যের উদয়-অস্ত নিয়ে দিনকে দুটো সমান ভাগে ভাগ করল। এভাবে এলো ১২+১২ = ২৪ ঘণ্টা। সে সময় তাদের সংখ্যা গণনার ভিত্তি ছিল সেক্সাজেসিমাল তথা ৬০। আর এ কারণেই ঘণ্টা ও মিনিট ভাগ হলো সমান ৬০টি ভাগে। জার্মানির পিটার হেনলেইন ১৫১০ সালে প্রথম স্প্রিং চালিত ঘড়ি আবিষ্কার করেন। তবে ওটা নিখুঁত সময় দিতে পারত না।
এ সময় আরেক জার্মান গবেষক জোস্ট বার্জিও তৈরি করেন আরেকটি যান্ত্রিক ঘড়ি যেখানে মিনিটের কাঁটা ছাড়া আর কোনো নির্দেশক ছিল না তাতে। ১৬৫৬ সালে পেন্ডুলাম চালিত প্রথম কার্যকর ঘড়ি আবিষ্কার করেন নেদারল্যান্ডসের বিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ান হাইজেন। ডানে-বাঁয়ে হেলে-দুলে বেশ ভালোভাবেই ঘুরিয়ে দিত মিনিট ও ঘণ্টার খাঁজকাটা চাকতিগুলো। পরে ১৯০৬ সালে পেন্ডুলাম ক্লকের পিছনে প্রথমবারের মতো জুড়ে দেওয়া হয় ব্যাটারি!
ঘড়ির ইংরেজি নাম ক্লকের পেছনেও কিন্তু অবদান রয়েছে এই পেণ্ডুলাম ঘড়ির। আজ থেকে প্রায় ৭০০ বছর আগে লাতিন শব্দ ‘ক্লক্কা’ বা ঘণ্টি থেকে উদ্ভব হয় ইংরেজি ক্লক শব্দটির। এদিকে আধুনিক কোয়ার্টজ ঘড়ির জন্ম হয় বিংশ শতকে। বিদ্যুৎ কিংবা চাপ প্রয়োগে একটি নির্দিষ্ট ছন্দে কাঁপতে পারে কোয়ার্টজ ক্রিস্টাল ধাতু।এ ধর্মকে কাজে লাগিয়ে ১৯২০ সালে আসে প্রথম কোয়ার্টজ ক্রিস্টাল ঘড়ি। এরই ধারাবাহিকতায় আসতে থাকে একের পর এক আধুনিক ও দামি সব ঘড়ি।
এরপর যখন ধীরে ধীরে মানুষ আরো বুঝতে শিখল তখন সময় কে জানার আগ্রহ তাদের আরো বেড়ে গেল। তাই তারা সূর্যের আলোর ছায়া দেখে সময়ের অনুমান করতে শুরু করে। তারা দেখল, সূর্যের আলোতে যে ছায়া পড়ে তা এক জায়গায় স্থির না থেকে দিন বাড়ার সাথে সাথে সেই ছায়াও সরে যায়। তখন তারা সূর্য ঘড়ি আবিষ্কার করল।
এমনিতে ঘড়ি অনেক ধরণের হতে পারে, যেমন –
Analog Watch. Digital Watch. Automatic Watch. Chronograph Watch. Diving Watch. Dress Watch. Quartz Watch. Mechanical Watch
যেই ধরণেরই ঘড়ি হোক না কেন, এর মূল উদ্দেশ্য এবং কাজ হলো আমাদের সঠিক সময় দেখানো।এমনিতে আমরা ঘড়ি বলতে সরাসরি হাতঘড়িকেই (Wrist Watch) মনের মধ্যে চিত্রাঙ্কন করে থাকি।যদি হাতঘড়ির কথা বলা হয়, তাহলে এটা মূলত একটি পোর্টেবল ডিভাইস (Portable Device) যেটাকে বহন করা এবং ব্যবহার করা অনেক সোজা।এই ধরণের ঘড়ি গুলোকে আমরা আমাদের হাতের মধ্যে পরে থাকি।
কিছু কিছু লোকেরা রয়েছেন যারা আবার পকেট ওয়াচ (pocket watch) পছন্দ করে থাকেন। আজ থেকে কিছু বছর আগে পর্যন্ত পকেট ওয়াচ গুলোর চাহিদা প্রচুর ছিল বলে বলা যেতে পারে।মোবাইল এবং স্মার্টফোনের চল চলে আসার পর থেকে পকেট ঘড়ির চাহিদা এবং ব্যবহার অবশই কোমে এসেছে।তবে যাই বলিনা কেন, সেই পুরোনো সময়ে কিন্তু পকেট ওয়াচ এর গুরুত্ব এবং চাহিদা সাংঘাতিক ছিল।
পকেট ওয়াচ গুলোকে মূলত প্যান্ট এর পকেটে রেখে বহন করা হতো, যখনি সময় দেখার প্রয়োজন মনে হতো সেই ঘড়ি পকেট থেকে বের করে তারপর সময় দেখা হতো।
হাতঘড়ি (Wrist Watch) এক প্রকারের ছোট এনালগ ঘড়ি যেটার মধ্যে এমন এক রশির মতো বানানো থাকে, যেটার ব্যবহার করে আমরা ঘড়িটি হাতে বাঁধতে পারি।ঘড়ির মধ্যে থাকা এই রশি মূলত প্লাষ্টিক, লেদার, রেকসিন বা স্টিল দিয়ে তৈরি করা হয়।যদি ঘড়িটি সম্পূর্ণ ম্যাটেল (metal) দিয়ে তৈরি, তাহলে ঘড়িটি হাতে পরার পর ব্রেসলেট এর মতোই দেখাবে।ঘড়ি হাতে বাধার জন্যে হাত ঘড়ির মধ্যে যেই রশির মতো অংশ রয়েছে, সেটাকে স্ট্রেপ বলে বলা হয়।
সর্বপ্রথম ঘড়ি কে আবিষ্কার করেন ?
ঘড়ির আবিষ্কার করেছিলেন, Peter Henlein.ঘড়ির আবিষ্কার বিশ্বের প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার গুলোর মধ্যে একটি হিসেবে ধরা হয়।এমনিতে smartphone এবং smartwatches গুলো বাজারে প্রবেশ করার পর থেকেই, হাতঘড়ির চাহিদা তুলনামূলক ভাবে কমেই এসেছে। এখন আর আগের মতো হাতঘড়ির চাহিদা লোকেদের মধ্যে নেই যেমন আগেকার সময়ে ছিল।তবে যদি ঘড়ির আবিষ্কার না করা হতো, তাহলে আমরা কখনোই একেবারে সঠিক সময়ের অনুমান কখনোই করতে পারতামনা।
দেখতে গেলে, ঘড়ির আবিষ্কারের শ্রেয় কেবল একজন ব্যক্তিকেই সম্পূর্ণ ভাবে দেওয়া হয়না।যখন বিশ্বের বিভিন্ন সভ্যতা গুলো একে ওপরের সাথে সংযুক্ত হয়নি তখনো কিন্তু বিজ্ঞানের মধ্যে সময় দেখার বিভিন্ন আলাদা আলাদা নিয়ম অবশই ছিল।কেও কেও বানিয়েছেন জল ঘড়ি আবার কেও কেও বানিয়েছিলেন ডুও ঘড়ি।তবে, যদি আপনারা গুগলের মধ্যে “Who Invented Watch” লিখে search করে থাকেন, তাহলে আপনাকে “Peter Henlein” নামটি দেখানো হবে।
আসলে, পিটার হেনলেইন সেই ব্যক্তি ছিলেন, যাকে ঘড়ি আবিষ্কারের সব থেকে অধিক ক্রেডিট দেওয়া হয়।পিটার হেনলেইন এবং ঘড়ি আবিষ্কারপিটার হেনলেইন সেই ব্যক্তি যিনি প্রথম ক্লক ওয়াচ (clock watch) আবিষ্কার করেছিলেন।মনে রাখবেন, পিটার দ্বারা তৈরি সময় দেখার যন্ত্রটিকে clock watch এর নাম দেওয়া হয় এবং এই ওয়াচ একেবারে সঠিক সময় দেখাতে পারতো।ঘড়িটি এই প্রযুক্তির ব্যবহার করে পরে গিয়ে আরো উন্নত এবং অ্যাডভান্সড ঘড়ি বানানো হয় যেগুলো অধিক ছোট এবং বেশি ভালো ছিল।
ঘড়ির আবিষ্কার কখন হয় ?
পিটার হেনলেইন দ্বারা ক্লক ওয়াচ আবিষ্কার করার আগেও কিন্তু লোকেরা এই ধরণের যন্ত্র ব্যবহার করতেন যার মাধ্যমে সঠিক সময় দেখা সম্ভব ছিল।তবে, যদি পিটার এর আবিষ্কারের কথা বলা হয়, তাহলে 1505 এ পিটার দ্বারা ক্লক ওয়াচ আবিষ্কার করা হয়।পিটার হেনলেইন দ্বারা করা ক্লক ওয়াচ এর আবিষ্কারের পরেই 1577 সালে Switzerland এর জব বর্গী দ্বারা মিনিটের কাটা থাকা ঘড়ির আবিষ্কার করা হয়।
এর পরে পরেই পকেট ওয়াচ (pocket watch) এর আবিষ্কার হয়ে থাকে এবং প্রায় 1650 সাল থেকেই লোকেরা নিজেদের পকেটে এই পকেট ঘড়ি নিয়ে ঘুরতেন।এবার, সব সময় পকেটে ঘড়ি নিয়ে ঘুরার এই সমস্যা থেকে বের হওয়ার জন্যে ব্লেজ প্যাস্কেল এই ঘড়ি একটি রশির সাহায্যে নিজের হাতে বেঁধে থাকেন। এভাবেই রিস্ট ওয়াচ (wrist watch) এর শুরু হয়ে থাকে।এর পর, Steve Mann দ্বারা 1988 সালে প্রথম লিনাক্স স্মার্টওয়াচ আবিষ্কার করা হলো।
পেন্ডুলাম ঘড়ির আবিষ্কার কে এবং কখন করেন ?
পেন্ডুলাম ঘড়ির আবিষ্কার শন 1656 এ করা হয়ে থাকে Christiaan Huygens দ্বারা।
সূর্যঘড়িঃ
সূর্যঘড়ির চারিদিকে ঘন্টার আর মিনিটের কাটা একে দেওয়া হতো আর মাঝখানে একটা লম্বা লাঠি লাগিয়ে দেওয়া হতো। সূর্য উদয় থেকে অস্ত পর্যন্ত সূর্যের আলো ওই লাঠির উপর এসে পড়ায় তার ছায়া ঐ কাটার উপর এসে পড়তো এবং দিনের বিভিন্ন সময়ে তার ছায়ায় বুঝা যেত এখন কটা বাযে।
কিন্তু এই ঘড়ির একটি সমস্যা ছিল, রাতের আধারে কিংবা দিনে আকাশে মেঘ থাকলে সূর্যের আলো না থাকার কারণে মানুষ সঠিক সময় জানতে পারত না। কিন্তু সূর্যঘড়ি ছিল মানুষের আবিষ্কার করা সর্বপ্রথম ঘড়ি।এই ঘড়ির ব্যবহার তারপর কমে যেতে থাকে ধীরে।তারই ধারাবাহিকতায় পানিঘড়ির আবিষ্কার হয়।
পানিঘড়িঃ
খ্রিস্টপূর্ব ১৪০০ সালে মীশরীয়রা এই পানি ঘড়ি আবিষ্কার করেছিল। পানি ঘড়িতে দুটি পাত্রের ব্যবহার করা হতো। একটি পাত্রের নিচে একটি ছোট ফুটো করে দেওয়া হতো। সেই পাত্রের পানি একটু একটু করে সেই ফুটো দিয়ে পাশে রাখা অন্য পাত্রে পড়তো। আর ওই পাত্রে পানির পরিমাণ অনুমান করে সময়ের হিসাব করা হতো। তখনকার সময়ে বেশ কয়েকটি দেশে এই ঘড়ির ব্যবহার শুরু হয়েছিলো। তবে এই ঘড়ির কিছু অসুবিধা থাকার কারনে জাহাজে ব্যবহার করা যেত না। এছাড়া শীতপ্রধান দেশগুলোতে এ ঘড়ির পানি জমে বরফ হয়ে যেত, যার কারনে ঘড়ি বন্ধ হয়ে যেত। ফলে মানুষ তখন এই জলঘড়ির বিকল্প খোঁজা শুরু করে দিল। তারই পরিপেক্ষিতে আবিষ্কৃত হয় বালি ঘড়ি।
বালুঘড়িঃ
এই বালু ঘড়ি ছিল কিছুটা পানি ঘড়ির মতই। বালু ঘড়িতে একটা ফানেল ব্যবহার করা হত, যার মাঝ বরাবর থাকত চ্যাপ্টা আর নিচের অংশে থাকত স্কেলের মত দাগ কাটা। ফানেলের উপরের অংশে মিহি ও দানাদার বালু ঢালা হতো। সেই বালু মাঝের চ্যাপ্টা অংশ দিয়ে নিচে পরে জমা হত আর সেই স্কেলের মত দাগ হিসেব করে সময় জানা যেত।
মধ্যযুগে ইউরোপে এই ঘড়ি প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হতো। সামান্য নড়াচড়ায় কোন সমস্যা হয় না বলে এই ঘড়ি জাহাজেও সহজে ব্যবহার করা যেত। সূর্যঘড়ি বা জলঘড়ির মতো এত অসুবিধা না থাকায় তখন এ ঘড়ি অনেক জনপ্রিয়তা পায়।
মোমঘড়িঃ
রপর নবম শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে আলফ্রেড দ্যা গ্রেট মোমঘড়ি আবিষ্কার করেছিল। তিনি একটি লম্বা মোমবাতি নিয়ে তাতে সমান মাপে কিছু দাগ কেটে দিত। এরপর মোমবাতিটা কে জ্বালিয়ে দেওয়া হত। আর মোমবাতি জ্বলতে জ্বলতে কমতে থাকতো। তখন মোমবাতির উপর দেওয়া চিহ্নগুলো দেখে সময়ের অনুমান করা যেত।
হাত ঘড়ি
হাত ঘড়ি একটি ক্ষুদ্র ঘড়ি, যা একটি ফিতার সাহায্যে কোনো ব্যক্তির কব্জিতে যুক্ত করা হয়। নিরীক্ষণ করা সময় এবং দিন, তারিখ, মাস ও বছর কখনও কখনও প্রদর্শন করে। ১৫২৪ সালে পিটার হেনেলিন প্রথম পকেট ঘড়ি তৈরি করেছিলেন। ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের আগে অধিকাংশ ঘড়িই ছিল পকেট ঘড়ি, যা শিকলের মাধ্যমে পকেটের সঙ্গে আটকে রাখা হতো। ১৯৭০ সালের আগে সব ঘড়িতে একটি ঘূর্ণায়মান ঘণ্টার কাঁটা এবং একটি দীর্ঘতর মিনিট কাঁটার সঙ্গে একটি নম্বরযুক্ত ডায়াল ছিল। ডিজিটাল ঘড়িতে সময় রাখতে ভেতরে ক্ষুদ্র কম্পিউটার রয়েছে। এতে ডায়লে কাঁটার পরিবর্তে একটি ডিজিটাল ঘড়ি একটি সংখ্যা হিসেবে সময় দেখায় (উদাহরণ ১০ :৩০ এএম)।
দেয়াল ঘড়ি
হাত ঘড়ির চেয়ে আকারে বড় দেয়াল ঘড়ি।দেয়াল ঘড়ি সাধারণত দেয়ালে টানানো থাকে।

যন্ত্রঘড়ি:
যন্ত্র ঘড়ি কে আবিস্কার করেন আজো তা অজানা, তবে অনেকে মনে করেন আর্কিমিডিসের হাতে প্রথম যন্ত্র ঘড়ি জীবন পায়। বলা বাহুল্য যে, ‘গ্রেটটম’ নামে ১২৮৮ সালে একটি ঘড়ি তৈরী হয়েছিল লন্ডনে। ফ্রান্সের রাজা চার্লস ডির জন্য ১৩৬০ সালে একটি ঘড়ি তৈরী হয়েছিল যা আজো সচল। আমেরিকায় প্রথম ফিউজ স্পন্সর তৈরী করেন হাত ঘড়ি।বর্তমানে পারমানবিক ঘড়ি আছে যে ঘড়ি সেকেন্ডের দশ কোটি ভাগের এক ভাগ ও সময় হের ফের করেনা। এ রকম দুটি ঘড়ি আছে ইউ এস এন বি এস ল্যাব্রেটরিতে।এ ঘড়ি এতটাই নিখুঁত যে ৫০০ বিলিয়ন বছরেও এটা এক সেকেন্ড সময় এদিক-সেদিক করবে না।
তারাঘড়ি
সূর্যঘড়ি দ্বারা দিনের সময় জানা গেলেও রাতের সময় বোঝা যেত না। এজন্য জার্মানরা তৈরি করেছিলো তারাঘড়ি। তারাঘড়ি মূলত আকাশের কয়েকটি তারা, যা দেখতে অনেকটা ‘w’ এর মতো। এটা আকাশের উত্তর দিকে ওঠে আর ধীরে ধীরে দক্ষিণ দিকে এগিয়ে যায়। এ তারাগুচ্ছ মেরুকে কেন্দ্র করে ঘড়ির কাঁটার মত ঘুরতে থাকে যা দিয়ে অনায়াসে সময় নির্ধারণ করা সম্ভব। এর নাম ‘ক্যাসিওপিয়া’।
অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ঘড়ি
১১ শতকে চীনের জ্যোতির্বিজ্ঞানী হরলজিস এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার সু সং একত্রে কাজ করে পানি চালিত একটি অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ঘড়ি তৈরী করেন তাদের শহরের কেন্দ্রে স্থাপন করার জন্য। বিশেষজ্ঞরা বলেন, পুরোপুরি যান্ত্রিক পদ্ধতিতে তৈরী প্রথম ঘড়ি হচ্ছে ক্লক। কেউ কেউ মনে করেন গ্রীক পদার্থবিদ আর্কিমিডিস খ্রিস্টপূর্ব ২০০ অব্দে প্রথম ক্লক আবিষ্কার করেন। আর্কিমিডিস চাকাযুক্ত ঘড়ি তৈরী করেছিলেন। সর্বপ্রথম গির্জায় এ ধরণের ঘড়ির প্রচলন হয়। এসব ক্ষেত্রে ভারি কোনো বস্তুকে একটি চাকার সাথে যুক্ত করা হতো। ফলে মহাকর্ষ শক্তির টানে চাকাটি ঘুরতে থাকতো। কিন্তু চাকার এই ঘুর্ণনকে বিশেষ কৌশলে নিয়ন্ত্রন করা হতো যাতে চাকাটি ধীরে ধীরে ঘুরে। এই চাকার সাথে লাগিয়ে দেওয়া হতো সময় নির্দেশক কাঁটা। পরে এ ধরণের ঘড়িতে ডায়ালের প্রচলন শুরু হয়। ১২০৬ সালে মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানী আল-জাহেরি নামাজ ও রোজার সময় সঠিক ভাবে নির্ণয় করার জন্য পানি চালিত অন্য একটি অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ঘড়ি তৈরী করেন যাতে একবার পানি পূর্ণ করে দিলে ঘড়ি অনেক দিন এমনকি এক বছরও চলত।
মেকানিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ঘড়ি
১৪৬২ সালে Prague Astronomical Clock নামে একটি ঘড়ি তৈরী করা হয় যার মধ্যে বিভিন্ন সাইজের গিয়ার বক্স সংযুক্ত করা হয়েছিল। এই ঘড়িতেই সর্বপ্রথম ঘন্টা, মিনিট এবং সেকেন্ডের কাঁটার সূক্ষ্ম ব্যবহার করা হয়। ১৪ শতকের দিকে ম্যাকানিক্যাল ঘড়ি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরে। ১২৮৮ সালে ওয়েস্ট মিনিস্টার হলে এবং ১২৯২ সালে ক্যান্টাবেরি ক্যাথিড্রালে এই ধরণের ঘড়ি বসানো হয়। মধ্যেযুগে ক্লকের প্রচলন অনেক বেড়ে যায়। তবে এদের কোনটাই সঠিক সময় দিত না। ১৩৬৪ সালে ফ্রান্সের রাজা পঞ্চম চার্লস একটি ঘড়ি নির্মাণ করার পরিকল্পনা করেন। ১৫ বছর পর এ ঘড়ি নির্মাণ শেষ হয়। এটাই ছিল সে যুগের সবচেয়ে আধুনিক ঘড়ি।
দোলক ঘড়ি
নিখুঁত সময় নির্ণয়ের জন্য এরপর মানুষ ঘড়ি তৈরীতে স্প্রিংয়ের ব্যবহার শুরু করে। ফলে ঘড়িগুলোর আকার অনেক কমে আসে। ষোল শতকে ইউরোপে নবযুগের সূচনা হয়। এ সময় ঘড়ির অনেক উন্নয়ন সাধিত হয়। এরপর বিখ্যাত বিজ্ঞানী গ্যালিলিও প্রথম দোলকের ধর্ম সম্পর্কিত সূত্র আবিষ্কার করেন। যা পরবর্তীতে ঘড়িতে ব্যবহৃত হয়। ফলে আমরা পাই দোলকযুক্ত ঘড়ি। পরে আঠারো শতকে ঘড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে আরো অনেক উন্নয়ন ঘটে। এই ঘড়ির আবিষ্কারক বিজ্ঞানী গ্যালিলিও। তিনি দোলকের দোলনকালকে কাজে লাগিয়ে সর্বপ্রথম দোলক ঘড়ির থিওরি দাড় করেছিলেন। তাঁর থিওরিকে কাজে লাগিয়ে ডাচ বিজ্ঞানী সি. হাইজেনস সর্বপ্রথম দোলক ঘড়ি তৈরী করেন।১৬৭৩ সালে ওলন্দাজ বিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ান হাইগেন্স একটি ঘড়ি তৈরী করেন যেটি দোলক ঘড়ির একটি সংস্করণ ছিলো। দোলক ঘড়ি বৃত্তীয় বক্রপথে দোলে। এজন্য এই ঘড়ির দোলন-কম্পাঙ্ক তার দোলন-বিস্তারের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে। যত বেশী বিস্তারে দুলতে দেওয়া হয়, কেন্দ্রে ফেরত আসতে ববের তত বেশী সময় লাগে। ববটি যদি একটি সাইক্লয়েডীয় বক্রপথে দুলতো, তাহলে আর এই সমস্যাটি থাকতো না। কারণ সাইক্লয়েডের বৈশিষ্ট্য হলো, এর উপরকার যে কোন দুটি বিন্দু হতে মহকর্ষের প্রভাবে কেন্দ্রে গড়িয়ে আসতে কোন বস্তুর একই পরিমাণ সময় লাগে। ক্রিশ্চিয়ান হাইগেনস সমুদ্র-সমতলে নিখুঁতভাবে দ্রাঘিমাংশ পরিমাপ করার প্রয়োজনে এমন একটি দোলক ঘড়ি তৈরী করেন যার ববটি একটি সাইক্লয়েডীও বক্রপথে দোলে। তাঁর নামানুসারে এই ঘড়ির নাম দেওয়া হয় হাইগেনের ঘড়ি। তিনি ববটিকে সূক্ষ্ম সুতার সাহায্যে ঝুলিয়ে দেন এবং দোলন নিয়ন্ত্রণের জন্য সুতাকে কেন্দ্রে রেখে দুই পাশে দুইটি সাইক্লয়েড আকৃতির দন্ড সংযোজন করেন। ফলে দোলেনের সময় যেকোন পাশে ববটি যখন কেন্দ্র থেকে দূরে সরতে থাকে এবং সুতাটি একটু একটু করে সাইক্লয়েড আকৃতির দন্ডের সংস্পর্শে আসতে থাকে, যার দরুন ববের অনুসৃত গতিপথটি হয় সাইক্লয়েডীয়।
১৮১৪ সালে স্যার ফ্রান্সিস রোনাল্ড লন্ডনে সর্বপ্রথম ব্যাটারী চালিত ঘড়ির প্যাটার্ন তৈরি করেন। ১৮৪১ সালে আলেকজেন্ডার বেইন এবং জন বারউইচ সর্বপ্রথম ব্যাটারী চালিত দোলক ঘড়ি প্রস্তুত করেন।
ডিজিটাল ঘড়ি
ডিজিটাল ব্যাটারী চালিত ঘড়ির আগমনে কাঁটা ঘড়ির অস্তিত্ব প্রায় বিলুপ্ত হতে চললো। এ ঘড়ির সাহায্যে সরাসরি সংখ্যায় সময় জেনে নেওয়া যায়। এতে প্রতি ৬০ সেকেন্ড পর পর মিনিটের সংখ্যা পরিবর্তিত হয় এবং ৬০ মিনিট পর পর ঘন্টার সংখ্যা পরিবর্তন হয়। ডিজিটাল ঘড়ির সাহায্যে অতি সূক্ষ্ম সময়ও জানা যায়। ঘড়ির বহু পরিবর্তনের পর ১৮৮৩ সালে জোসেফ পালয়েবার সর্বপ্রথম পকেটে বহনযোগ্য ডিজিটাল ঘড়ি তৈরি করেন। এরপর ১৯৭০ সালে LED ডিসপ্লে যুক্ত প্রথম হাতঘড়ির প্রচলন হয়।
এটমিক ঘড়ি
এটমিক ঘড়ি হলো সবচেয়ে সঠিক এবং সুক্ষ্মভাবে সময় নির্ণয় করার যন্ত্র। এই ঘড়ির সাহায্যে এক সেকেন্ডের কয়েক লক্ষ ভাগের এক ভাগ মাপা সম্ভব। ১৮৭৯ সালে লর্ড কেলভিন সর্বপ্রথম এটমিক ঘড়ি ব্যবহারের প্রস্তাব দেন। ১৯৪৯ সালে এটমের কম্পন মাপার যন্ত্র আবিষ্কার হয় আমেরিকায়। তখন থেকেই বিজ্ঞানীরা ঘড়ি তৈরি করার জন্য বিভিন্ন অ্যাটম নিয়ে কাজ করতে থাকে।১৯৫৫ সালে সিজিয়াম ১৩৩ পরমাণুর কম্পনের সাহায্যে প্রথম ঘড়ি তৈরি করা হয়। এটমিক ঘড়ির ক্ষেত্রে সেকেন্ডের সংজ্ঞা হল শূন্য কেলভিন তাপমাত্রায় একটি অনুত্তেজিত সিজিয়াম ১৩৩ পরমাণুর ৯,১৯২,৬৩১,৭৭০ টি স্পন্দন সম্পন্ন করতে যে সময় লাগে তাকে ১ সেকেন্ড বলে। বর্তমানে হাইড্রোজেন এবং রুবিডিয়াম পরমাণু নিয়েও কাজ করা হচ্ছে আরও সূক্ষ্মভাবে সময় মাপার জন্য।
স্মার্টওয়াচ
হাতঘড়ির সর্বাধুনিক রূপ হচ্ছে স্মার্টয়াচ। আগেকার সাধারণ ডিজিটাল হাতঘড়িতে ক্যালেন্ডার, ক্যালকুলেটর প্রভৃতি থাকলেও সর্বপ্রথম স্মার্টওয়াচ চালু হয় ২০১০ সালে। এই স্মার্ট ওয়াচগুলোতে বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ চালানো যেত। বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন স্মার্টওয়াচে অডিও-ভিডিও প্লেয়ার, ক্যামেরা, এফ এম রেডিও, ব্লুটুথ, জিপিএস, ইন্টারনেট, অয়াইফাই সব ধরনের প্রযুক্তিই যুক্ত করা হয়েছে। একটি স্মার্টফোন দিয়ে যা যা করা যায় তার প্রায় সবই এখন করা যাচ্ছে স্মার্টওয়াচ দিয়ে। এছাড়া স্মার্টওয়াচ খুব সহজেই স্মার্টফোনের সাথে ব্লুটুথ কিংবা ওয়াইফাই দিয়ে যুক্ত করে স্মার্টফোনের কল কিংবা মেসেজ রিসিভ করা যায়। হাঁটার সময় স্টেপ কাউন্ট, হার্টবিট নির্ণয়, ঘুমের হিসাব রাখা ইত্যাদি কাজও আজকাল করা যাচ্ছে স্মার্টওয়াচের মাধ্যমে। প্রায় সব স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আজকাল স্মার্টওয়াচ নির্মাণে মনোযোগ দিয়েছে। ফলে আশা করা যাচ্ছে সামনের দিনগুলোতে আরও উন্নতি ঘটবে স্মার্টওয়াচের।
তবে একটি কথা, যতো উন্নত প্রযুক্তিই আসুক না কেনো মানুষের পক্ষে কখনো সময়কে ধরে রাখা সম্ভব নয়। সময় তার আপন গতিতেই বয়ে যেতে থাকবে।
আধুনিক ঘড়ি আবিষ্কার নিয়ে রয়েছে অনেক তর্ক বিতর্ক। একটা বিষয় আপনাদের আবারো মনে করিয়ে দেই, আধুনিক ঘড়ির আবিষ্কার একবারেই সম্ভব হয়নি। প্রথম আধুনিক ঘড়িতে শুধু ঘন্টার কাঁটা ছিল। এরপর মিনিটের কাটা এল। আর তারপর সেকেন্ডের কাঁটা। এই কারণে আধুনিক ঘড়ি আবিষ্কারের ইতিহাস হাজারো তর্ক বিতর্কে ভরা।
অনেকেই মনে করেন, প্রাচীন গ্রীকের পদার্থবিদ আর্কিমিডিস প্রথম যান্ত্রিক ঘড়ি বা আধুনিক ঘড়ি আবিষ্কার করেন কিন্তু বিগত দিনের ইতিহাস আর মিডিয়া রিপোর্টের অনুসারে ৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ সিলভেস্টার আধুনিক ঘড়ি বা যন্ত্র ঘড়ি আবিষ্কার করেন। যন্ত্র ঘড়িতে অনেকগুলো চাকা লাগানো থাকত। এই ঘড়িতে শুধু ঘন্টার কাটা ব্যবহার করা হতো যা নির্দিষ্ট সময় পরপর বেজে উঠত। কিন্তু এই ঘড়িতে মিনিট বা সেকেন্ডের কাটা ছিল না।
অনেকর মতে ১৩০০ সালে হেনরি দেবিকা গোল ডায়ালের ঘড়ি আবিষ্কার করেন। কিন্তু এই ঘড়িতেও মিনিট ও সেকেন্ডের কাঁটা ছিল না। এই ঘড়িটি সংশোধন করে আজকের আধুনিক ঘড়িতে রুপ দেয়া হয়েছে। ১৬০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ঘড়ির আকার অনেক বড় বড় হতো। তখন ঘড়ি শুধুমাত্র বাজার বা বড় কোন বিল্ডিং এ লাগানো হতো। এই কারণে তখনকার দিনে ঘড়ি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া যেত না।
ঘড়ির সময় সঠিক সময় দেখানোর জন্য অনেক প্রযুক্তি বের হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন প্রযুক্তিই নেই যা সময়কে একেবারেই সঠিকভাবে দেখাবে। ঘড়িতে নুন্যতম কোন ভুল হবেনা। সাধারণত এনালগ ঘড়ির যন্ত্রাংশগুলি অনেক ধরনের ধাতু দিয়ে তৈরি করা হয়। তাই সেগুলি তাপমাত্রার সাথে সাথে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে। গ্রীষ্মকালে কিংবা শীতকালে ঘড়িতে ভুল সময় দেখাতে পারে। আবার ডিজিটাল ঘড়ি যেগুলি ইলেকট্রনিক্স সার্কিটের মাধ্যমে চলে তাও সার্কিটের সীমাবদ্ধতার কারণে সময়ের তালে তালে সময় ভুল দেখাতে পারে।
ঘড়ির সময় ভুল হলে তা সঠিক করে নেবার জন্য একটি প্রচলিত পদ্ধতি হল রেডিও সিগনাল গ্রহণ করে ঘড়ি সময় নিজে নিজেই ঠিক করে নেয়। অনেক দেশই এই সঠিক সময় বিভিন্ন জায়গা তেকে রেডিও সিগনালে গ্রহণ করে নেয়। আমাদের বাপদাদা-দের দেখেছেন হয়তো সংবাদের সময় তাদের ঘড়ির সময় সঠিক করে নিতেন।
যদিও ঘড়ির এই ভুলগুলি খুব খুবই সামান্য যা আমরা সাধারণত খেয়াল করিনা। এক সেকেন্ডের কয়েক হাজার ভাগের এক ভাগ! তা বলুন কেই বা খেয়াল করবে? কিন্তু আমরা খেয়াল না করলেও বিজ্ঞানীরা কিন্তু থেমে নেই। তারা এখনও চেষ্টা করছে কিভাবে এমন ঘড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে যার সময় কখনই ভুল হবেনা। কিছুদিন আগে নতুন একটি আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের সাড়া দিয়েছে। এমন একটি নতুন ক্রিস্টাল আবিষ্কৃত হয়েছে যা সময় সঠিক ভাবে পরিমাপ করবে। আমেরিকার লরেন্স বার্কলে গবেষণাগারের প্রোফেসর জিয়াং জাং (Xiang Zhang) ও তার টিম এমন একটি ক্রিস্টাল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন যা সময়কে সঠিকভাবে মাপতে পারবে। এই ধরনের ক্রিস্টালকে স্থান-সময় ক্রিস্টাল (space-time crystal) বলে। তবে এই ধরনের ক্রিস্টালের সম্ভাবনার কথা নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী এমআইটি’র বৈজ্ঞানিক ফ্রাঙ্ক উইলজেক (Frank Wilczek) এই বছরের শুরুর দিকে বলেছিলেন। কিন্তু তখনও তিনি বলতে পারেননি কিভাবেই এমন ক্রিস্টাল তৈরি করা যেতে পারে। তার কল্পনার ক্রিস্টালটি তৈরি করতে সমর্থ হলেন প্রোফেসর জিয়াং এর গ্রুপ। ,অনেক ঐতিহাসিকদের মতে,
১৫৮৪ সালে সুইজারল্যান্ডের জোস্ট বার্গি ঘড়ির মিনিটের কাটা আবিষ্কার করেন। তিনি তার একজন বন্ধুর বাড়ির ঘড়িতে মিনিটের কাটা লাগিয়েছিলেন। আর এরপর থেকেই ঘড়িতে মিনিটের কাঁটার ব্যবহার শুরু হয়। সে সময় ঘড়ি ওজনে অনেক ভারি হত। আর তাই সময়ের সাথে সাথে ঘড়িকে হালকা আর ছোট করার প্রচেষ্টা শুরু হয়।
বর্তমানে বেশ কিছু দেশে পিটার হেনলেইনকে ঘড়ির আবিষ্কারক হিসেবে মানা হয়। পিটার হেনলেইন এমন একটি ঘড়ি বানিয়ে ফেলেছিলেন যা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল। এর আগের কোন ঘড়িই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেয়া যেত না। তিনি খুবই দামি ঘড়ি বানাতেন। যা শুধু মাত্র তখনকার দিনের ধনী ব্যক্তিদেরই ব্যবহার করার সামর্থ্য ছিল। তখন ঘড়ি আবিষ্কারের জন্য খুবই আদর্শ সময় ছিল।
1675 সালে স্পাইরাল স্প্রিং এর সাহায্যে সময় মাপার সিস্টেম আবিস্কৃত হলো। ঘড়ি তখন ঘন্টার সাথে সাথে মিনিটের হিসাব দিতে শুরু করে। ঘড়ি তখন ছোট হওয়ার সাথে সাথে ফ্যাশনের উপকরনে পরিনত হতে শুরু করে।আর এর ব্যবহার তখন শুরু হয়েছিল যখন ইংল্যান্ডের রাজা চার্লস তার সোনার চেইনের সাথে ঘড়ির ডায়েল আটকে তা নিজের পকেটে রাখতে শুরু করেছিল।যান্ত্রিক ঘড়ি কে আবিষ্কার করেছিলঃ ১৭২৫ খ্রিস্টাব্দে যান্ত্রিক ঘড়ি লিয়াং সান এবং আই সিং আবিষ্কার করেছিলেন।
বর্তমানে আমরা যে ঘড়ি হাতে ব্যবহার করি তা প্রথমবার ফ্রান্সের দার্শনিক ব্লেসি প্যাসকেল আবিষ্কার করেছিলেন। এনাকে ক্যালকুলেটর এর আবিষ্কারক হিসেবেও মনে করা হয়। প্রায় 1650 সালের আশেপাশে মানুষ ঘড়ি পকেটে রেখেই ঘুরতো। কিন্তু ব্লেসি পেস্কেল প্রথমবার একটি ঘড়ির ডায়াল কে দড়ির সাথে বেঁধে হাতে ঝুলিয়ে দেয়। যাতে তিনি কাজ করতে করতে সময় দেখতে পান । এভাবে সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের ঘড়ি আবিষ্কার শুরু হয়। তাই বিক্রেতারা ঘড়ির আলাদা আলাদা ডিজাইন বানাতে শুরু করে।
পুরনো দিনের ঘড়ি অনেক দামি হত। তাই সবাই ঘড়ি কিনতে পারতো না । এই কারণে 18 শতকের দিকে রাজারা বড় বড় ঘড়ি তাদের দুর্গের সামনে বানিয়ে রাখতা। যাতে গ্রামবাসীরা সবাই দেখতে পায়। এছাড়া তারা অনেক বড় বড় ক্লক টাওয়ার বানাত। যাতে গ্রামবাসীরা অনেক দূর দূর থেকেও সময় দেখতে পায।
মানবজীবনের দেয়াল ঘড়ির গুরুত্ব:
দেয়াল ঘড়ি বা অন্য যেকোনো ঘড়ি মানব জীবনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই ঘড়ি থেকে আমরা সময় দেখতে পাই। এবং সে সময়টা আমরা জানতে পারি। আর এই সময় মানব জীবনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস।
কারণ আমরা যদি সময় না জানতে পারতাম। যেমন এখন দুপুর কয়টা বাজে সকাল কয়টা বাজে। এইরকমই এই সময়টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ হচ্ছে যেমন একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝাইলাম----- যে আপনার প্রতিদিন কাজে যাওয়ার সময় হলো সকাল 9:00। এরকম আপনি যখন আপনার কাছে যাবেন তখন আপনি কিভাবে বুঝবেন যে আপনি সকাল 9 টায় পৌঁছেছেন। যদি আপনি এটা বুঝতে না পারেন যে আপনি কখন পৌঁছেছেন তাহলে আপনার কাজের ক্ষতি হতে পারে।
দেয়াল ঘড়ির গঠন:------
সাধারণত দেয়ালঘড়ি দুই প্রকার হয়ে থাকে বা দুই ধরনের হয়ে থাকে। দুই ধরনের ঘড়ি দেয়ালে টাঙানো থাকে। এ দুটির মধ্যে পার্থক্য গুলো হলো---- সাধারণত সময়সূচি 2 প্রকার। একটি হচ্ছে 24 ঘন্টা সময়সূচী ও অন্যটি হচ্ছে 12 ঘণ্টার সময় সূচি। আর ঘড়িতে ঘন্টা থাকে 1 থেকে 12 পর্যন্ত। সাধারণত ঘড়ির তিনটি কাটা থাকে। একটি ঘণ্টা একটি মিনিটের ও একটি সেকেন্ডের। 60 সেকেন্ড = এক মিনিট এবং 60 মিনিট = 1 ঘন্টা। এ দুটো ঘড়ির মধ্যে একটি হচ্ছে কাঁটাযুক্ত ঘড়ি। আর অন্যটি হচ্ছে কাটা ছাড়া ঘড়ি। কাটা ছাড়া ঘড়িটিতে সংখ্যার মাধ্যমে লেখা থাকে যে কত টাইম হলো।
১৮৮৩ সালে জোসেফ পালওয়েবার সর্বপ্রথম ডিজিটাল ঘড়ি আবিস্কার করে। এরপর ১৯৭০ সালে LED ডিসপ্লে যুক্ত হাতঘড়ির প্রচলন শুরু হয়। আর হাতঘড়ির সর্বাধুনিক রুপ হচ্ছে আজকের স্মার্টওয়াচ। সর্বপ্রথম স্মার্টওয়াচ চালু হয় ২০১০ সালে। বর্তমানে একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল দিয়ে যা যা করা হয়ে থাকে তার সব কিছুই এখন একটি স্মার্টওয়াচ দ্বারা করা সম্ভব। আর এ সবই প্রযুক্তির আশির্বাদে সম্ভব হয়েছে।
তথ্যসুত্র
ঘড়ির গুরুত্ব, Techtime1.
ঘড়ি কীভাবে কাজ করে, Kishoralo.
হাতঘড়ির সর্বাধুনিক রূপ হচ্ছে স্মার্টয়াচ।, Karukormo.
সময়ের জন্ম ঠিক কবে, Dmpnews.
ঘড়ি আবিষ্কারের ইতিহাস, BD Express Media.
ঘড়ি কে আবিষ্কার করেন, Bangla Tech.
ডিজিটাল ঘড়ি, Samakal.