বিশ্ব হাতি দিবস (World Elephant Day)

বিশ্ব হাতি দিবস প্রতি বছর ১২ আগস্ট পালন করা হয়। এই দিবসটি উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য হলো হাতিদের সুরক্ষা ও সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং তাদের বাসস্থান রক্ষার প্রচেষ্টা করা। হাতি আমাদের পৃথিবীর অন্যতম মূল্যবান প্রাণী, কিন্তু বর্তমানে তাদের সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। 

দিবসটির সূচনা হয়, তাদের মূল লক্ষ্য ছিল বিশ্বের হাতিদের সংরক্ষণে সকলের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা

বিশ্ব হাতি দিবসের সূচনা হয়েছিল ২০১২ সালে, কানাডিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা প্যাট্রিসিয়া সিমস এবং থাইল্যান্ডের এলিফ্যান্ট রিইনট্রডাকশন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে।সিমস এবং তার সহকর্মীরা হাতিদের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এবং সেই উপলব্ধি থেকেই এই দিবসটির সূচনা হয়। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল বিশ্বের হাতিদের সংরক্ষণে সকলের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং তাদের অবস্থা উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।

এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, এই ডকুমেনটারির কি প্রয়োজন?

এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, এই ডকুমেনটারির কি প্রয়োজন? এর পিছনে কি উদ্দেশ্য আছে? এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে উঠে এসেছে বেশ কিছু তথ্য ও উত্তর। যা এখানে তুলে ধরছি। প্রথম বিশ্ব হাতি দিবসের প্রেরণা ছিল যে এই মহিমান্বিত প্রাণীর দুর্দশার প্রতি বিশ্বজুড়ে জনবসতি ও সংস্কৃতির দৃষ্টি আকর্ষণ করা। তাদের মনোরম ও বুদ্ধিমান প্রকৃতির কারণে, বিশ্বের বৃহত্তম ভূমির প্রাণীকে যেন বিশ্বজুড়ে ভালোবাসা দেওয়া হয়। তবে, দুর্ভাগ্যক্রমে, এই দুর্দান্ত প্রাণীগুলো তাদের বেঁচে থাকার জন্য আজ একাধিক হুমকির সম্মুখীন হয়ে চলেছে। সেটা সারা বিশ্বেই আজ প্রকট হয়েছে।

বড় ইস্যু হলো- হাতির দাঁতের বাণিজ্য

এর পিছনে কিছু কারণ আছে। কারণ ছাড়া কেউ কোনো কিছু করে না। আর তাই সেক্ষেত্রে হাতির চেয়ে মূল্যবান প্রাণী আর কি থাকতে পারে। তাই তো আজ হাতির উপরেই নেমে এসেছে কুঠারের ঘা। এর বড় ইস্যু হলো- হাতির দাঁতের বাণিজ্য। হাতির দাঁতের দাম প্রায়শই সোনার দাম ছাড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনে হন্তদন্তের চাহিদা সবচেয়ে বেশি, এটি হাতির দাঁতকে আগের চেয়ে বড় টার্গেট করে তুলেছে। এখানকার অর্থনীতি দৃঢ়তার সঙ্গে নম্র হাতির বিরুদ্ধে কাজ করে। আফ্রিকার চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করা লোকেরা প্রায়শই একটি হাতির দাঁত থেকে এক মাসের বেশি মজুরি উপার্জন করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে তা বিক্রি করে তারা লাভবান হয়।এ ছাড়াও, বিশ্বের যে অংশগুলো হাতির দাঁত দাবি করে, যেমন চীন, তারা ক্রমশ ধনী হয়ে উঠছে, যার অর্থ তারা দাঁতালের জন্য বেশি অর্থ দিতে পারে। এই দ্বৈত কারণগুলোর জন্য হাতি শিকার বেড়ে গেছে।

বাসস্থান হ্রাস পাওয়া বিশ্বের হাতির জনসংখ্যার জন্যও একটি বড় বিপদ

এরপর আরো একটি কারণ উঠে আসে, তা হলো- বাসস্থান হ্রাস পাওয়া। বাসস্থান হ্রাস পাওয়া বিশ্বের হাতির জনসংখ্যার জন্যও একটি বড় বিপদ, কারণ এর ফলে প্রতিদিনের শত শত পাউন্ড খাবারের জন্য হাতিকে বঞ্চিত করে। তাদের পক্ষে বংশবৃদ্ধি করা আরো কঠিন হয়ে ওঠে এবং শিকারীদের পক্ষে তাদের সনাক্তকরণ সহজ করে দেয়। দুর্ভাগ্যক্রমে, গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে বন্য অঞ্চলে হাতির ক্ষতি রুখতে বাসস্থান হওয়াই সবচেয়ে জরুরী। এক শতাব্দী আগে, ১২ মিলিয়নেরও বেশি সংখ্যক হাতি ছিল অরণ্যে। আজ, এই সংখ্যাটি ৪,০০,০০০  হিসাবে কম হতে পারে, প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার হিসাবে শিকারীদের দ্বারা নিহত হয়ে চলেছে। বলছে একটি তথ্য।

হাতিগুলোর ভৌগলিক পরিসীমা ২০০২ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে

তথ্য অনুসারে, হাতিগুলোর ভৌগলিক পরিসীমা ২০০২ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে এবং তাদের ঘুরে বেড়াতে একই রকম ক্ষতি হয়েছিল। আফ্রিকাজুড়ে বড় বড় উদ্যানের প্রবর্তনের ফলে আবাসস্থল ধ্বংস স্থিতিশীল হয়ে পড়েছে, তবে অবৈধ শিকার হওয়া একটি মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সার্কাস এবং পর্যটন পশুদের সুস্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক এক সমস্যা।

সিমস ও ক্লার্কদের প্রতিষ্ঠিত বিশ্ব হাতি দিবসের তাৎপর্য বাড়িয়ে দিয়েছে

তাই সিমস ও ক্লার্কদের প্রতিষ্ঠিত বিশ্ব হাতি দিবসের তাৎপর্য অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে, একই সঙ্গে মানব এবং হাতির মধ্যে দ্বন্দ্ব হ্রাস করার উপায়গুলো খুঁজতে সবাইকে একত্র হওয়ার জন্য একটি সুযোগ করে দিয়েছে। সমাধানের পথ সম্ভবত কৌশলগুলোর সংমিশ্রণের মধ্যে রয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে জমি বিকাশ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে যা আবাসস্থল ধ্বংসকে হ্রাস করে, হাতিগুলোকে খামার থেকে দূরে রাখতে বৈদ্যুতিক বেড়া এবং স্থানীয় মনোভাবের পরিবর্তন ঘটাতে পারে।

হাতি পৃথিবীর বৃহত্তম স্থলচর প্রাণী

হাতি পৃথিবীর বৃহত্তম স্থলচর প্রাণী এবং তাদের দুটি প্রজাতি আছে—আফ্রিকান হাতি এবং এশিয়ান হাতি। এই দুটি প্রজাতিরই অস্তিত্ব বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে।বিশেষত, আফ্রিকান হাতি শিকার এবং হাতির দাঁতের জন্য অবৈধ বাণিজ্যের শিকার হচ্ছে। অন্যদিকে, এশিয়ান হাতি তাদের বাসস্থানের সংকোচন, কৃষিক্ষেত্রের সম্প্রসারণ এবং অবৈধ বাণিজ্যের কারণে বিপদে আছে। হাতিদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, এবং এর প্রভাব শুধু তাদের ওপরই সীমাবদ্ধ থাকছে না; বরং পুরো বাস্তুতন্ত্রেও প্রভাব ফেলছে।

হাতিরা শুধু আমাদের বনাঞ্চলের সৌন্দর্যই নয়, বরং পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ

বিশ্ব হাতি দিবস একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ যা আমাদের পৃথিবীর অন্যতম বিশাল ও বুদ্ধিমান প্রাণী হাতিদের রক্ষায় গুরুত্বারোপ করে। এই দিবসটি আমাদের সচেতন করে যে, হাতিরা শুধু আমাদের বনাঞ্চলের সৌন্দর্যই নয়, বরং পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের সংরক্ষণে আমাদের সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা উচিত। হাতি সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে, ভবিষ্যত প্রজন্মও এই মহিমান্বিত প্রাণীকে দেখতে পাবে।

বাংলাদেশের বনাঞ্চলে ২৮৬টি এবং চিড়িয়াখানা বা সাফারি পার্কে আরও ৯৬টি হাতি রয়েছে

২০১৫ সালে বন মন্ত্রণালয় তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, যে বাংলাদেশের বনাঞ্চলে ২৮৬টি এবং চিড়িয়াখানা বা সাফারি পার্কে আরও ৯৬টি হাতি রয়েছে। সংস্থাটির ২০১৬ সালের সমীক্ষা অনুসারে, এ সংখ্যা কমে সে বছর বাংলাদেশে হাতির সংখ্যা দাঁড়ায় ২৬৮টিতে। অথচ বর্তমানে বাংলাদেশে হাতির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০০টিরও কম।

গত ১৭ বছরে মানুষের হাতে হত্যার শিকার হয়েছে ১১৮টি হাতি

দেশের বন বিভাগের তথ্য মতে, ২০০৪ থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত গত ১৭ বছরে মানুষের হাতে হত্যার শিকার হয়েছে ১১৮টি হাতি । এদিকে বেসরকারি সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, ২০২১-২২ সালে বিভিন্ন ঘটনায় ৩৪টি হাতি মারা গেছে। যদিও বন বিভাগের রেকর্ডে এ সংখ্যা মাত্র ১৬টি। অপরদিকে গত পাঁচ বছরে সারা দেশে কমপক্ষে ৫০টি হাতি হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থাগুলো।

হাতির চোরা শিকারই জীবজগতের বৃহত্তম স্থলচর প্রাণীটির প্রধান শত্রু

হাতির চোরা শিকারই জীবজগতের বৃহত্তম স্থলচর প্রাণীটির প্রধান শত্রু। কালোবাজারে হাতির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়। বাড়ি, অফিস সাজাতে, কেউ বা শখ করে সংগ্রহ করেন হাতির দাঁতসহ অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গ ।বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা হাতি নিধন ও চোরাশিকার কমাতে না পারলে হাতিও ডাইনোসরের মতো বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এ জন্য হাতি সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। আর এসব বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতেই হাতির দিবসের প্রচলন।

চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক এই চিরচেনা প্রাণী সম্পর্কে মজার ও অদ্ভুত তথ্য

লচর স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে হাতির মস্তিষ্ক সবচেয়ে বড়

আপনি-আমি হয়তো হুটহাট কোনো কাজের ডেডলাইন ভুলে যাই, বন্ধুদের জন্মদিন ভুলে যাই, ক্লাসের পড়া ভুলে যাই, তবে ডাঙার সবচেয়ে বড় প্রাণীটি কিন্তু কিচ্ছু ভোলে না! এর কারণ হলো স্থলচর স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে হাতির মস্তিষ্ক সবচেয়ে বড়। শুধু তা-ই নয়, গবেষণায় দেখা যায়, তাদের মস্তিষ্কে পিরামিডাল নিউরনের সংখ্যা মানুষের মস্তিষ্কের চেয়ে বেশি৷ এই নিউরনগুলো মানুষের তথ্য মনে রাখা ও এর অর্থ তৈরি করার কাজ করে। বহু বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও কোথায় কোন জলাশয় আছে, কবে কোন হাতি বা মানুষের সঙ্গে দেখা হয়েছিল—সব মনে থাকে তাদের। শুধু তা–ই নয়, হাতিরা তাদের সব তথ্য ভাগাভাগি করে নেয় তাদের পরবর্তী প্রজন্মের সঙ্গে।

হাতি পা দিয়ে শুধু হেঁটেই চলে না, বরং তারা শুনতেও পায় পায়ের সাহায্য

হাতিরা নাক ডাকা, গর্জন করা, কান্না করাসহ নানা ধরনের শব্দ করে থাকে। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে হাতি পা দিয়ে শুধু হেঁটেই চলে না, বরং তারা শুনতেও পায় পায়ের সাহায্য। তাদের পায়ের তলায় থাকা স্নায়ুকোষগুলো ২০ মাইল পর্যন্ত শব্দের কম্পাঙ্ক টের পায়। যে কারণে দূরে কোনো বিপদ থাকলে, তা আগেই আঁচ করতে পারে হস্তির দল।

সাঁতারেও পারদর্শী বিশালাকার প্রাণীটি

হাতিকে পানিতে খেলা করতে, নিজেদের ও অন্যদের শুঁড় দিয়ে পানি ছিটিয়ে দিতে তো আমরা সবাই দেখেছি, তবে অবাক করার বিষয় হলো সাঁতারেও পারদর্শী বিশালাকার প্রাণীটি। হাতি তার শক্তিশালী পা ব্যবহার করে সাঁতার কেটে থাকে। সাঁতার কাটা হাতিদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অনেক সময় খাবারের সন্ধানে তাদের নদী ও হ্রদ অতিক্রম করতে হয়।

সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি প্রতিরোধ করার জন্য হাতিরা নিজেদের ওপর মাটি নিক্ষেপ করে

শুনতে অবাক লাগলেও সত্য যে হাতিরা নিজেদের ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষার চেষ্টা করে! বাইরে থেকে হাতির চামড়া শক্ত দেখালেও হাতির ত্বক সংবেদনশীল, যা রোদে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি প্রতিরোধ করার জন্য হাতিরা নিজেদের ওপর মাটি নিক্ষেপ করে। প্রাপ্তবয়স্ক হাতিগুলো ছোট হাতিদের ধুলায় মাখায়। নদী থেকে বেরিয়ে আসার সময় তারা সুরক্ষার স্তর হিসেবে নিজেদের ওপর কাদামাটি মাখে।

হাতিদের গাণিতিক দক্ষতা রয়েছে

হাতিদের গাণিতিক দক্ষতা রয়েছে। জাপানের গবেষকেরা এশিয়ান হাতিদের কম্পিউটার টাচ স্ক্রিন প্যানেল ব্যবহার করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তিনটি হাতির মধ্যে একটি হাতি তার সামনে বিভিন্ন পরিমাণের সামগ্রী উপস্থাপন করার পর সঠিক উত্তরটি বেছে নিতে পেরেছিল। এক গবেষণায় দেখা যায়, এশিয়ান হাতির জন্য গড় আই কিউ. ২.১৪এবং আফ্রিকান হাতিদের ১.৬৭।

হাতিরা মৃত হাতিদের সাহায্য করার চেষ্টা করে ও অন্যদেরকে সাহায্যের জন্য ডাকে

হাতিদের বরাবরই মৃত হাতিদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে কোনো পারিবারিক সম্পর্ক না থাকলেও তারা মৃত হাতির গন্ধ নেওয়ার ও স্পর্শ করার চেষ্টা করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, হাতিরা মৃত হাতিদের সাহায্য করার চেষ্টা করে ও অন্যদেরকে সাহায্যের জন্য ডাকে। এমনকি একটি হাতি মারা যাওয়ার অনেক দিন পরও হাতিরা ফিরে এসে এবং তাদের পা ও কাণ্ড দিয়ে অবশিষ্ট হাড়গুলোকে স্পর্শ করে।

হাতিদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য তারা পেয়ে থাকে তাদের গুরুজনদের থেকে

হাতিদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য তারা পেয়ে থাকে তাদের গুরুজনদের থেকে। তাই অল্প বয়সী হাতিদের তাদের পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে তারা জীবনধারণের সব নিয়মকানুন শিখতে পারে। প্রবীণেরা তাদের জ্ঞান অল্প বয়সী হাতিদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেয়। কোথায় খাবার ও পানি পাওয়া যায় থেকে শুরু করে বিপদে পড়লে কী করতে হয়—এর সবকিছুই হাতিরা তাদের বড়দের থেকে শেখে।

হাতিরাও পিএসটিডি বা পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হয়

অনেকেই কোন ভীতিকর ও কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেলে পিএসটিডি বা পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হয়। আমরা জানি যে হাতিরা সংবেদনশীল প্রাণী। তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দৃঢ় বন্ধন। এ ছাড়া তাদের স্মৃতি দীর্ঘ। তাই সহজেই বোঝা যায় যে হাতিরা দুঃখ–কষ্ট অনুভব করতে পারে। শিকারীদের হাতে তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যার মতো ভয়াবহতা দেখে তাদের পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।

হাতি মানুষের যোগাযোগ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে

হাতি মানুষের যোগাযোগ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে। কেনিয়ার অ্যাম্বোসেলি ন্যাশনাল পার্কের গবেষকেরা দুটি ভিন্ন দলের কণ্ঠস্বর হাতিদের সামনে বাজিয়ে একটি পরীক্ষা করেছেন, যার মধ্যে একটি দল হাতিদের শিকার করে এবং অন্যটি করে না। হাতিরা যখন শিকারী দলটির কণ্ঠস্বর শোনে, তখন তারা ভয়ে আঁটসাঁট হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়া একটি এশিয়ান হাতি কোরিয়ান ভাষায় শব্দ অনুকরণ করতে শিখেছে।

হাতিরা অত্যন্ত সামাজিক ও বুদ্ধিমান প্রাণী

হাতিরা অত্যন্ত সামাজিক ও বুদ্ধিমান প্রাণী। তারা মানুষের মতোই সহানুভূতি, দয়া ও পরার্থপরতা প্রকাশ করে। একটি সমীক্ষায় গবেষকেরা দেখেছেন যে যখন একটি হাতি যন্ত্রণাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, তখন আশপাশের অন্য হাতিরা স্পর্শের মাধ্যমে সাড়া দেয় ও সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে।

রোহিঙ্গা অধ্যুষিত কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বনাঞ্চলে বিচরণকারী হাতি ছিল ৬৩টি

মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতার শিকার হয়ে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। বনবিভাগের সাড়ে ৬ হাজার একর সংরক্ষিত বনের গাছপালা আর পাহাড় কেটে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হয়। আর জ্বালানি সংগ্রহে ধ্বংস হয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশের আরও ২ হাজার একর গহীন বনাঞ্চল।এসব পাহাড় ও বনভূমি ছিল প্রাণিদের অবাধ বিচরণ ও অভয়াশ্রম। কিন্তু রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীববৈচিত্র্য। বনবিভাগের ২০১৭ সালের জরিপ অনুযায়ী, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বনাঞ্চলে বিচরণকারী হাতি ছিল ৬৩টি। কিন্তু আবাসস্থল ধ্বংস ও খাদ্য সংকটে মারা গেছে অনেক হাতি।

গত দশ বছরে সারা বিশ্ব থেকে হাতি কমেছে ৬২ ভাগ

বন্যহাতি রক্ষায় অভয়াশ্রম গড়ে তোলার পাশাপাশি, খাদ্য সংস্থানে কার্যকর পদক্ষেপের দাবি পরিবেশবিদদের। গত দশ বছরে সারা বিশ্ব থেকে হাতি কমেছে ৬২ ভাগ। অনেকেরই আশঙ্কা আগামী দিনে হাতি সংরক্ষণ এবং গ্রামবাসীদের হাতে হাতি নিধন ও চোরাশিকারীর উপদ্রব কমাতে না পারলে বিশাল দেহের ডাইনোসরের মত বিলুপ্ত হবে হাতিও। স্থলচরদের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রাণী হাতিও এখন বিলুপ্ত হওয়ার শঙ্কায়। এই নিয়ে বিশ্ব জুড়ে চলছে আলোচনা। শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রাণী বিশ্লেষকরা। 

ধারণা করা হচ্ছে, প্রতি বছর যে হারে হাতি কমছে. তাতে ১০ বছর পর চিড়িয়াখানা ছাড়া আর কোথাও এই প্রাণীর অস্তিত্ব থাকবে না। পৃথিবীতে এখন দুই ধরনের হাতি দেখা যায়। এশিয়ান হাতি এবং আফ্রিকান হাতি। আফ্রিকান হাতিদের পুরুষ এবং মহিলা উভয়েরই দাঁত থাকে। এশিয়ান হাতির মধ্যে কেবল পুরুষ হাতিরই দাঁত আছে। হাতি ১২ বছর বয়সে সন্তান প্রসব করতে পারে। তবে প্রাণী জগতের সবচেয়ে দীর্ঘতম সময় ২২ মাস গর্ভধারণের পর হাতি সন্তান প্রসব করে।


তথ্যসুত্র

বিশ্ব হাতি দিবস, Dhakapost.

১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবস, Daily-Bangladesh.

বিশ্ব হাতি দিবস পালনের উদ্যোগ, Haal.

বিভিন্ন অঞ্চলের হাতির সুরক্ষা, Kalbela.

হাতিদের সুরক্ষা ও সংরক্ষণ, Kalerkantho.