বিশ্ব ক্যানসার দিবস (World Cancer Day)
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বারা প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৮ সালে ৯.৬ মিলিয়ন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে এই রোগে। তাই ক্যান্সার সম্পর্কিত সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার জন্য বিশ্ব জুড়ে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস পালন করা হয় ৪ ফেব্রুয়ারি।দিনটি প্রথম শুরু হয়েছিল ২০০০ সালে। ২০০০ সালে প্যারিসে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে বিশ্ব সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনল ক্যান্সার কন্ট্রোল (ইউআইসিসি) এমন একটি সংস্থা যা প্রাথমিক পর্যায় ক্যান্সার শনাক্ত করতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করে। সংস্থাটি ২০০৮ সালে প্রথম এই দিবস পালন শুরু করে।
বিশ্বে এই দিনটি ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যান্সার কন্ট্রোল নামক একটি বেসরকারি সংস্থার নেতৃত্বে উদযাপন করা হয়, যা পূর্বে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন নামে পরিচিত ছিল। এই সংস্থার সদর দপ্তর জেনেভায় অবস্থিত, যার ১৭০টিরও বেশি দেশে প্রায় দুই হাজার সদস্য রয়েছে।ক্যান্সার বা কর্কটরোগ অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন সংক্রান্ত রোগসমূহের সমষ্টি। এখনও পর্যন্ত এই রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। কারণ প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার রোগ সহজে ধরা পড়ে না, ফলে শেষ পর্যায়ে গিয়ে ভালো কোন চিকিৎসা দেয়াও সম্ভব হয় না। তাই ক্যান্সার নিয়ে আশঙ্কার বদলে সচেতনতা প্রসার বেশি জরুরি।
প্রতি বছর ৪ ফেব্রুয়ারি দিবসটি পালিত হয়। সারা বিশ্বে এই রোগের থাবা রয়েছে। উন্নত-আধুনিক দেশ থেকে পিছিয়ে পড়া কোনও দেশই এর বাইরে নয়। তথ্য বলছে, বিশ্বে মৃত্যুর কারণ হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ক্যান্সার।বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, সচেতনতা (Awareness) এবং সুষ্ঠু জীবনযাত্রা (Lifestyle) এই দুই অস্ত্রেই একটি বড় অংশের ক্ষেত্রে ঠেকিয়ে রাখা যায় এ মারণরোগ। ক্যান্সার এবং তার চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত সবস্তরের লোকজন, রোগী-রোগীর পরিবার, চিকিৎসক, সাপোর্ট গ্রুপ, প্রশাসন- সবাইকে নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই এই দিনটি পালিত হয়। ২০২২, ২০২৩ এবং ২০২৪- এই তিন বছরের জন্য দিবসটির একই থিম রাখা হয়েছে Close The Care Gap অর্থাৎ ‘ক্যান্সার চিকিৎসায় ঘাটতি কমাই।’
এই ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ বলেন, খুসখুসে কাশি হওয়া, গলার স্বর বসে যাওয়া, খাওয়ার সময় খাবার আটকে গিলতে সমস্যা হওয়া, অস্বাভাবিক ভাবে বুক জ্বালাপোড়া করা, শরীরের কোথাও চাকা চাকা অনুভূত হওয়া, অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হওয়া (মেয়েদের নিয়মিত ঋতুস্রাব ছাড়া সব রক্তক্ষরণই অস্বাভাবিক) এমন কিছু লক্ষণ শরীরে দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তাহলে চিকিৎসকই নির্ধারণ করবেন ক্যান্সার আছে কি না।ডা. হাই বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসা একটি ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। আমাদের মতো দরিদ্র দেশের মানুষ ক্যান্সারের চিকিৎসা করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়তে হয়। অনেকে শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করেও ক্যান্সারের চিকিৎসা চালিয়ে যান। এখন প্রয়োজন ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে আনা। তবে ক্যান্সারের ব্যয় কমানোর জন্য সবার আগে প্রয়োজন সমন্বয়। সমন্বিত প্রচেষ্টায় সম্ভব ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে আনা।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার প্রতিটি বিভাগে ক্যান্সার ইনস্টিটিউট করার ঘোষণা দিয়েছেন। এটি সফলভাবে করা গেলে ক্যান্সারের চিকিৎসা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে যাবে সহজে। কিন্তু এ জন্য বেশি প্রয়োজন পড়বে দক্ষ জনবলের। ক্যান্সারের জন্য যেমন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন নার্সেরও।ডা. এম এ হাই বলেন, ক্যান্সার প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতার। তবে এ সচেতনতা শুধু ব্যক্তিগত না থেকে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। তবেই সম্ভব ক্যান্সারের মতো রোগ জয় করা।
দিবসটি উপলক্ষে আজ জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, বাংলাদেশ ক্যান্সার ফাউন্ডেশনসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এরমধ্যে শোভাযাত্রা, ক্যান্সারবিষয়ক পোস্টার ও ফেস্টুন প্রদর্শনী, আলোচনা সভা, ক্যান্সার রোগী ও সারভাইবারদের অংশগ্রহণে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অন্যতম।প্রতি বছর ৪ ফেব্রুয়ারি দিবসটি পালিত হয়। সারা বিশ্বে এই রোগের থাবা রয়েছে। উন্নত-আধুনিক দেশ থেকে পিছিয়ে পড়া কোনো দেশই এর বাইরে নয়।
দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘ক্লোজ দ্য কেয়ার গ্যাপ’ অর্থাৎ ‘ক্যান্সার চিকিৎসায় ঘাটতি কমাই।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, রোগের মধ্যে বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বাধিক মৃত্যুর কারণ ক্যান্সার। প্রতিবছর এতে মারা যায় প্রায় এক কোটি মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, সচেতনতা এবং সুষ্ঠু জীবনযাত্রা দিয়ে একটি বড় অংশের ক্ষেত্রে ঠেকিয়ে রাখা যায় এ মারণরোগ। তাই ক্যান্সার নিয়ে আশঙ্কার বদলে সচেতনতার প্রসার বেশি জরুরি। আর সেই কারণেই, প্রতি বছর ৪ ফেব্রুয়ারি পালিত হয় বিশ্ব ক্যান্সার দিবস।চিকিৎসকরা মনে করেন, নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সার তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে এবং সেক্ষেত্রে চিকিৎসা সহজ হয়। ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে শরীরের বিভিন্ন স্থানে লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
যেসব কারণে ক্যান্সার হয় তার ঝুঁকিগুলোর মধ্যে- ধূমপান, পান-জর্দা-তামাকপাতা খাওয়া, সবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া, শারীরিক ব্যায়াম না করা, শারীরিক স্থূলতা বা বেশি ওজন, আলট্রাভায়োলেট রশ্মি, এক্স-রে রেডিয়েশন, কিছু রাসায়নিক পদার্থ, কিছু ভাইরাস বা অন্যান্য জীবাণু অন্যতম।ক্যান্সার দিবস সারাবিশ্বে ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যান্সার কন্ট্রোল নামক একটি বেসরকারি সংস্থার নেতৃত্বে উদযাপন করা হয়, যা পূর্বে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন নামে পরিচিত ছিল। এই সংস্থার সদর দপ্তর জেনেভায় অবস্থিত, যার ১৭০টিরও বেশি দেশে প্রায় দু’হাজার সদস্য রয়েছে।
দিবসটি উদযাপনের উদ্দেশ্য হলো মারাত্মক ও প্রাণঘাতী এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া এবং এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের সাহায্য করার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করা।সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে ওয়ার্ল্ড ক্যানসার ডে পালন করা হয়। ২০০০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে এই দিনটি পালন করা শুরু হয়েছে। শুরুটা হয় ফ্রান্সের প্যারিসে World Summit Against Cancer-এর মঞ্চ থেকে। ওই দিন সারা বিশ্ব থেকে বিভিন্ন দেশের ক্যানসার সংস্থার কর্তারা সম্মেলনটিতে যোগ দিয়েছিলেন। ক্যানসার প্রতিরোধে প্যারিস সনদও সাক্ষরিত হয় ওই দিন। মোট দশটি ধারার এই সনদে ক্যানসার রোগীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান ও তাদের জীবনযাপন উন্নয়নের অঙ্গীকার নেওয়া হয়।
সারা বিশ্বে ক্যানসার মারণ রোগ হিসেবে পরিচিত হলেও মনের জোর ও সচেতনতায় হারিয়ে দিতে পারে এই রোগকে। তবে সবার আগে সচেতন হতে হবে নিজেকে। শরীরে কিছু পরিবর্তন দেখলেই সতর্ক থাকতে হবে, দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে। তবেই না 'Close The Care Gap'
ক্যানসার কী
মানুষের শরীর অসংখ্য কোষ দ্বারা গঠিত, এবং এই কোষগুলি ক্রমাগত বিভাজিত হতে থাকে। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং এর উপর শরীরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। কিন্তু অনেক সময় যখন শরীরের কোনো নির্দিষ্ট অংশের কোষের ওপর শরীরের নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হয়ে যায় এবং কোষগুলো হিসাবহীনভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে, তখন তাকে ক্যান্সার বলে।ক্যানসারকে মরণব্যাধি বলা হয়। সেটি কতটুকু সত্য, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে সব রোগই মরণব্যাধি যদি না সঠিক সময়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। ক্যানসারের কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আছে। সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে সঠিক সময়ে চিকিৎসা দিলে এই রোগ নিরাময় সম্ভব।
‘শুধু ব্রেইন ক্যানসারের একটি বৈশিষ্ট্য আছে যেটি হলে রোগী দুই বছরের বেশি বাঁচে না। সেটার নাম গ্লিওব্লাস্টোমা। তা ছাড়া অন্য সব সঠিক সময়ে চিকিৎসা দিলে ক্যানসার নিরাময় সম্ভব।’তিনি আরও বলেন, ‘লাইফস্টাইলের সঙ্গে ক্যানসারের সম্পর্ক খুব। যেমন: ধূমপানে ফুসফুস ক্যানসার, কিডনি, শ্বাসনালির ক্যানসার হতে পারে। আবার স্থুলতার জন্য ব্রেস্ট ক্যানসার হয়ে থাকে।‘বাংলাদেশে সে রকম সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান না থাকলেও গ্লোবোক্যান বৈশ্বিক অবস্থা নিয়ে একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। সেই অনুযায়ী ২০২০ সালে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭৭৫ জন রোগী ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। আর ১ লাখ ৮ হাজার ৯৯০ জন মারা যান।‘২০২২ সালের আরেকটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ১০ শতাংশের জন্য দায়ী ক্যানসার। ২০৩০ সালের মধ্যে সেটি ১৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।’
ক্যান্সার কিভাবে শুরু হয়?
মানবদেহে কোষের জিন পরিবর্তন হতে শুরু করলে ক্যান্সার শুরু হয়। এমন নয় যে কোনো বিশেষ কারণে জিনের পরিবর্তন হচ্ছে, এটি নিজেও পরিবর্তন হতে পারে বা অন্য কারণেও হতে পারে, যেমন গুটকা-তামাক, অতিবেগুনি রশ্মি বা বিকিরণ ইত্যাদি নেশা জাতীয় দ্রব্য খেলেও এর জন্য দায়ী হতে পারে। এই জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে ক্যান্সার শরীরের ইমিউন সিস্টেমের কোষগুলিকে ধ্বংস করে, কিন্তু কখনও কখনও ক্যান্সার কোষগুলি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সহ্য করতে সক্ষম হয় না এবং ব্যক্তি ক্যান্সারের মতো একটি দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়। শরীরে ক্যানসারের কোষ বাড়তে থাকায় টিউমার অর্থাৎ এক ধরনের পিণ্ড বের হতে থাকে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করলে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
ক্যান্সার কত প্রকার
চিকিত্সকরা এবং গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে ২০০ টিরও বেশি ধরণের ক্যান্সার রয়েছে এবং সে কারণে তাদের লক্ষণগুলিও আলাদা। তবে যে ক্যান্সারগুলো মানুষকে খুব দ্রুত শিকারে পরিণত করে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-
ব্লাড ক্যান্সার
ব্লাড ক্যান্সার মানুষের মধ্যে দ্রুত বর্ধনশীল ক্যান্সারের একটি। এই ক্যান্সার মানুষের শরীরের রক্ত কণিকায় উৎপন্ন হতে থাকে এবং এর ফলে শরীরে রক্তের অভাব হয় এবং ক্যান্সার খুব দ্রুত শরীরে সংক্রমিত হতে থাকে।
ফুসফুসের ক্যান্সার
ফুসফুসের ক্যান্সারে ব্যক্তির অবস্থা খুবই করুণ হয়ে যায় এবং খারাপ হয়ে যায়। এর প্রধান উপসর্গগুলি হল শ্বাস নিতে অসুবিধা, শ্লেষ্মা জমতে অসুবিধা, হাড় এবং জয়েন্টগুলিতে অবর্ণনীয় ব্যথা এবং ক্ষুধা হ্রাস। শরীরে প্রচন্ড দুর্বলতা অনুভূত হয়। সারাক্ষণ অকারণে ক্লান্ত। ফুসফুসের ক্যান্সার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ধূমপান।
মস্তিষ্কের ক্যান্সার
মস্তিষ্কের ক্যান্সার একজন ব্যক্তির মাথার অংশে বৃদ্ধি পায়। ব্রেন টিউমারও ব্রেন ক্যান্সারের অপর নাম। এই ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর মস্তিষ্কের অংশে একটি টিউমার অর্থাৎ একটি পিণ্ড তৈরি হয় এবং এই পিণ্ডটি সময়ের সাথে সাথে বড় হতে থাকে এবং ধীরে ধীরে পুরো মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে।
স্তন ক্যান্সার
স্তন ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সারও বলা হয় বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তবে পুরুষদের ক্ষেত্রে তা হতে পারে না। এই ক্যান্সারে আক্রান্ত মহিলাদের স্তনে এক ধরনের পিণ্ড তৈরি হতে শুরু করে, যা সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। আপনি যদি এটি প্রতিরোধ করতে চান তবে নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করাতে থাকুন।
ত্বক ক্যান্সার
দেশে স্কিন ক্যানসার অর্থাৎ স্কিন ক্যানসারের ঘটনাও খুব দ্রুত বেড়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, অতিরিক্ত গরম, সঠিক খাবার না খাওয়া এবং শূন্য শারীরিক পরিশ্রম না করার কারণে শরীরে ওইসব ত্বকের ক্যান্সার বেড়ে যায়। ত্বকের ক্যান্সার যে কোন বয়সের ব্যক্তির হতে পারে।
ক্যান্সারের প্রধান লক্ষণগুলো
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারি পালিত হয়েছে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার শুরুর দিকে বা সঙ্গে সঙ্গেই যাতে এই রোগটিকে শনাক্ত করা যায় তার জন্য প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বিশ্বে প্রতিবছর ৮২ লাখ মানুষ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করে। বিশেষ করে প্রায় সাড়ে ১০ কোটি নারী ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। উদ্বেগের খবর হলো দ্বিতীয় এ মরণব্যাধিতে আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের মানুষ। দিবসটি উপলক্ষে এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘আসুন ক্যান্সার সেবায় বৈষম্য দূর করি’। সারা বিশ্বে এই দিনটি ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যান্সার কন্ট্রোল নামক একটি বেসরকারি সংস্থার নেতৃত্বে উদ্যাপন করা হয়, যা পূর্বে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন নামে পরিচিত ছিল। দিবসটি উদ্যাপনের উদ্দেশ্য হলো মারাত্মক ও প্রাণঘাতী এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়া এবং এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের সহযোগিতা ও সাহায্য করার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করা।লক্ষণগুলো হলো-
দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি
যদি দীর্ঘ সময় ধরে ক্লান্তিবোধ করেন অথবা অবসাদে ভোগেন তবে সেটা অনেক রোগেরই কারণ হতে পারে, হতে পারে ক্যান্সারও। মলাশয়ের ক্যান্সার বা রক্তে ক্যান্সার হলে সাধারণত এমন উপসর্গ দেখা যায়।তাই, আপনি যদি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি ক্লান্তিবোধ করেন অথবা দীর্ঘসময় ধরে ক্লান্ত থাকেন, অবিলম্বে চিকিৎসাসেবা নিন।
আকস্মিক বা হঠাৎ ওজন হ্রাস
কোনো কারণ ছাড়া হঠাৎ করেই দ্রুতগতিতে যদি ওজন হারাতে থাকেন, তবে ভাবনার কারণ আছে। অনেক ক্যান্সারই সাধারণত হুট করে ওজন কমিয়ে ফেলে। তাই শরীরের ওজনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে সবসময়।
দীর্ঘদিনের ব্যথা বা ক্রনিক পেইন
দৃশ্যত কোনো কারণ (যেমন জখম-আঘাত) ছাড়া যদি আপনি দীর্ঘদিন ধরে শরীরের কোনো স্থানে ব্যথায় ভোগেন, তবে তাতে ওষুধও কাজ না করলে এ নিয়ে ভাবনার কারণ আছে। শরীরের কোন জায়গায় ব্যথা করছে তার ওপর নির্ভর করছে রোগী ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত নাকি ডিম্বাশয়, পায়ুপথ বা মলাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত।
অস্বাভাবিক মাংসপিণ্ড বা ধলা
আপনি যদি শরীরের কোনো অংশে অস্বাভাবিক কোনো মাংসপিণ্ড দেখতে পান অথবা মাংস জমাট হতে দেখেন কিংবা এ ধরনের পরিবর্তন বুঝতে পারেন, তবে এটা তেমন কিছুরই লক্ষণ, যা আপনার কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত। এমন কি আপনার শরীরে কোনো পরিবর্তন স্বাভাবিক মনে হলেও পর্যবেক্ষণ করুন, এরপর অন্তত চিকিৎসককে জানান।
ঘন ঘন জ্বর
ক্যান্সার শরীরে জেঁকে বসলে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। এতে ঘন ঘন জ্বর দেখা দেয়। দুর্ভাবনার ব্যাপার হলো, কিছু ক্যান্সারের শেষ পর্যায়েরই উপসর্গ ঘন ঘন জ্বর। তবে ব্ল্যাড ক্যান্সারসহ এ ধরনের কিছু ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়েই ঘন ঘন জ্বর দেখা দেয় শরীরে।
ত্বকে পরিবর্তন
অনেকেই ত্বকের ক্যান্সারের ব্যাপারে সচেতন নন। ত্বকে অস্বাভাবিক পরিবর্তনই এমন ক্যান্সার শনাক্ত করার সহজ উপায়। তাই ত্বকে অতিরিক্ত তিল বা ফ্রিকেল অথবা আঁচিলের দিকে খেয়াল করুন। যদি এর রং, আকারে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যায়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। ত্বক লালচে হয়ে যাওয়া, ফুসকুড়ি পড়ে যাওয়া এবং রক্তক্ষরণও অন্যান্য ক্যান্সারের উপসর্গ।
দীর্ঘস্থায়ী কাঁশি
আপনি যদি দেখেন যে, ওষুধ সেবনের পরও কাশি সারছেই না, তবে শীতকালীন কাশির চেয়েও এটা বেশি কিছু ধরে নিতে হবে। আর এই কাশির কারণে যদি আপনার বুক, পিঠ বা কাঁধে ব্যথা করে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মল-মূত্র ত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন
যদি মল বা মূত্র ত্যাগের জন্য ঘন ঘন শৌচাগারে যেতে হয়, তবে এখানে ক্যান্সার নিয়ে ভাবনার কারণ আছে। ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যও মলাশয়ের ক্যান্সারের লক্ষণ। মূত্র ত্যাগের সময় অন্ত্রে ব্যথা বা রক্তক্ষরণ মূত্রথলির ক্যান্সারের উপসর্গ।
অকারণে রক্তক্ষরণ
যদি কাশির সময় রক্তক্ষরণ হয়, তবে এটা ক্যান্সারের বড় লক্ষণ। এ ছাড়া স্ত্রী অঙ্গ (ভ্যাজিনা) বা মলদ্বার থেকে রক্তক্ষরণসহ এ ধরনের অন্যান্য অস্বাভাবিকতাও ক্যান্সারের উপসর্গ।
খাবার গ্রহণে সমস্যা
কেউ খাবার খেলেই যদি নিয়মিত বদহজমে ভোগেন, তবে পেট, কণ্ঠনালী বা গলার ক্যান্সার নিয়ে ভাবনার কারণ আছে। অবশ্য সাধারণত এসব উপসর্গকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় না। তবু অসুস্থতাকে কখনো এড়িয়ে যেতে নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উপরে উল্লিখিত লক্ষণগুলোকে ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণ মনে করা হয়। তবে এর বাইরেও অনেক লক্ষণ আছে ক্যান্সারের। এগুলোর মধ্যে আছে পা ফুলে যাওয়া, শরীরের আকারে বা অনুভূতিতে অস্বাভাবিক পরিবর্তন। তাই এসব লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের সাহায্য নিন।
মারণ রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বাদ দিন এইগুলি
ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রথম শর্ত তামাক বাদ দিন জীবন থেকে। সিগারেট্। বিড়ি । গুটখা । খৈনি।
ডায়েটের দিকে নজর দিন
রোজকার ডায়েটে রাখুন মরশুমি ফল ও সবজি। ফাস্ট ফুড ও ডিপ ফ্রাই কম খান। ওজন স্বাভাবিক রাখুন। রাত জাগবেন না। কৃত্রিম রং ও প্রিজার্ভেটিভ দেওয়া খাবার কম খান উচিত।
ক্যানসার থেকে বাঁচাতে পারে এই ৫ তথ্য!
ক্যানসার রোগটি নিয়ে মানুষের মধ্যে রয়েছে ভীতি। আর এই ভীতি থাকা স্বাভাবিক। কারণ এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরবর্তী সময় রোগীকে যাঁরা সামনে থেকে দেখেছেন, তাঁরাই জানেন! তাই অধিকাংশ মানুষ এই রোগটিকে ভয় পান।এবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যানসার রোগটি শরীরে তৈরি করতে পারে অনেক সমস্যা। এক্ষেত্রে শরীরে তৈরি হয় অস্বাভাবিক কোষ।এই কোষগুলি হল ক্যানসার কোষ
(Cancer Cell)। এবার ক্যানসারে কোষ নিজেকে বাড়াতে শুরু করলে তৈরি হয় টিউমার। এই টিউমারকে বলে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার
এদিকে চিকিৎসাশাস্ত্রের এতটা উন্নতি সত্ত্বেও এই রোগটিকে ঠিক বাগে আনা যাচ্ছে না। নানাভাবে এই রোগ আমাদের মাত দিয়ে দিচ্ছে। এমনকী বহু ক্ষেত্রে রোগটি ধরার পরও সম্ভব হচ্ছে না চিকিৎসা। তাই প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই এই বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে। এক্ষেত্রে ক্যানসার সচেতনতাই এই রোগ থেকে মানুষকে দূরে রাখতে পারে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যানসার চিকিৎসা এখন একেবারেই বদলে গিয়েছে। এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারলে অনেক সমস্যার হতে পারে সমাধান। তাই আর চিন্তা করে লাভ নেই। তবে মানুষের মধ্যে থাকা বিভিন্ন ভুল ধারণা এই সমস্যাকে বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই এই বিষয়টি নিয়ে হতে হবে সাবধান। এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক এই মারণ রোগ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অজানা কিছু তথ্যের কথা।
ব্রেস্ট ক্যানসার সবথেকে বেশি
ব্রেস্ট ক্যানসার (Breast Cancer) একটি মারাত্মক সমস্যা। এই অসুখে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর বহু মহিলা প্রাণ হারান। এবার সব দেশেই এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) রিপোর্ট বলছে, ২০২০ সালে গোটা পৃথিবীতে প্রায় ২২ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এমনকী প্রাণ হারান প্রায় ৬ লক্ষ ৮৫ হাজার মানুষ। তাই ব্রেস্ট ক্যানসার নিয়ে অবশ্যই বাড়িয়ে ফেলতে হবে সচেতনতা। এই পরিস্থিতিতে যেমন মহিলাদের করতে হবে সচেতন, তেমনই পরিবারকেও জানতে হবে। তবেই এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব। কারণ এই রোগটি প্রথমাবস্থায় ধরা পড়লে সহজেই চিকিৎসা করা যায়।
টিউমার মানেই ক্যানসার নয়
শরীরের হঠাৎ কোনও জায়গা ফুলে ওঠা হতে পারে টিউমারের সংকেত। তাই এমনটা হলেই চিকিৎসকের নজের গোটা বিষয়টা আনুন। তবেই ভালো থাকতে পারবেন। এরপর তাঁর পরামর্শ মতো করিয়ে ফেলুন টেস্ট। আর বলে রাখি, সব টিউমার কিন্তু ক্যানসার নয়। তাই প্রথম থেকেই ভয় পাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। বরং নিজের মনের শান্তিতে জীবনযাপন করুন।
ক্যানসার ছোঁয়াচে নয়
আমরা ২০২২ সালে বেঁচে রয়েছি। আর বিশ্বাস করুন, এই আধুনিক যুগে বাস করেও বহু মানুষ বিশ্বাস করেন যে এই সমস্যা ছোঁয়াচে। অর্থাৎ একজন মানুষ থেকে অন্য মানুষে এই সমস্যা ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এই মানুষগুলির কাছে অবশ্যই পৌঁছে দিতে হবে সঠিক তথ্য। কারণ এমন চিন্তাধারা থেকে ক্যানসার রোগীর চিকিৎসায় অনেক গাফিলতি হয়। এমনকী রোগীকে চিকিৎসকের কাছে পর্যন্ত আনা হয় না।
জিনের ভূমিকা রয়েছে
ক্যানসার একটি গুরুতর রোগ। এবার এই রোগের পিছনে অনেক কারণই থাকতে পারে। তবে গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ক্যানসারের পিছনে থাকতে পারে জিনের (Gene) ভূমিকা। তাই প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই হতে সাবধান। কারণ আপনার পরিবারে যদি ক্যানসার আক্রান্ত রোগী থাকে তবে আপনারও এই সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। তাই সাবধান থাকা ছাড়া কোনও গতি নেই।
ক্যানসার মানেই মৃত্যু নয়
ক্যানসার অলওয়েজ হ্যাজ আ অ্যানসার। তাই ক্যানসার হলেই ভাবতে যাবেন না যে মৃ্ত্যুর কাছে চলে এলেন। বরং নিজেক উদ্বুদ্ধ করুন। আপনি মনে বল রাখলেই এই রোগকে হারানো সম্ভব। আপনার সামনেই এমন অনেক মানুষকেই পেয়ে যাবেন যাঁরা ক্যানসার জয় করেছেন। তাই ভয় পাবেন না, লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিন।
যেসব অস্পষ্ট লক্ষণের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া জরুরি
পেটে ব্যথা কিম্বা কাশি- অনেকদিনের চিকিৎসার পরেও যদি সেরে না ওঠে, তাহলে সেটা ক্যান্সারের উপসর্গ হতে পারে এবং অনতিবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে- বলছেন ইংল্যান্ডে স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা এনএইচএসের কর্তাব্যক্তিরা।তারা বলছেন, এসব উপসর্গ উপেক্ষা করে চিকিৎসা গ্রহণে বিলম্ব করার কারণে হাজার হাজার মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ছে।আন্তর্জাতিক এক হিসেবে দেখা গেছে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সারা বিশ্বে বছরে এক কোটিরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।চিকিৎসকরা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ক্যান্সারের এসব লক্ষণ বা উপসর্গ সম্পর্কে লোকজনের আরো বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞদের মতে ক্যান্সার যদি প্রাথমিক স্তরে শনাক্ত করা যায় তাহলে খুব দ্রুত এবং খুব সহজে সেই রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব।ব্রিটেনে একজন ক্যান্সার চিকিৎসক এবং সাউথেন্ড ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের কনসালটেন্ট ক্লিনিক্যাল অনকোলজিস্ট ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, "একেবারে শুরু দিকে শনাক্ত করা গেলে সব ক্যান্সারই সারিয়ে তোলা সম্ভব। যদি অনেক পরে ধরা পড়ে, তখন আর সারানো সম্ভব হয় না। উপসর্গগুলোর ব্যাপারে সবাই একটু সচেতন হলে ক্যান্সারের চিকিৎসায় অনেক বেশি সুবিধা পাওয়া যায়।"
কিন্তু ব্রিটেনে এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে তিনজনই এসব উপসর্গকে গুরুত্বের সাথে নেন না। ক্যান্সারের সাধারণ যেসব উপসর্গ আছে সেগুলোর ব্যাপারেও অনেকে সচেতন নন। এসব উপসর্গ সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাও নেই।অনেক সময় দেখা যায় একজন ব্যক্তি হয়তো সুস্থ জীবন যাপন করছেন, কিন্তু হঠাৎ করেই দেখা গেল যে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পরে পরীক্ষা করে দেখা গেল তার ক্যান্সার হয়েছে। এর মধ্যে তার কিছু লক্ষণও হয়তো শরীরে দেখা দিয়েছিল কিন্তু সেগুলো তিনি বুঝতে পারেন নি, অথবা গুরুত্ব দেননি।
পরে দেখা গেল বিলম্ব করার কারণে ক্যান্সার ইতোমধ্যে তার শরীরে অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। তখন চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে সারিয়ে তোলা অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়ে।চিকিৎসকরা বলছেন, উপসর্গ যদি ছোটখাটোও হয়, তার পরেও সেটিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কেননা কিছু কিছু ক্যান্সার শনাক্ত করা কঠিন এবং অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পরেই এবিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। কিন্তু এর মধ্যেই অনেক সময় পার হয়ে যায়।চিকিৎসকরা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বর্তমানে ডাক্তার বা হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়েছে আর একারণেই ক্যান্সারের উপসর্গ বা লক্ষণের ব্যাপারে এখন সতর্ক হওয়া আরো বেশি জরুরি।
ক্যান্সারের উপসর্গ
কিছু কিছু উপসর্গ রয়েছে যেগুলো সাধারণত সব ক্যান্সারের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। বিশেষ করে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ার পর এসব উপসর্গ মোটামুটি একই রকমের হয়ে থাকে।ক্যান্সার চিকিৎসক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, "এসবের মধ্যে রয়েছে কোনো কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া, অনেকদিন ধরে খাওয়ায় অরুচি ইত্যাদি। তার পর সব পেটের ক্যান্সারের বেলায় একটা সাধারণ উপসর্গ হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে পেটে ব্যথা। বাউল ক্যান্সারের ক্ষেত্রে তিন থেকে চার সপ্তাহ ধরে ডায়রিয়া।""আবার কিছু কিছু উপসর্গ আছে একবার দেখা দিলেই গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। যেমন প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া যা ব্লাডার ক্যান্সারের একটি লক্ষণ যা কখনোই উপেক্ষা করা উচিত নয়," বলেন তিনি।বিশেষজ্ঞরা মনে করেন গলা, পাকস্থলি, বাওল, প্যাংক্রিয়াটিক, ওভারি- এধরনের অ্যাবডোমিনাল ক্যান্সার এবং ইউরোলজিক্যাল যেসব ক্যান্সার আছে- যেমন প্রোস্টেট, কিডনি এবং ব্লাডার- এসব ক্ষেত্রে উপসর্গগুলো অনেকটা আড়ালেই থেকে যায়।
সাধারণ ভাবে এসব ক্যান্সারের যেসব উপসর্গ দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছে:
কয়েক সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় ধরে পেটের ভেতরে অস্বস্তি । অনবরত ডায়রিয়া ।সবসময় অসুস্থ বোধ করা ।প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত। চিকিৎসকরা বলছেন, এসব উপসর্গের কোনো একটি তিন সপ্তাহ কিম্বা তার চেয়েও বেশি সময় স্থায়ী হলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। আরো কিছু অস্বাভাবিক পরিবর্তন- যেমন পেটে বাড়তি কোনো মাংসপিণ্ড বা লাম্প অথবা মেনোপোজের পরেও রক্ত যাওয়া, বিনা কারণে ওজন কমে যাওয়া- এসবও ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
ক্যান্সার কতো আগে দেখা দেয়
এই প্রশ্নের নির্দিষ্ট কোনো উত্তর নেই। শরীরের একেক অঙ্গের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে লক্ষণ দেখা দেওয়ার এই সময় একেক রকমের।আবার অনেক উপসর্গ আছে অস্পষ্ট, যেগুলো থেকে বোঝার কোনো উপায় নেই। একারণে এসব লক্ষণের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া আরো বেশি জরুরি।"সব অঙ্গের ক্যান্সারের উপসর্গ যে অনেক আগে থেকেই দেখা যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সে কারণে অস্পষ্ট লক্ষণগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। যেমন কাশি হলে আমরা তেমন একটা গুরুত্ব দেই না। কিন্তু কাশিটা যদি দুই তিন সপ্তাহ ধরে থাকে, অথবা বার বার ফিরে ফিরে সংক্রমণ হচ্ছে, তাহলে সেটা লাং ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে," বলেন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ।
কিছু ক্যান্সার আছে যেগুলোর লক্ষণ দ্রুত দেখা যায় না। অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়ার পরেই কেবল উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে।উদাহরণ হিসেবে প্যাংক্রিয়াটিক ক্যান্সারের কথা বলা যেতে পারে। এই ক্যান্সার প্রাথমিক স্তরে ধরা পড়ার ঘটনা খুবই কম।"অন্য কোনো কারণে সিটি স্ক্যান করার সময় হয়তো ধরা পড়লো। এবং এটি যখন ধরা পড়ছে তখন সেটি অনেক অ্যাডভান্সড স্টেজে চলে গেছে," বলেন ডা. আহমেদ। তিনি জানান, কিছু কিছু ক্যান্সার যেমন বাওল ক্যান্সার, ব্লাডার ক্যান্সার, লাং ক্যান্সার এগুলো একটুখানি সতর্ক হলে আগেভাগেই শনাক্ত করা সম্ভব।
ক্যান্সার সনাক্তে কি করা উচিত?
ক্যানসার হলে কী করবেন এবং কী করবেন না তা একটি সমস্যা, তবে প্রথমে কী করা উচিত, আমরা আপনাকে বলি। আপনার নিকটস্থ হাসপাতালে গিয়ে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। ক্যান্সার এবং এর পর্যায় জানার জন্য কিছু পরীক্ষা করা প্রয়োজন এবং তার উপর ভিত্তি করে ডাক্তার রোগীর আরও চিকিৎসা করেন।
সিবিসি এবং ডব্লিউবিসি
সিবিসি পরীক্ষা ক্যান্সার সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য দেয় না, তবে এটি জানে যে কোন দিকে আরও চিকিৎসা নিতে হবে। ডব্লিউবিসি মানে শ্বেত রক্ত কণিকা আমাদের শরীরে রক্ষাকারী হিসেবে কাজ করে। এটি শরীরকে রোগ থেকে রক্ষা করে। একজন স্বাভাবিক এবং সুস্থ ব্যক্তির শরীরে, ১ ঘন মিলি রক্তে তাদের সংখ্যা ৪ হাজার থেকে ১১ হাজার পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়।
সিটি স্ক্যান এবং এমআরআই
সঠিক ও নির্ভুল সিবিসি পরীক্ষা, চিকিৎসার পরও রিপোর্ট ভালো না হলে। তারপর ডাক্তার রোগীকে সিটি স্ক্যান এবং এমআরআই করার পরামর্শ দেন।
হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা
মানবদেহে যে অক্সিজেন বহন করে তাকে হিমোগ্লোবিন বলে। কারো বয়স ৬০-এর বেশি হলে তার শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ১০-এর নিচে হওয়া উচিত নয়। আর বয়স ৬০ বছরের কম হলে পুরুষদের ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ১৪ থেকে ১৭ এবং মহিলাদের ১২ থেকে ১৫-এর মধ্যে হওয়া উচিত। হিমোগ্লোবিন এই স্কেল থেকে কম বা বেশি হলে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
বায়োপসি
ক্যান্সারের সম্ভাবনা নিশ্চিত করার জন্য এটি একটি উপযুক্ত পরীক্ষা। একটি বায়োপসিতে, রোগীর শরীর থেকে একটি নমুনা নেওয়া হয়। যদিও প্রায়ই এটি একটি টিউমার হতে পারে। নমুনা টিউমারের কোষগুলি ক্যান্সারযুক্ত কিনা তা নিশ্চিত করে।ক্যান্সার এমন একটি রোগ, যা আমাদের শরীরে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং সময়ের সাথে সাথে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। কিন্তু সময়মতো এর লক্ষণগুলো শনাক্ত করা গেলে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
কখন সতর্ক হওয়া জরুরি
কিছু কিছু উপসর্গ আছে সাধারণ অসুখ-বিসুখের ক্ষেত্রেও যেগুলো প্রকাশ পেয়ে থাকে। যার মধ্যে রয়েছে কাশি কিম্বা জ্বর। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও এই দুটো খুব সাধারণ উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয়।কিন্তু এসব সাধারণ উপসর্গ থেকে ক্যান্সারের লক্ষণকে আলাদা করা যায় কীভাবে কিম্বা কখন একটু বেশি সতর্ক হতে হবে?ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, "অনেক দিন ধরে যদি কাশি থাকে, দুই তিন সপ্তাহেও যাচ্ছে না, আর কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েও সারছে না, অথবা কারো ঘন ঘন চেস্ট ইনফেকশন হচ্ছে, তখন অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে যে এটা ক্যান্সারের লক্ষণ কীনা।"ওজন কমে যাওয়ার ব্যাপারেও সতর্ক হতে হবে। নানা কারণে ওজন কমতে পারে। থাইরয়েডের কারণেও অনেক সময় ওজন কমে যায়। অন্যান্য রোগের কারণেও কমতে পারে।"কিন্তু ওজন কমে যাওয়ার পেছনে যদি কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া না যায়, এর কোনো ব্যাখ্যা না থাকে, তখন অবশ্যই সচেতন হওয়া উচিত," বলেন ডা. আহমেদ
ক্যান্সার চিকিৎসায় সাফল্য
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যান্সারের সাধারণ কিছু লক্ষণ সম্পর্কে জানা থাকলে রোগীরা হয়তো অকালেই তাদের মৃত্যু ঠেকাতে সক্ষম হবেন। আর একারণে এসব উপসর্গকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া খুবই জরুরি।ব্রিটেনে ক্যান্সার চিকিৎসক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, "প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে অধিকাংশ ক্যান্সারই সারিয়ে তোলা সম্ভব। কিন্তু ক্যান্সার ছড়িয়ে গেলে পুরোপুরি সারিয়ে তোলা কঠিন। তখন হয়তো আমরা ওই ক্যান্সারকে শুধু নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করি।"
একারণে ক্যান্সার যতো আগে ধরা পড়বে, ততই ভাল।বিশেষজ্ঞরা বলছেন ক্যান্সারের চিকিৎসায় সফলতার হার কতখানি সেটা কোন অঙ্গের ক্যান্সার তার ওপরেও নির্ভর করে।লাং ক্যান্সার আগে ভাগে শনাক্ত করা গেলে এর চিকিৎসায় সফলতার হার ৬০% থেকে ৭০%।গলার ক্যান্সারের বেলাতেও সাফল্যের হার একই রকমের। প্রোস্টেট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ।
কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায়গুলো কী
কেমোথেরাপির যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, তার মধ্যে চুল পড়ে যাওয়া, বমি ভাব বা বমি হওয়া, পাতলা পায়খানা, খাবারে অরুচি, চামড়া বা নখের রং পরিবর্তন, মুখে ঘা, বিষণ্নতা সবচেয়ে পরিচিত। কেমোথেরাপির জন্য চুল পড়ে যাওয়া খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। সব ধরনের কেমোথেরাপিতে এমন হয় না, তবে কেমোথেরাপির ধরন অনুযায়ী কমবেশি হয়ে থাকে। কেমোথেরাপির জন্য চুল পড়ে যাওয়া রোধের আদতে কোনো উপায় নেই। কেমোথেরাপি শেষ হয়ে গেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আবার স্বাভাবিক চুল ওঠা শুরু হয়। তাই এ নিয়ে মন খারাপ করার কিছু নেই।
আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করে কেমোথেরাপি প্রয়োগে বমি ভাব বা ডায়রিয়ার প্রবণতা অনেক কমে এসেছে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বমি ভাব হতে পারে এবং অল্পবিস্তর পাতলা পায়খানা হতে পারে, যা শরীরে ক্যানসারের স্থানের ওপর নির্ভর করে। অনেকের খাদ্যনালির ক্যানসারের জন্যও বমি ভাব বা পাতলা পায়খানা হয়। যদি কারও বমি ভাব বেশি হয়, সে ক্ষেত্রে আধুনিক ওষুধ প্রয়োগ করে তার প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্ভব। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত বমি বা পাতলা পায়খানা হলে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।
কেমোথেরাপির জন্য খাবারে অরুচিও হয়। তবে তা বিভিন্ন ওষুধ সেবনের মাধ্যমে প্রতিরোধ ও প্রতিকারযোগ্য। কিছু কিছু কেমোথেরাপিতে হাত ও পায়ের তালুর চামড়ার পরিবর্তন হয়। যেমন চামড়া উঠে যাওয়া, ব্যথা, ঘা হওয়া, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে রক্ত পড়তে পারে। অনেকের শরীরে নানা স্থানে নীলাভ দাগ হতে পারে এবং নখ কালো হয়ে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে একদমই ঘাবড়ানোর কারণ নেই।হাত–পায়ের তালুতে এসব পরিবর্তন হলে সেটাকে হ্যান্ড-ফুট সিনড্রোম বলে। এর প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ব্যবস্থা আছে। ওষুধের পাশাপাশি রোগীদের মধ্যে সচেতনতা জরুরি। যেমন হাত–পায়ের তালুর যত্ন নেওয়া, ঘষামাজা না করা, হাত–পায়ের তালু কোমল বা নরম রাখা, নরম স্যান্ডেল ব্যবহার করা ইত্যাদি। এসব নিয়ম মেনে চললে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া খুব সহজ।
মুখের যত্ন কেমোথেরাপি নেওয়া রোগীদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময়ে যথার্থ নিয়মে দাঁত ব্রাশ করা, ফ্লসিং করা, মাউথওয়াশ ব্যবহারের মাধ্যমে খুব সহজেই মুখের ঘা প্রতিরোধ করা সম্ভব। এরপরও মুখে ঘা হলে ক্যানসার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।ক্যানসারের রোগীরা স্বাভাবিকভাবেই বিষণ্নতায় ভোগেন। বিষণ্নতা প্রতিরোধে একজন ক্যানসার রোগীর পারিবারিক ও সামাজিক—দুই ক্ষেত্রের সাহায্য প্রয়োজন। ক্যানসার রোগীকে নিয়মের মধ্যে রেখে স্বাভাবিক কাজ করতে দিন, বিনোদনের ব্যবস্থা রাখুন। বিষণ্নতা পরিলক্ষিত হলে একজন মনোবিদ ও মনোচিকিৎসকের সমন্বয়ে চিকিৎসা দিন।মনে রাখবেন, অন্য সব চিকিৎসার মতো ক্যানসারের চিকিৎসাও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঊর্ধ্বে নয়। শুধু সচেতনতা বাড়ানো, সদিচ্ছা ও সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা গ্রহণের মাধ্যমে কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্ভব।
ক্যান্সার প্রতিরোধ
এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুল আহমেদ রিয়াদ বলেন, ‘অনেক ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধযোগ্য নয়, তবুও নিয়ন্ত্রিত জীবনধারা ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। যেমন: তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার থেকে বিরত থাকা, অ্যালকোহল গ্রহণ থেকে বিরত থাকা, অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচতে সতর্কতা গ্রহণ (যার মধ্যে রয়েছে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা এবং সুরক্ষামূলক পোশাক পরা)। নিয়মিতভাবে সুপারিশকৃত ক্যানসার শনাক্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এবং এইচপিভির টিকা গ্রহণ।’
ক্যান্সার চিকিৎসা
মাহফুজুল আহমেদ রিয়াদের ভাষ্য, যেকোনো ধরনের টিউমার হলেই সেটি অপসারণ করতে হবে। টিউমারটি মৃদু এবং সম্পূর্ণভাবে ফেলে দেয়া হলে ভয় নেই। এ ক্ষেত্রে সেটি আবার হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে না।তিনি আরও বলেন, ‘বায়োপসিতে ক্যানসার ধরা পড়লে প্রথম কাজ রোগীর স্টেজিং করা ও সেই অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি নির্বাচন করা। অনেক ক্ষেত্রেই সার্জারি করবার আগে কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই ক্যানসার শনাক্ত হলেই সর্বপ্রথম একজন ক্যানসার বিশেষজ্ঞের স্মরণাপন্ন হোন ও সঠিক চিকিৎসা নিন। মনে রাখবেন, ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগীর ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
চিকিৎসকরা মনে করেন, নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সারের রোগ তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে এবং সেক্ষেত্রে চিকিৎসা সহজ হয়। ক্যান্সারের লক্ষণগুলো নির্ভর করে ক্যান্সারটি কোথায়, এটি কতটা বড় এবং এটি কাছাকাছি কোনো অঙ্গ বা টিস্যুকে কতটা প্রভাবিত করে। ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে শরীরের বিভিন্ন স্থানে লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিতে পারে।তারা বলেন, ক্যান্সার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। এই রোগ মানুষের শরীরের যে কোনো টিস্যুকে আক্রামণ করতে পারে। আর সঠিক সময় তা ধরা না পড়লে মৃত্যুও হতে পারে। এটা কী ধরনের রোগ, কী কী কারণে ঝুঁকি বাড়ে, প্রতিরোধের জন্য কী কী করণীয় সে বিষয়ে সচেতনতা জরুরি।
রক্তপরীক্ষাতে ধরা পড়বে ক্যানসার
ডিম্বকোষ, যকৃৎ, পাকস্থলী, প্যানক্রিয়াস, খাদ্যনালী, মলাশয় ও স্তনের ক্যানসারের টিউমার নাকি ভবিষ্যতে শুধুমাত্র একটি রক্তপরীক্ষা থেকেই ধরা পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন৷ আরো বড় কথা হলো, এই রক্তপরীক্ষায় যখন ক্যানসার ধরা পড়বে, তখনও তা ছড়ায়নি বা বিশেষ বড় হয়নি, অর্থাৎ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে৷ এর ফলে কেমোথেরাপির দরকার পড়বে না, একটি ছোট অপারেশনেই টিউমার বাদ দেওয়া চলবে – তা ছড়ানোর আগেই৷
বহুবছর ধরে বিজ্ঞানীরা তথাকথিত ‘লিকুইড বায়োপ্সি'-র খোঁজে আছেন – যার অর্থ, শরীরের কোষসমষ্টি পরীক্ষা না করে রক্তের ডিএনএ পরীক্ষা করে টিউমারের উপস্থিতি নির্ধারণ করা৷ এমনকি এ ধরণের স্ক্রিনিং নিয়মিত হেল্থ চেক-এর অংশ হতে পারে৷ বালটিমোরের জন হপকিন্স স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীরা তাঁদের গবেষণার ফলাফল ‘সায়েন্স' জার্নালে প্রকাশ করেছেন ও সংশ্লিষ্ট রক্তপরীক্ষাটির নাম দিয়েছেন ‘ক্যানসার-সিক' (ক্যানসারএসইইকে)৷
রক্তে ক্যানসারের ডিএনএ
শরীরের কোষ যখন ক্যানসারগ্রস্ত হয়, তখন সেই কোষের জেনেটিক পরিবর্তন ঘটে৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোষটি এমনভাবে বদলে যায় যে, সেই কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে৷ একটি টিউমার সেল মরলে, তার অবশিষ্টাংশ প্রায়ই রক্ত গিয়ে পড়ে – তখন সেই রক্ত পরীক্ষা করে ক্যানসার-সংক্রান্ত জিন ও প্রোটিনের উপস্থিতি নির্ণয় করা সম্ভব হয়৷ ‘ক্যানসার-সিক' পরীক্ষায় ক্যানসার সেলের আটটি প্রোটিন ও ১৬টি জেনেটিক মিউটেশন বা পরিবর্তন ধরা পড়ে৷
শুধু আট ধরনের ক্যানসার কেন? এ প্রশ্নের জবাবে ‘সায়েন্স' পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধটির মূল রচয়িতা জোশুয়া কোহেন জানিয়েছেন যে, তথাকথিত ‘টিউমার মার্কার'-দের একটি বিশেষ গোষ্ঠীর প্রতি মনোযোগ দেওয়ার কারণ, এর ফলে টেস্টে ভুল ‘পজিটিভ' ফলাফল দেখানোর সম্ভাবনা হ্রাস পাবে ও টেস্টটির দামও কম থাকবে – শেষমেষ এই স্ক্রিনিংয়ের খরচ ৫০০ ডলারের কম করার আশা রাখেন বিজ্ঞানীরা৷ তবে এই টেস্ট রুটিন চেক-আপের অঙ্গ হয়ে উঠতে এখনও বেশ কিছু সময় লাগবে৷
‘ক্যানসার-সিক' যে আট ধরনের ক্যানসার নির্ণয় করতে সক্ষম
আরো বড় কথা, ‘ক্যানসার-সিক' যে আট ধরনের ক্যানসার নির্ণয় করতে সক্ষম, তার মধ্যে পাঁচ ধরনের ক্যানসারের ক্ষেত্রে অন্য কোনো উপায়ে ক্রিনিং করা, অর্থাৎ ক্যানসার ধরা বর্তমানে সম্ভব নয়৷ তবে কোলন বা মলাশয়ের ক্ষেত্রে প্রথাগত কোলোনোস্কপিতেই আপাতত প্রাথমিক পর্যায়ের কোলন ক্যানসার ধরা পড়ে৷বিজ্ঞানীরা সেই সঙ্গে ৮০০ জনের বেশি সুস্থ মানুষের রক্ত পরীক্ষা করে দেখেছেন, কেননা টেস্টে কতবার বা কী পরিমাণ ভুল ফলাফল দেখানো হচ্ছে, সেটাও জানা দরকার৷ সুস্থ মানুষদের ক্ষেত্রে মাত্র সাত জনের ক্ষেত্রে – অর্থাৎ মাত্র এক শতাংশ ক্ষেত্রে ভুল ‘পজিটিভ' ফলাফল দেখিয়েছে ‘ক্যানসার-সিক৷'
তবুও ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা এই টেস্ট থেকে বেশি প্রত্যাশা করা সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছেন৷ বিশেষ করে গোড়ার দিকের টিউমার ধরার ক্ষেত্রে ‘ক্যানসার-সিক' অর্ধেকের কম টিউমার ধরতে পেরেছে৷ ক্যানসার পর্যাপ্ত পরিমাণ বাড়ার পরেই যদি শুধু ‘ক্যানসার-সিক' স্ক্রিনিংয়ে তা ধরা পড়ে – যখন রোগের অন্যান্য লক্ষণ ইতিমধ্যেই দেখা দিয়েছে – তাহলে এই পরীক্ষার উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে বৈকি৷‘ক্যানসার-সিক' টেস্টে ভুল ‘পজিটিভ' ফল দেখানোর সম্ভাবনা বাস্তবে আরো বেশি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, কেননা, ক্রনিক বা দীর্ঘকাল ধরে অপরাপর রোগে আক্রান্ত রোগীদের পরীক্ষা থেকে বাদ দেওয়া হয়৷ অথচ ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহের রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তে প্রায়ই এমন একটি প্রোটিন পাওয়া যা যা ‘ক্যানসার-সিক' টেস্টেও ধরা পড়ে৷কাজেই আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন ও তা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে৷ ৬৫ থেকে ৭৫ বছরের ৫০,০০০ মহিলা, যারা কোনোদিন ক্যানসারে ভোগেননি, তাদের নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছেন পেনসিলভানিয়ার গেইজিঙ্গার হেল্থ সিস্টেম ও জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির গবেষকরা৷
ক্যান্সার রোগীরা যেসব খাবার খাবেন না
ক্যান্সারকে মরণব্যাধি বলা হলেও এখন এই রোগের চিকিৎসা হচ্ছে এবং সেরে উঠছেন অনেক রোগী।ক্যান্সার আক্রান্ত রোগকে যখন কেমোথেরাপি দেয়া হয়, তখন শরীরে বেশি করে মেডিসিন দেয়া হয়। ফলে বিভিন্ন প্রকারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, যেমন—চুল পড়ে যাওয়া, চোখের নিচে কালো দাগ ও খাবারে অরুচি।ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসার পাশাপাশি খাবারের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা ফ্রেশ সব খাবার খেতে পারবেন। তবে চার ধরনের খাবার ক্যান্সার রোগীরা খাবেন না। এসব খাবার তাদের জন্য ক্ষতিকর।
ফ্রিজে রাখা খাবার ক্যান্সার রোগীরা খাবেন না। খাদ্য সংরক্ষণে ফরমালিন নিষিদ্ধ হয়েছে অনেক আগে। তবে নানা রকম প্রিজারভেটিভের ব্যবহার চলছেই। প্রিজারভেটিভ দেয়া খাবার খাবেন না। সিঙাড়া, সমুচা ও অতিরিক্ত মসলাজাতীয় খাবার ক্ষতিকর। বারবিকিউ জাতীয় খাবার, অর্থাৎ যেসব খাবার সরাসরি আগুনে পুড়িয়ে তৈরি করা হয় যেসব খাবার খাবেন না।
ক্যান্সার রোগীর সঠিক খাদ্য
রেডিও থেরাপি বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে ক্যান্সার রোগীরা খাদ্য গ্রহণে কিছু অসুবিধার সম্মুখীন হন, যার মধ্যে সাধারণ সমস্যাগুলো হচ্ছে- ক্ষুধামন্দা, খাদ্যের স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি কমে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, গ্যাস জমে পেট ফুলে থাকা, পেটে ব্যথা, শুষ্ক মুখ, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, বমি বমি ভাব, মুখে ঘা হওয়া, গলা ব্যথা ও ফুলে যাওয়া, বমি, ওজন হ্রাস প্রভৃতি।
এই বিরূপ পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করা অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে পড়ে রোগীদের চরম খাদ্য বিতৃষ্ণার কারণে, যা মূলত কেমোথেরাপির ফল। এ জন্য খাদ্য গ্রহণের দুই-তিন ঘণ্টা আগে ও পরে কেমোথেরাপি বন্ধ রাখা বাঞ্ছনীয়। শর্করা এবং চর্বি থেকে ক্যান্সার রোগীরা অনেক শক্তি পাবে। অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা রোগীর জন্য প্রয়োজন অতিরিক্ত কিছু আমিষ।
জরায়ুর ক্যান্সার, ব্রেস্ট, প্রোস্টেট এবং কোলন ক্যান্সার রোগীদের অতিরিক্ত চর্বিবহুল খাদ্য পরিহার করা দরকার। এ ছাড়াও অতিরিক্ত ক্যালরিবহুল খাদ্য গ্রহণ গলব্লাডার ও এন্ড্রমেট্রিয়াম ক্যান্সারের জন্য ক্ষতিকর।
বেশ কিছু খাদ্য আছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধী যেমন- আঁশযুক্ত খাবার কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিহত করে।
পাকস্থলী ও খাদ্যনালীর ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার। ভিটামিন-এ ও ক্যারোটিন যুক্ত খাদ্য ফুসফুস, ব্লাডার ও গলনালী (খধৎুহী) ক্যান্সার প্রতিরোধী। ফল ও সবজিতে ক্যান্সার প্রতিরোধী অনেক উপাদান আছে। ডালজাতীয় খাদ্যের মধ্যে সয়াবিন, মসুর, শুকনো সীমের বীচিতে ক্যান্সার বিরোধী উপাদান রয়েছে। সয়া খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ বাড়ালে তা ব্রেস্ট এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। লাইকোপেন ও ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন- গাজর, টমাটো, প্রভৃতি ওভারিয়ান ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।এ ছাড়াও ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-ই এর সম্পূরক ফর্ম (ঝঁঢ়ঢ়ষবসবহঃধষ ভড়ৎস)-এর খাদ্যগুলোকে খাদ্য তালিকা হতে বাদ রাখার সুপারিশ করা হয়ে থাকে। কারণ এটি ক্যান্সার কোষের ধ্বংসে এবং ক্যান্সার চিকিৎসায় বাধা দেয়।
ক্যান্সার রোগীর জন্য সাধারণ কিছু পরামর্শ হলো-
যতটুকু সম্ভব খাদ্য গ্রহণের চেষ্টা করা। প্রচুর তরল জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা। খাদ্য গ্রহণের মাঝে তরল পানীয় কম গ্রহণ করা। খাদ্য গ্রহণের ৩০ মিনিট আগে বা পরে বেশি করে পানি পান করে নেয়া। খাদ্য বা পানীয়ের গন্ধ পছন্দ না হলে সেটি গ্রহণ না করা। মুখ সব সময় পরিচ্ছন্ন রাখা।ক্যান্সার রোগীরা নরম ভাত খাওয়ার অভ্যাস করুন। কারণ কেমোথেরাপির সময় তা হজমে সমস্যা হয়। নরম ভাতের সঙ্গে ঠাণ্ডা তরকারি দিতে হবে। ঠাণ্ডা তরকারি বলতে তেল-মসলা কম দিয়ে খাবারটা দিতে হবে।এ ছাড়া সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল খাবেন। এ সময় শরীরে ভিটামিনস, মিনারেলস, আয়রন, হিমোগ্লোবিন—এগুলোর অভাব দেখা যায়। হিমোগ্লোবিন কমে গেলে বিট রুটের শরবত দেয়া যেতে পারে।
এ সময় খেতে পারেন প্রচুর হিমোগ্লোবিন ভরপর আনার। কচুশাক, লালশাক, ডাঁটাশাক; অবশ্যই ওটার সঙ্গে লেবুর রসটা মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। কারণ ভিটামিন সি সাধারণত আয়রন অ্যাবজর্বসনে সহায়তা করে।প্রতিদিন একটি করে রসুন খেতে পারেন। রসুন একপ্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি শরীরের বিভিন্ন টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে। এ ছাড়া কেমোথেরাপির সময় রোগীকে বেশি করে পানি পান করাতে হবে।ক্যান্সার রোগীকে স্যুপ দেয়া যেতে পারে। টমেটো স্যুপে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, তা ক্যান্সার প্রিভেন্ট করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া সব ধরনের ফ্রেশ খাবার খান।
এই ৭ টি জিনিস খেলে ক্যানসার থেকে মিলবে মুক্তি !
বাদাম
বাদাম ভিটামিন ই এর সবথেকে ভালো উৎস। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ চীনাবাদাম কোলন, ফুসফুস, যকৃত, এবং অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। সকালে কিংবা বিকালের খাবারে বাদাম রাখুন। এ ছাড়াও এক চামচ বাদামের মাখন লাগানো এক টুকরো পাউরুটি আপনার শরীরকে ক্যান্সার থেকে দূরে রাখতে পারে।
বাতাবিলেবু
বাতাবিলেবু, কমলালেবু , ব্রোকলি এই সব কিছুতে রয়েছে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি ক্যান্সার হওয়ার জন্য দায়ী নাইট্রোজেন যৌগের গঠন রোধ করে। বাতাবি, কমলালেবু, ব্রকলী এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ অন্যান্য ফল খাদ্যনালী, মূত্রাশয়, স্তন ক্যান্সার, সার্ভিকাল ক্যান্সার, এবং পেট ও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। তাই প্রতিদিন আপনার খাদ্যতালিকায় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল ও শাকসবজি রাখুন।
মিষ্টি আলু
মিষ্টি আলু বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ একটি সবজি। গবেষণায় দেখা যায় উচ্চ মাত্রায় বিটা ক্যারোটিন শরীরে থাকলে তা কোলন, স্তন, পেট ও ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। গবেষণায় আরও প্রমানিত হয়, যে মহিলারা মিষ্টি আলুর মত বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ সবজি তাদের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন রাখেন তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় অর্ধেক কমে যায়।
হলুদ
হলুদের মধ্যে বিদ্যমান সবথেকে সক্রিয় একটি উপাদান যা ‘কারকিউমিন’ নামে পরিচিত প্রদাহজনিত সমস্যা বিরোধী এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উভয় হিসাবে কাজ করে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মানব দেহের টিস্যুর মধ্যে প্রবেশ করে ভেতর থেকে দেহকে ক্যান্সার প্রতিরোধী করে তোলে। শরীরকে ক্যান্সার প্রতিরোধী করতে চাইলে কাঁচা হলুদ খেতে পারেন অথবা মাছ ও মাংসের তরকারিতে প্রয়োজন মত ব্যাবহার করতে পারেন।
চা
চায়ে রয়েছে ক্যাটচীন নামক একটি যৌগ। এই যৌগটি মানবদেহকে ক্যান্সারের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। সম্প্রতি চীনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা চা পান করেন তাদের ফুসফুস, প্রস্টেট, কোলন এবং স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যারা চা পান করেন না তাদের থেকে অনেক কম। চায়ের মধ্যে সবুজ চা (গ্রিন টী) ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য সবথেকে কার্যকরী।
বেদানা
বেদানায় রয়েছে ‘এলাজিক অ্যাসিড’। এই এলাজিক অ্যাসিড শরীরে ক্যান্সারের জন্য দায়ী যৌগকে নিস্ক্রিয় করে ও ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি বন্ধ করে। যেকোনো উপায়ে পরিবারের সবাইকে আজকে থেকেই বেদানা খাবার জন্য উৎসাহী করুন। সালাদ, জুস, মিল্কশেক অথবা সরাসরি যেকোনো উপায়ে বেদানা খেতে পারেন সবাই।
টমেটো
ক্লিনিক্যাল অনকোলজি জার্নালে ২০০৯ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যায় টমেটো ‘লাইকোপিন’ নামক ক্যান্সার প্রতিরোধকে সমৃদ্ধ। লাইকোপিন দেহকে প্রস্টেট ক্যান্সার সহ অন্যান্য ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। তাই পুরুষ ও মহিলা প্রত্যেকের সপ্তাহে অন্তত তিনটি টমেটো খাদ্য তালিকায় রাখা অত্যন্ত জরুরী।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে ৫টি খাবার রোজ খান
ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বিশ্বজুড়ে লাফিয়ে বাড়ছে ক্রমশ। ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর দাবি, প্রতি দিন প্রায় ১৩০০ জন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।মেয়েদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার এবং ছেলেদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রবণতা বেশি। চিকিৎসকরা বলেন, অতিরিক্ত বাইরের খাবার, তেল-মশলাদার খাবার, অতিরিক্ত চিনি খেলেও ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। শরীরের ওজন ঠিক রাখতে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে রোজ খেতে পারেন কয়েকটি খাবার।
ব্রকোলি
এই সব্জিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইটোকেমিক্যাল সালফোরাফেন। যা ক্যান্সারের কোষের সঙ্গে লড়তে সাহায্য করে। এ ছাড়া পুরুষদের প্রস্টেট ক্যানসারের হার ঠেকাতে রোজ ব্রকোলি খাওয়া উপকারী। স্তন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায় ব্রকোলি।
বেরি
শরীর সুস্থ রাখতে বেরি জাতীয় ফলের জুড়ি মেলা ভার। ক্যান্সার দূর করতেও বেরি দারুণ উপকারী। এই ফলে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের মতো নানা উপকারী উপাদান, যা ক্যান্সারের সঙ্গে লড়তে সাহায্য করে। তাই অন্যান্য ফলের পাশাপাশি বেরিও খেতে পারেন।
আপেল
আপেল হল পলিফেনলসের সমৃদ্ধ উৎস। এই অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষগুলি মেরে ফেলতে সাহায্য করে। ফলে ক্যান্সারের মতো মরণরোগের সঙ্গে লড়াই করার জন্য অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে আপেল। তবে শুধু ক্যান্সার নয়, হার্টের রোগ দূর করতেও রোজ একটি করে আপেল খান।
আখরোট
রোজ নিয়ম করে আখরোট খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো যায়। আখরোটে রয়েছে সেলেনিয়াম নামক উপাদান, যা প্রস্টেট ক্যান্সারের আশঙ্কা কমায়। এই মরণরোগের ঝুঁকি কমাতে অবশ্যই আখরোট নিয়মিত খান।
গাজর
গাজরের মতো উপকারী সব্জি আর দু’টো নেই। গাজরে রয়েছে এমন অনেক উপকারী উপাদান, যা ক্যান্সারের মতো রোগের ঝুঁকি কমায়। স্তন ক্যান্সার, মুখের ক্যান্সার, মূত্রাশয়ের ক্যান্সার— এই তিন রোগের আশঙ্কা দূর করতে নিয়ম করে গাজর খান।
সভ্যতার যুগান্তকারী আবিষ্কার! এসে গেল ক্যানসারের ওষুধ, আর মৃত্যু নয় মারণরোগে...
ক্যানসার এমন এক মারণরোগ যা, যুগ যুগ ধরে মানবজাতির সঙ্গে রসিকতা করে আসছে। জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। রেয়াত করছে না কাউকে। তাকে বাগে আনা যাচ্ছে না। কিন্তু লড়াই ছাড়েনি মানুষ। সে নিত্য নব উদ্ভাবনীশক্তি দিয়ে খুঁজে চলেছে নিরাময়। সেই সন্ধানের পথ ধরেই ঘটল এই আবিষ্কার। ঘটল যুক্তরাজ্যে। সেখানকার ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইমিউনোথেরাপি এবং পরীক্ষামূলক ওষুধ গুয়াডেসাইটাবিনের সমন্বয়ে নতুন এক চিকিৎসা- পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন তাঁরা। ইমিউনোথেরাপিতে ব্যবহৃত ওষুধ পেম্ব্রোলিজুমাব এবং ডিএনএ হাইমিথাইলেটিং এজেন্ট গুয়াডেসাইটাবিনের মিশ্রণ পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকজন ক্যানসার রোগীকে দেওয়া হয়েছিল। প্রথম ধাপের পরীক্ষায় এক-তৃতীয়াংশের বেশি রোগীর শরীরে ক্যানসারের বিস্তার থামিয়ে দেওয়া গেছে বলে দেখা গিয়েছে। 'ইমিউনোথেরাপি অব ক্যানসার' নামক পত্রিকায় নতুন এ গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।
তথ্যসুত্র
ক্যান্সারের ঝুঁকি, Deshrupantor.
ক্যানসার থেকে মিলবে মুক্তি, Bengali News18.
ক্যান্সার রোগীর সঠিক খাদ্য, Daily Naya Diganta.
ক্যান্সার রোগীরা যেসব খাবার খাবেন না, Jugantor.
ক্যান্সার কি, Ekushey.
ক্যানসারের ওষুধ, আর মৃত্যু নয় মারণরোগে, Zee News.
রক্তপরীক্ষাতে ধরা পড়বে ক্যানসার, Dw.
ক্যানসার কেন হয়, News Bangla24.
ক্যান্সার যেসব লক্ষণ সতর্ক হওয়া জরুরি, Bbc.
কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, Prothom Alo.
ক্যানসার থেকে বাঁচাতে পারে, Eisomoy.
আজ বিশ্ব ক্যান্সার দিবস, Rtv Online.
ক্যান্সারের প্রধান লক্ষণগুলো, Mzamin.
বিশ্ব ক্যান্সার দিবস, Risibg Bd.
বিশ্ব ক্যানসার, Ittefaq.
ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই, Eishomoy.
বিশ্ব ক্যান্সার দিবস, Dhakapost.