বিশ্ব কফি দিবস (World Coffee Day)

বিশ্ব কফি দিবস (World Coffee Day)
Photo by Ella Jardim / Unsplash

১ অক্টোবর, আন্তর্জাতিক কফি দিবস। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে পান করা হয় কোটি কোটি কাপ কফি। দিনের শুরু হোক বা আড্ডা বা আলাপ আলোচনা, কফি জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।আন্তর্জাতিক কফি সংস্থা (আইসিও) ২০১৪ সাল থেকে ১ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক কফি দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। ২০১৫ সালে ইতালিতে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক কফি দিবস উদযাপিত হয়। ব্রাজিলে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি কফির উৎপাদন হলেও, কফি পানের দিক থেকে এগিয়ে ফিনল্যান্ডের মানুষ। 

কফি (ইংরেজি: Coffee) বিশ্বব্যাপী খুবই জনপ্রিয় পানীয়

কফি (ইংরেজি: Coffee) বিশ্বব্যাপী খুবই জনপ্রিয় পানীয়। পানির সাথে ফুটিয়ে রান্না করা ‘কফি বীজ’ নামে পরিচিত এক প্রকার বীজ পুড়িয়ে গুঁড়ো মিশিয়ে কফি তৈরি করা হয়। এই বীজ কফি চেরি নামক এক ধরনের ফলের বীজ। প্রায় ৭০টি দেশে এই ফলের গাছ জন্মে।কফি শরীরের জন্য বেশ উপকারি। ক্যাফেইনের অনেক উপকারিতা রয়েছে এর মধ্যে। কিন্তু খালি পেটে কফি শরীরের পক্ষে মারাত্মক। আর তা যদি হয় ব্ল্যাক কফি, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ কয়েক গুন বেড়ে যায়।

বিশ্বের পাঁচটি বেস্ট কফি ড্রিঙ্কস, যা ট্রাই করা উটিত

এস্প্রেসোএস্প্রেসো তাদের জন্য আদর্শ যাঁরা ঘন ও গাঁঢ় কফির স্বাদ নিতে ভালোবাসেন৷

লাটেলাটে হল কফির একটি মসৃণ এবং ক্রিমি সংস্করণ। এটি এক তৃতীয়াংশ এসপ্রেসো এবং দুই তৃতীয়াংশ স্টিমড মিল্কের সংমিশ্রণ, উপরে একটি পাতলা ফেনা স্তর দিয়ে সাজানো হয়।

আমেরিকানোএটি এসপ্রেসোর মৃদু সংস্করণ, যা গরম জলের সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি হয়। আদর্শ স্বাদ পাওয়ার জন্য এক অংশ এসপ্রেসো তিন থেকে চার অংশ জলের সঙ্গে মেশানো হয়।

আয়ারিশ কফিএটি একটি জনপ্রিয় এবং বিলাসবহুল অপশন, যা হুইস্কি, এসপ্রেসো, চিনি, এবং ফেটানো ক্রিম মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এই বিশেষ পানীয়টি শীতের সন্ধ্যায় আসর জমানোর জন্য দারুণ উপযোগী৷

ক্যাপুচিনোক্যাপুচিনো ফেনাযুক্ত মিল্ক, যা কফি প্রেমীদের কাছে দারুণ প্রিয়। এটি এক তৃতীয়াংশ এসপ্রেসো, এক তৃতীয়াংশ স্টিমড মিল্ক, এবং এক তৃতীয়াংশ ফেনাযুক্ত মিল্কের সংমিশ্রণে তৈরি৷

ঘুম থেকে উঠে সরাসরি কফি পান করলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে

ঘুম থেকে উঠে সরাসরি কফি পান করলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে। শুধু তাই নয়, রাতভর শরীরে নানা রকম প্রক্রিয়া চলার কারণে পাকস্থলিতে অতিরিক্ত অ্যাসিড ক্ষরণ হয়। এই অবস্থায় খালিপেটে কফি পড়লে গা গুলোনো ও বমির মতো সমস্যা দেখা দেয়। তাই দিনের যে সব সময় দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম থাকে, তখন কফি পান করাই বুদ্ধিমানের কাজ। অর্থাত্‍ সকাল ৯ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত কফি খাওয়ার আদর্শ সময়। তবে লাঞ্চ বা ডিনারের পর কফি এড়িয়ে চলাই ভালো। এতে রাতের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে

অতিমাত্রায় ক্যাফেইন গ্রহণের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া রয়েছে

তবে গবেষকরা বলছেন, দুধ এবং চিনি মেশানো অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত কফির তুলনায় ব্ল্যাক কফি অধিক স্বাস্থ্যসম্মত। হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার ক্যাফেইন গ্রহণ অনেক স্বাস্থ্য সুবিধা দিতে পারে। অন্যদিকে অতিমাত্রায় ক্যাফেইন গ্রহণের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া রয়েছে, যা স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষত যাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে তাদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

নিয়মিত কফি পান হরমোন এপিনেফ্রিন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে

এছাড়া শরীরে অতিরিক্ত চর্বি কমাতে প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে ক্যাফেইন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত কফি পান হরমোন এপিনেফ্রিন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এতে শারীরিক কর্মক্ষমতা, পেশি শক্তি এবং সামগ্রিক ধৈর্য বৃদ্ধিতে সহায়ক। ফলে বিষণ্নতা-উদ্বেগের বিরুদ্ধে লড়াই করে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।

কফিতে থাকা ক্যাফেইন শরীরের ডোপামিনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়

অন্যদিকে কফিতে থাকা ক্যাফেইন শরীরের ডোপামিনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবে নিউরনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় ও শরীরের ক্লান্তি ভাব অনেকটা কমে যায়।এমনকি ত্বকের যত্নে কফি ভালো স্ক্রাবের কাজ করে। রোদে পোড়া ত্বক ও অ্যান্টিরিংকেল দূর করতে কফির জুড়ি মেলা ভার। চুলের যত্নে সপ্তাহে অন্তত একদিন কফি পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি চুলে লাগালে অতিরিক্ত চুল পড়া কমে যায়। পাশাপাশি রুক্ষতা কমিয়ে চুলের উজ্জ্বলতাও ফিরে আসে।

পানীয় হিসাবে কফি রয়েছে বিশ্বে জনপ্রিয়তার শীর্ষে

পানীয় হিসাবে কফি রয়েছে বিশ্বে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। কফির উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বেশ কিছু উপকারী উপাদানের জন্য কফি অনেক রোগের ঝুঁকি কমাতে সক্ষম। নিচে কফি পান করার উপকারিতা তুলে ধরা হলো -

শরীরে অতিরিক্ত চর্বি কমাতে প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে ক্যাফেইন অতান্ত্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের শরীরে ৩ থেকে ১১ শতাংশ পর্যন্ত মেটাবলিক রেট বা বিপাকের ক্রিয়া বৃদ্ধিতে সাহায্য করেক্যাফেইন ।কফিতে থাকা ক্যাফেইন শরীরের ডোপামিনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবে নিউরনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় ও শরীরের ক্লান্তি ভাব অনেকটা কমে যায়।কফি পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ একটি পানীয়। এতে থাকে ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, নিয়াসিন, রিবোফ্লাভিন প্রভৃতি। কিছু গবেষণা বলছে , কফি টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয় ২৩ থেকে ২৫ শতাংশ।নিয়মিত কফি পান হরমোন এপিনেফ্রিন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এতে শারীরিক কর্মক্ষমতা, পেশী শক্তি এবং সামগ্রিক ধৈর্য বৃদ্ধিতে সহায়ক। ফলে বিষণ্নতা-উদ্বেগের বিরুদ্ধে লড়াই করে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর কফি নিয়মিত পান করলে, শরীর বহু রোগের হাত থেকে রক্ষা পাবে।করোনারি হার্ট ডিজিজ এর মত জটিল সমস্যায় ও কফি উপকারী ভুমিকা রাখে। হৃদপিন্ড ভালো রাখতেও কফি সহযোগী। নিয়মিত এবং পরিমিত কফি পান করলে স্ট্রোকের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।ত্বকের যত্নে কফি ভাল স্ক্রাবের কাজ করে । রোদে পোড়া ত্বক ও অ্যান্টিরিংকেল দূর করতে কফির জুড়ি মেলা ভার।চুলের যত্নে সপ্তাহে অন্তত একদিন কফি পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি চুলে লাগালে অতিরিক্ত চুল পড়া কমে যায় । পাশাপাশি রুক্ষতা কমিয়ে চুলের উজ্জ্বলতাও ফিরে আসে।

প্রায় ১০ বছর আগেও এদেশে কফি সংস্কৃতির অস্তিত্ব ছিল না

প্রায় ১০ বছর আগেও এদেশে কফি সংস্কৃতির অস্তিত্ব ছিল না। কেননা দেশের মানুষ নিখুঁত এক কাপ চায়ের মধ্যে খুঁজে নেন ভালবাসা। এমন একটি চা প্রেমী জাতির মধ্যে কফির সংস্কৃতি কীভাবে ছড়িয়ে পড়লো, সেই বিষয়টি বেশ মজার..মূলত কফিশপ কিংবা ক্যাফেতে মানুষ যে শুধুই কফি খেতে যায়, তা নয়...যায় নিত্য কোলাহল থেকে কিছুটা সময় লুকিয়ে থাকতে। একটি ভালো বই, কয়েকটি ব্রাউনি, একটু উষ্ণ পানীয় উপভোগ করতে করতে যেন হারিয়ে যাওয়া। প্রাত্যাহিক জীবনের সকল চিন্তা থেকে নিজেকে খানিকটা স্বস্তি দেওয়া।

কফি খুবই কার্যকরি এন্টিঅক্সিডেন্ট

তাছাড়া নিয়মিত কফি পান করলে ক্ষতির চেয়ে উপকারই বেশি হয়। শুধু কফিহোলিকদের জন্য নয়, সবার জন্যই এই ব্যাপারটি সত্যি। কফি খুবই কার্যকরি এন্টিঅক্সিডেন্ট। এক কাপ কফি এনে দেয় মানসিক সুস্থতা। সেইসাথে স্মৃতিশক্তিকেও অনেক বেশি প্রখর করে তোলে। কফি পানের অভ্যাস যে কেবল মানসিকভাবেই সতেজ করে তা নয়, পাশাপাশি এটি শরীরে প্রচুর পরিমাণে এডিপোনেক্টিন উৎপন্ন করে। এডিপোনেক্টিন হলো এমন একটি উপাদান, যা শরীরে সুগার লেভেল এবং ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তবে পরপর ৮০–১০০ কাপ কফি একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে।

কফি টাইপ ২ ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। ২০১৪ সালে ৪৮ হাজার জনের উপর একটি সমীক্ষা চালানো হয়। এতে দেখা যায় যারা ৪ বছরের মধ্যে প্রতিদিন কমপক্ষে এক কাপ কফি খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়েছে, তাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ১১ শতাংশ পর্যন্ত কম।বেশ কিছু গবেষণা বলছে, কফি এবং অন্যান্য অনেক পানীয়তে থাকা ক্যাফেইন পারকিনসন রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে।২০১৯ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, কফি লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে। এর আগে ২০১৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হওয়া একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছিল যে, প্রতিদিন দুই থেকে তিন কাপ কফি খাওয়ার ফলে অংশগ্রহণকারীদের হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা এবং দীর্ঘস্থায়ী লিভার ডিজিজ (সিএলডি) হওয়ার ঝুঁকি ৩৮ শতাংশ কমে যায়।যারা কফি পান করেন তাদের পিত্তথলির রোগের ঝুঁকিও কম থাকে।পরিমিত পরিমাণে কফি খেলে রক্তচাপসহ কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য ভালো থাকে। ২০১৮ সালের একটি গবেষণায় গবেষকরা দেখেছেন যে, প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ কাপ কফি পান করলে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি ১৫ শতাংশ কমে যায়।২০১৯ সালের একটি গবেষণা বলছে, কফি পানের সাথে ওজন হ্রাসের সাথে একটি সম্পর্ক রয়েছে।


তথ্যসুত্র

 বিশ্বে জনপ্রিয়তার শীর্ষে, Protidinersangbad.

 বিশ্বজুড়ে কফি ডে-, Ajbikel.

 বিশ্ব কফি দিবস, Rajneeti.

আন্তর্জাতিক কফি দিবস, News24.

নিয়মিত কফি পান, Somoynews.

পানীয় হিসাবে কফি, Ittefaq.

 ব্ল্যাক কফি অধিক স্বাস্থ্যসম্মত, NTV BD.

 নিয়মিত কফি পান, Dhakapost.

Subscribe for Daily Newsletter