বাংলাদেশে শীতের অতিথি পাখি (Winter Guest Bird in Bangladesh)

বাংলাদেশে শীতের অতিথি পাখি (Winter Guest Bird in Bangladesh)

শীত এলেই রং-বেরঙের নাম না জানা অনেক রকম পাখিতে ভরে যায় আমাদের জলাশয়, হাওড়, বিল ও পুকুর। আদর করে আমরা সেগুলোকে বলি ‘অতিথি পাখি’। বিচিত্র তাদের বাচ্চা পালন, বাসা তৈরির কৌশল। ঝড়, বৃষ্টি, তুষারপাতসহ প্রকৃতির প্রতিকূলতা থেকে বাঁচতে তারা পাড়ি জমায় হাজার হাজার মাইল দূরে। পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি পাখি আসে বাংলাদেশে।

ইংল্যান্ডের নর্থ হ্যামশায়ার, সাইবেরিয়া কিংবা এন্টার্টিকার তীব্র শীত থেকে বাঁচতে দক্ষিণের কম শীতের দেশে যায় পাখিরা। প্রকৃতিগতভাবেই এই পাখিদের শারীরিক গঠন খুব মজবুত। এরা সাধারণত ৬০০ থেকে ১৩০০ মিটার উঁচু দিয়ে উড়তে পারে। ছোট পাখিদের ঘণ্টায় গতি ৩০ কিলোমিটার। দিনে-রাতে এরা প্রায় ২৫০ কিলোমিটার উড়তে পারে। বড় পাখিরা ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার অনায়াসে ওড়ে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এসব পাখি তাদের গন্তব্যস্থান ঠিকভাবেই নির্ণয় করে।

শীতকালেই দেশে অতিথি পাখি কোনো আসে

শীত সহ্য করতে না পেরে যেখানে শীত অপেক্ষাকৃত কম সেখানে চলে যায়। তাছাড়া এ সময় শীতপ্রধান এলাকায় খাবারেরও প্রচুর অভাব থাকে। শীতপ্রধান এলাকায় তাপমাত্রা থাকে অধিকাংশ সময় শূন্যেরও বেশ নিচে। সেইসঙ্গে রয়েছে তুষারপাত। তাই কোনো গাছপালা জন্মাতেও পারে না। শীত এলেই উত্তর  মেরু, সাইবেরিয়া, ইউরোপ, এশিয়ার কিছু অঞ্চল, হিমালয়ের আশপাশের কিছু অঞ্চল থেকে পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে থাকে কম ঠান্ডা অঞ্চলে। বসন্ত মানে মার্চ-এপ্রিলে শীতপ্রধান অঞ্চলে বরফ গলতে শুরু করে, গাছপালা জন্মায় কিছু কিছু। ঘুম ভাঙতে শুরু করে পুরো শীতকালে ঘুমিয়ে থাকা অনেক প্রাণীর। ঠিক এ রকম সময়ে অতিথি পাখিরা নিজ বাড়িতে ফিরে যায় দলবলসহ। আবার এখানে বেশ মজার একটা ব্যাপার আছে। তারা ফিরে গিয়ে ঠিক তাদের বাড়ি চিনে নেয়।

যেসব পাখি আসে অতিথি হয়ে 

শীতকালে এদেশে আসা পাখিদের মধ্যে রয়েছে- সোনাজঙ্গ, খুরুলে, কুনচুষী, বাতারণ, শাবাজ, জলপিপি, ল্যাঞ্জা, হরিয়াল, দুর্গা, টুনটুনি, রাজশকুন, লালবন মোরগ, তিলে ময়না, রামঘুঘু, জঙ্গী বটের, ধূসর বটের, হলদে খঞ্চনা, কুলাউ ইত্যাদি।

এছাড়া গ্রীষ্মকালে সুমেরুতে বাস করে এবং বাচ্চা দেয় হাঁস জাতীয় এমন পাখি শীতকালে বাংলাদেশে আসে। লাল বুকের ক্লাইক্যাসার পাখি আসে ইউরোপ থেকে। আর অন্য সব পাখিরা আসে পূর্ব সাইবেরিয়া থেকে। এসব পাখিদের মধ্যে বাংলাদেশের অতি পরিচিতি অতিথি পাখি নর্দান পিনটেইল। এছাড়া স্বচ্ছ পানির খয়রা চকাচকি, কার্লিউ, বুনো হাঁস, ছোট সারস পাখি, বড় সারস পাখি, হেরন, নিশাচর হেরন, ডুবুরি পাখি, কাদাখোঁচা, গায়ক রেন পাখি, রাজসরালি, পাতিকুট, গ্যাডওয়াল, পিনটেইল, নরদাম সুবেলার, কমন পোচার্ড, বিলুপ্ত প্রায় প্যালাস ফিস ঈগল (বুলুয়া) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

এছাড়াও নানা রং আর কণ্ঠ বৈচিত্র্যের পাখিদের মধ্যে রয়েছে ধূসর ও গোলাপি রাজহাঁস, বালি হাঁস, লেঞ্জা, চিতি, সরালি, পাতিহাঁস, বুটিহাঁস, বৈকাল, নীলশীর পিয়াং, চীনা, পান্তামুখি, রাঙামুড়ি, কালোহাঁস, রাজহাঁস, পেড়িভুতি, চখাচখি, গিরিয়া, খঞ্জনা, পাতারি, জলপিপি, পানি মুরগি, নর্থ গিরিয়া, পাতিবাটান, কমনচিল, কটনচিল প্রভৃতি।

Taken From Cipimwb.

যেসব এলাকায় আসে পাখি

অতিথি পাখির কলরব আর গুঞ্জনে দেশের অন্যতম উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রতিবছর মুখরিত হয়। প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন লেকসহ এখানকার বিভিন্ন লেকে প্রায় ২০-২৫ প্রজাতির পাখি আসে।জাবি ক্যাম্পাস ছাড়া মিরপুর চিড়িয়াখানার লেক, বরিশালের দুর্গাসাগর, নীলফামারীর নীল সাগর, সিরাজগঞ্জের হুরা, আর সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর এসব অতিথি পাখিদের প্রিয় অবকাশ কেন্দ্র।বাংলাদেশের জলাশয়গুলোই এদের পছন্দের স্থান ও নিরাপদ আশ্রয়। বেশ কয়েক বছর যাবত নিঝুম দ্বীপ দুবলার, চরকুতুবদিয়া এলাকাতেও শীতের পাখিরা বসতি গড়েছে।

কোথায় গেলে দেখা মিলবে শীতের অতিথি পাখির

সিলেটের হাওড় এলাকায়হাওড়, নদী ও পাহাড়ের সমৃদ্ধ সিলেটে অতিথি পাখিগুলো খুঁজে পায় পরম আশ্রয়। সিলেট বিভাগজুড়ে বিস্তৃত হাকালুকি হাওড়, মৌলভীবাজারের বাইক্কা বিল, হাইল হাওড় ও পাত্রখোলা লেক, সুনামগঞ্চের টাঙ্গুয়ার হাওড় ও রোয়া বিল-এ প্রতি বছরই মুখরিত হয়ে উঠে অতিথি পাখির কলকাকলিতে।

চট্টগ্রামের দ্বীপাঞ্চলবন্দর শহর চট্টগ্রামের সন্দীপ, উড়ির চর ও চরণদ্বীপ অতিথিদের পাখি দেখার জনপ্রিয় জায়গা। এছাড়া বহুল পরিচিতি পেয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত নোয়াখালী জেলার নিঝুম দ্বীপ, হাতিয়া দ্বীপ, চর ওসমান বা শাহেবানিচর, চর পিয়া, বয়ার চর ও চরভাটা।পর্যটন শহর কক্সবাজারের মহেশখালী ও সোনাদিয়া, টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপ, শাহপরীর দ্বীপ ও হোয়াইক্যং-ও শীতের সময়টাতে ভরে ওঠে রঙ-বেরঙের অতিথি পাখিতে।

বরিশালের চরাঞ্চলবৃহত্তর বরিশালের দুর্গাসাগর, ভোলা জেলার মনপুরা দ্বীপ, চর কুকরি-মুকরি, ডাল চর, সুন্দরবনের দক্ষিণ উপকূল চরমানিক, কালকিনি বা চর নিজাম জায়গাগুলো লোকারণ্যে পরিপূর্ণ হলেও শীতের এ সময়টায় নাম না জানা হরেক রকম অতিথি পাখির দেখা পাওয়া যায়।

পটুয়াখালী জেলার জনপ্রিয় পর্যটন স্থান কুয়াকাটার পাশাপাশি খেপুপাড়া বা কলাপাড়া, চরমন্তাজ, সোনার চর, এমনকি আগুনমুখা নদী, গলাচিপা নদীতেও জলকেলি দেখা যায় অতিথি পাখির।

দেশের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলবাংলাদেশের উত্তরের জেলা নীলফামারীর নীলসাগর, সিরাজগঞ্জের হুরা, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নাটর জুড়ে বিস্তৃত চলন বিল এবং পঞ্চগড়ের ভিতরগড় ও পদ্মার চর-এ প্রতি শীতে দেখা যায় পরিযায়ী পাখিদের ঝাঁক। এছাড়া মধ্যাঞ্চলের নেত্রকোণার কলমকান্দার হাওর, কিশোরগঞ্জের নিকলি হাওর ও কলাদিয়াও বেশ সুপরিচিত অতিথি পাখি দর্শনের জন্য।

Taken From Sharebiz.

অতিথি পাখির জন্যে আইন 

অতিথি পাখির জন্যে সরকারি হিসাব অনুযায়ী ১২টি অভয়ারণ্য থাকার কথা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অভয়ারণ্য বলতে যা বুঝায় তা আজও পরিপূর্ণভাবে গড়ে উঠেনি। ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনের ২৬ ধারা মতে পাখি শিকার ও হত্যা দন্ডনীয় অপরাধ।

এদিকে পোষা পাখি লালন-পালন, খামার স্থাপন, কেনা-বেচা ও আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্স না নিলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।এমন শাস্তির বিধান রেখে ‘পোষা পাখি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা- ২০২০’ চূড়ান্ত করেছে সরকার। গত ১৩ জানুয়ারি বিধিমালাটি জারি করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।

পোষা পাখি ব্যবস্থাপনা বিধিমালায় বলা হয়েছে, লাইসেন্স ছাড়া কোনো খামারি পোষা পাখির উৎপাদন, লালন-পালন, খামার স্থাপন, কেনা-বেচা বা আমদানি-রফতানি করতে পারবেন না বা কোন পেট সপ (পোষা পাখি বিক্রির দোকান) পোষা পাখি ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন না।যারা শখের বসে বাড়িতে বা কোনো প্রতিষ্ঠানে পোষা পাখি লালন-পালন করেন, পাখির সংখ্যা ১০টির বেশি নয়, তাদের শৌখিন পোষা পাখি পালনকারী বলা হয়েছে নীতিমালায়।

বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে লাইসেন্সের মেয়াদ হবে এক বছর। এক বছর পর লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে। লাইসেন্স দেবে প্রধান ওয়ার্ডেন (প্রধান বন সংরক্ষক) বা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোনো কর্মকর্তা।

Taken From Protikhon.

অতিথি পাখি ‘অতিথি’ হয়ে থাকতে পারছে না

দুর্ভাগ্যজনক হল, অতিথি পাখি এদেশে অতিথি হয়ে থাকতে পারছে না; এক শ্রেণীর শিকারীর হাতে তারা শিকার হচ্ছে। পাখিরা মানুষের কাছে একসময় বিস্ময় হিসেবে থাকলেও আজ তা কারও কারও কাছে সৌখিন খাবারে পরিণত হয়েছে। অতিথি পাখি শিকার করা হলে ভবিষ্যতে হয়তো এদের আসা চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। বন্য প্রাণী ও পাখিরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।

আমাদের দেশে প্রতিবছরই বন্যপ্রাণী যেমন কমছে; তেমনি অতিথি পাখির সংখ্যাও কমছে। সাম্প্রতিককালে বেঙ্গল ফোবিক্যান, সারস ও বুঁচাহাস বিলুপ্তির পথে। ফলে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।শীতের প্রকোপ কমে গেলে অতিথি পাখিরা আবার ছুটে চলে নিজ জন্মভূমিতে। বাংলাদেশে অবকাশ যাপনের ইতি ঘটিয়ে আপন ভূমিতে যাওয়ার জন্য আবারও হাজার মাইল পাড়ি দেয় তারা। তবে যে নিরাপত্তার জন্য এ দেশে তারা আসে, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে কিছু অসাধু মানুষ বিভিন্ন সময় তাদের শিকার ও হত্যা করে থাকেন। শিকারিরা হাজার টাকার ফাঁদ ও জাল তৈরি করে প্রস্তুত থাকেন শীতের আগে থেকে। বিভিন্ন উপায়ে তাঁরা শিকার করেন অতিথি পাখিদের, বিভিন্ন চরাঞ্চলে ধানের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে এবং কারেন্ট জাল দিয়ে।

Taken From Shikshabarta.

নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে থাকুক অতিথি পাখি

প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যও পাখিদের বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজন আছে। পাখি হলো প্রকৃতির কীটনাশক। পাখির সংখ্যা কমে গেলে কীটপতঙ্গের অত্যাচারে অসম্ভব হয়ে পড়বে ফসল ফলানো। সেটিই যদি হয়, তাহলে নির্ভর করতেই হবে কীটনাশকের ওপর। কিন্তু এটি তো পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। যে দেশে পাখি বেশি, সে দেখে পর্যটকের সংখ্যাও বেশি। কাজেই পাখি ঘাটতি অবশ্যই উদ্বেগের ব্যাপার।

পাখি নিসর্গকে সুন্দর করে, চোখকে প্রশান্তি দেয়, সৌন্দর্য চেতনাকে আলোড়িত করে। পাখিরা আসুক, ওদের কলকাকলীতে ভরে উঠুক আমাদের চারপাশ। আর আমরা অতিথি পাখিদের শিকার না করে, পাখিদের উৎপাত না করার মাধ্যমে তাদের প্রতি সদয় হয়ে বাড়িয়ে দিই আমাদের মানবিক আচরণ। অতিথি পাখি আমাদের প্রকৃতির বন্ধু, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তারা অতিথির ন্যায় আমাদের দেশে কিছুটা সময় নির্বিঘেœ বেঁচে থাকুক এবং নির্দিষ্ট সময় শেষে মুক্ত ডানা মেলে নিজ দেশে ফিরে যাক।

Taken From Anandabazr.

অতিথি পাখিদের সুরক্ষায় কঠোর হওয়া জরুরি

অতিথি পাখির কারণে শীতে অভ্যন্তরীণ পর্যটন বাড়ে। যার কারণে আমাদের দেশের রাজস্ব আয়ও বাড়ে। দেশে পাখিপ্রেমীদের মনে আনন্দের খোরাকও দিতে পারে এসব অতিথি পাখি।বিশেষ করে হাঁসজাতীয় পাখিরা দেশের খেতের বিষাক্ত পোকা ধ্বংস করে, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে। তাই আমরা এসব অতিথি পাখির কারণে ভীষণভাবে উপকৃত হই। অতিথি পাখি নিধন যদি এ দেশে অব্যাহত থাকে, তাহলে আমরা একসময় এসব সুফল থেকে বঞ্চিত হব। তবে শুধু নিধন নয়, অতিথি পাখিকে বিরক্ত করা থেকে শুরু করে অতিথি পাখির স্বাভাবিক বিচরণে ব্যাঘাত ঘটে এসব কাজ থেকে আমাদের বিরত থাকা একান্ত জরুরি।

Taken From Facebook.

উড়ে আসা অতিথি পাখি, ফিরে যাক হাসিমুখে

হেমন্তের ফসলশূন্য রিক্ত মাঠে কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে আগমন ঘটে শীতকালের। সঙ্গে নিয়ে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি। আকাশের দিকে তাকালে দেখা যায় সেসব পরিযায়ী পাখি। এসব অতিথি পাখির আগমন ঘটে উত্তর মেরু থেকে। পৃথিবীর উত্তর মেরুর দেশ সাইবেরিয়া, ফিলিপস, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ফিনল্যান্ড, এন্টার্কটিকাসহ অনেক অঞ্চলে তাপমাত্রা যখন মাইনাস শূন্য ডিগ্রিতে নেমে আসে, তখন সেগুলোতে দেখা দেয় প্রচণ্ড খাদ্যাভাব। তীব্র শীতে পাখির দেহ থেকে পালক খসে পড়ে।

প্রকৃতি যখন পাখিদের জীবনধারণের জন্য অনুকূলে থাকে না, তখন পাখিগুলো অপেক্ষাকৃত কম শীত ও অনুকূল প্রকৃতির দেশে অতিথি হয়ে আসে। নাতিশীতোষ্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিবছর সাদরে গ্রহণ করে নেয় এসব অতিথি পাখিকে। এ দেশ হয়ে ওঠে তখন অতিথি পাখিদের খাদ্য ও জীবনধারণের নিরাপদ আবাসস্থল

সৃষ্টিগতভাবে পাখিদের শারীরিক গঠন খুবই মজবুত। তাই অতিথি পাখিরা ৬০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ মিটার উঁচু আকাশসীমা পাড়ি দিয়ে উড়ে আসতে পারে। বড় পাখিরা ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার অনায়াসে উড়তে পারে আর ছোট পাখিরা উড়তে পারে ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার। দিনে-রাতে মোট ২৪ ঘণ্টায় তারা প্রায় ২৫০ কিলোমটার পাড়ি দিতে পারে। কিছু পাখি বছরে প্রায় ২২ হাজার মাইল পথ অনায়াসে পাড়ি দিয়ে চলে আসে আমাদের এই বাংলাদেশে।

Taken From Facebook.

অতিথি পাখির অভয়ারণ্য বাংলাদেশ

১৯৮০ সাল থেকে মিরপুর চিড়িয়াখানার লেকে অতিথি পাখির দেখা মিলছে। অতিথি পাখির দেখা মিলছে বাংলাদেশের নীলফামারীর নীলসাগর, নিঝুম দ্বীপ, হাকালুকি হাওর, বরিশালের দুর্গাসাগর, সিরাজগঞ্জের হুরা, টাঙ্গুয়ার হাওর, হাটল হাওর ও সোনাদিয়া ইত্যাদি অঞ্চল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ হতে আসা অতিথি পাখির অবকাশ যাপনের অভয়ারণ্য হয়ে ওঠেছে আমাদের এই বাংলাদেশ।

দেখতে দেখতে শীতপ্রধান দেশগুলোতে ফিরে আসে বসন্ত। গলতে থাকে বরফ। প্রকৃতি ফিরে পেতে থাকে সজীব প্রাণ। অতিথি পাখিদের আবার শুরু হয় ওড়ার পালা। হাজার হাজার মাইল ওড়ে। উড়তে উড়তে ফিরে আসে জন্মভূমিতে। মজার ব্যাপার হলো দিনরাত এত উড়াউড়ির মধ্যেও অতিথি পাখিরা যখন ফিরে আসে নিজ নিজ দেশে তখন ঠিক ঠিক তাদের বাড়িটি চিনে নিতে কখনো ভুল করে না। এ এক অদ্ভুত ব্যাপার!

Taken From Facebook.

শীতের অতিথি পাখির কলকাকলি

পাখি আসুক, ওদের কলকাকলিতে ভরে উঠুক আমাদের চারপাশ। আর আমরা অতিথি পাখি শিকার না করে এবং পাখিকে উৎপাত না করার মাধ্যমে সেগুলোর প্রতি সদয় হই। আমাদের কোনো ধরনের অমানবিক আচরণ যেন এদের মুক্ত জীবনযাপনে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। সর্বোপরি, আমাদের বুঝতে হবে অতিথি পাখি আমাদের প্রকৃতির বন্ধু, শত্রু নয়। তাই এদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আইনের কঠোরতম প্রয়োগ বাস্তবায়ন একান্ত জরুরি।

Taken From Facebook.

পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, এক দশক আগেও এদেশে ২০০ থেকে ২১৫ প্রজাতির অতিথি পাখি আসত। এ সংখ্যা প্রতি বছরই হ্রাস পাচ্ছে। ব্যাপকহারে পাখি শিকার ও জলাভূমির সংখ্যা কমে যাওয়াই তার কারণ। গ্রামের গরিব মানুষ পেটের দায়ে পাখি ধরে ধরে বিক্রি করে। যারা কিনছে তারা শহুরে শিক্ষিত ও ধনী শ্রেণি। রুচির পরিবর্তনের জন্যেই তারা কিনে নেয় অতিথি পাখি। অতিথি পাখি ছাড়াও তাদের রুচির পরিবর্তন করা যায়। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা ও প্রকৃতিপ্রেমই দরকার সবচেয়ে বেশি।


তথ্যসুত্র

শিকার করে অতিথি পাখি।, Rtv Online.

শীতকালে অতিথি পাখিদের কলকাকলী, Protidiner Sangbad.

অতিথি পাখিরা আবার ছুটে যায় নিজ জন্মভূমিতে, Bbarta24.

শীতকালে পাখিরা এলে দেশান্তরী হয়, Daily Naya Diganta.

পৃথিবীতে প্রায় ৫ লাখ প্রজাতির পাখি আছে।, Shomoy News.

উড়ে আসা অতিথি পাখি, Prothom Alo.

পাখিরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, Jugantor.

পাখি তাদের গন্তব্যস্থান ঠিকভাবেই নির্ণয় করে, Ittefaq.

Subscribe for Daily Newsletter