বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস (World Leprosy Day)

কুষ্ঠ রোগ কী

কুষ্ঠ রোগ বা হ্যানসেন রোগ হল মাইকোব্যাক্টেরিয়াম লেপ্রি নামক ব্যাক্টেরিয়ার কারণে সৃষ্ট দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ। এই ব্যাক্টেরিয়া ত্বকের উপর দ্রুত সংক্রমণ ছড়ায়। তাছাড়াও সংক্রমণটি স্নায়ু, শ্বাস প্রশ্বাসের নালী এবং চোখের ক্ষতি করতে পারে।

কুষ্ঠ রোগের কয়েকটি প্রকারভেদ রয়েছে

১.টিউবারকুলার লেপ্রসি ২.ইন্টারমিডিয়েট লেপ্রসি। লেপ্রোমাটাস লেপ্রসিসাধারণত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কুষ্ঠ রোগ হাতের চামড়ায় হয়ে থাকে। সংক্রমণের ফলে ত্বকে ক্ষত, স্নায়বিক ক্ষয় এবং শরীর দুর্বল এবং অসাড় বোধ হতে পারে। বাচ্চা থেকে বয়স্ক, যে কোনও বয়সের ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

কুষ্ঠ রোগের লক্ষণঃ-

কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে প্রাথমিক যে লক্ষণগুলি দেখা দেয় সেগুলি হলত্বকের রঙ পরিবর্তন, ফ্যাকাশে দাগ এবং ছোপযুক্ত ত্বক।ত্বকের উপর জ্বালা, যন্ত্রণা অনুভব হয় এবং প্রচণ্ড গরম লাগে।মাংসপেশী দুর্বল হয়ে পড়ে।হাত ও পায়ে ঘা এবং অসাড় হয়ে যায়।চুল উঠে যায়।রুষ্ক ও শুষ্ক ত্বক।পায়ের পাতার নীচের অংশে ঘা।নাক বন্ধ এবং নাক দিয়ে রক্ত পড়ে।

কুষ্ঠ রোগের জটিলতাঃ-

১.মিউটিলেশান ২.দৈহিক বিকৃতি। ৩.বন্ধ্যাত্ব । ৪.লেপ্রাফিভার । ৫.দেহের আভ্যন্তরীণ যন্ত্রসমূহের ক্রিয়া বিকৃতি ।শ্বাসকষ্ট যেহেতু নেরিংস এবং ট্রেকিয়া আক্রান্ত । * বার বার মূর্ছাভাব এবং নাক দিয়ে রক্ত স্রাব । * টিউবার কিউলোসিস বা নেফ্রাইটিস । * মিউরাইটিস । *ইরাইটিস এবং ক্ষত ।

রোগ নির্ণয় এবং পরীক্ষাঃ-

কুষ্ঠরোগের প্রধান তিনটি লক্ষণ >১। অনুভূতি শক্তি হ্রাস ।২। দেহের বিভিন্ন স্নায়ু সূত্রগুলো মোটা হয়ে যায়।৩। দ্রুত অ্যাসিড ব্যাসিলির উপস্থিতি।এই তিনটির যে কোন একটি অবশ্যই লক্ষণ হিসাবে থাকতে হবে । অ্যাসিড-দ্রুত ব্যাসিলি-স্মিয়ারগুলি একটি নোডিউল, অনুপ্রবেশ করা জায়গা, একটি পাতেহের প্রান্ত এবং অনুনাসিক শ্লেষ্মা ঝিল্লি থেকে নেওয়া উচিত তবে উপাদানটি স্মিয়ার করা হয়েছে নেবার নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে । এইসব সংগৃহীত দাগযুক্ত উপাদান পরীক্ষার জন্য পাঠালে দেখা যাবে কুষ্ঠরোগের জীবাণু পাওয়া গেছে । নাকের শ্লেষ্মা ঝিল্লি সিরাপ করে নাকের ভিতর থেকে স্মিয়ার নেওয়া উচিত এবং তারপর পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হবে । আজকাল পরীক্ষাগার পরীক্ষা দ্বারা এই রোগ চিহ্নিত হয় ।

হোমিও সমাধানঃ-

রোগ নয় রোগীকে চিকিৎসা করা হয়,১৮৭৪ খ্রিঃ ডাঃ হ্যানিম্যান এই জীবাণু আবিষ্কার করেন, সর্বাধুনিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন সফল হোমিওপ্যাথিক ঔষধ লক্ষণ সদৃশ নির্বাচন করিয়া চিকিৎসা প্রদান করিলে বিনা ক্লেশে অল্প সময়ে রোগটি সম্পূর্ণ আরোগ্য হয়।বিশেষজ্ঞ হোমিওপ্যাথি গন সাধারণত যে সকল ঔষধ কুুুষ্ঠ রোগীর জন্য ব্যবহার করে থাকেন, আর্সেনিক, আর্সেনিক আয়োড, হোয়াংনাম, পাইপার-মেথিষ্টি, ক্যালি-বাই, ব্যাডিয়েগা, চালমোগড়া তেল, হাইড্রোকোটাইল, ল্যাকেসিস, সিপিয়া, সালফার, ব্যাসিলিনাম, হিপার, সাইলিসিয়া, স্কুকুম-চক, কমোক্লেডিয়া, ক্যালোট্রেপিস ইত্যাদি ঔষধ সমূহ ।

চালমোগড়া মাদার ঔষধটি এই রোগের মহা উপকারী । ইহার বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিক প্রয়োগ । ১০০ আউন্স পানি ১ আউন্স কার্বলিক অ্যাসিড মিশিয়ে ঐ পানি আক্রান্ত স্থান ধৌত করলে এবং বাহ্যিক ভাবে চালমোগড়া তেল লাগালে উপকার পাওয়া যায় । গর্জন তেল ও চালমোগড়া তেল মালিশ করলেও উপকার পাওয়া যায় ।ক্যালোট্রেপিস জাইগানটিকা একটি মুল্যবান ভারতীয় ঔষধ ।এই ঔষধটি গোদ, কুষ্ঠ এবং তরুণ আমাশয় রোগে খুব ভাল কাজ করে । ইহা চর্মের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং একটি উৎকৃষ্ট ঘর্মকারক ঔষধ । এমন কি ঘর্মহীনতার লক্ষণ প্রকাশ পায় সেখানে যে কোন রোগে ক্যালোট্রেপিস জাইগানটিকা সহ আরো অনেক মেডিসিন লক্ষণের উপর আসতে পারে তাই ঔষধ নিজে নিজে ব্যবহার নাা করে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কুষ্ঠ নির্মূলে আমাদের করণীয়

এত কিছুর পরেও বছরওয়ারি নতুন রোগী শনাক্তের পরিসংখ্যানের দিকে নজর দিলে কি মনে হয় না, আমরা দশ বছর ধরে এক জায়গায় স্থবির হয়ে দাঁডিয়ে আছি? মনে রাখা দরকার, নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যার বিচারে আমরা বিশ্বে শীর্ষ পাঁচের মধ্যে অবস্থান করছি। কাজেই আমরা যদি কুষ্ঠমুক্ত দেশ গড়তে চাই, আমাদের এ জায়গাটায় বিশেষভাবে মনোযোগ নিবদ্ধ করা দরকার। রোগের বিস্তার ঠেকাতে হবে, নতুন নতুন রোগী সৃষ্টির রাস্তা বন্ধ করতে হবে। তা কীভাবে সম্ভব? দেখা গেছে, মাল্টি ড্রাগ থেরাপি শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই রোগীর রোগ ছড়ানোর ক্ষমতা লোপ পায়। এছাড়া একজন কুষ্ঠ রোগীকে রোগের প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসার আওতায় আনা গেলে তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারে, কোনোরূপ অঙ্গহানির আশঙ্কা থাকে না। কাজেই আমাদের যেটা দরকার তা হলো, দেশের কুষ্ঠপ্রবণ এলাকাগুলোর সম্ভাব্য কুষ্ঠ রোগীদের যথাসম্ভব রোগের প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসার জন্য একটি ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নেয়া। এজন্য কুষ্ঠের লক্ষণাদি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে ব্যাপকভিত্তিক গণপ্রশিক্ষণ ও প্রচারণা কার্যক্রম হাতে নিতে হবে।

স্কুল-কলেজ ও মসজিদ-মাদ্রাসার মতো প্লাটফর্ম এবং এলাকার সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকেও এ উদ্দেশ্যে কাজে লাগানো যেতে পারে। এলাকার প্রকৃত ডাক্তারদের পাশাপাশি গ্রাম্য ডাক্তার ও ওষুধের দোকানদারের মতো লোকজন, যাদের কাছে গাঁওগেরামের আর্থিকভাবে অসচ্ছল লোকেরা বিপুল সংখ্যায় ভিড় জমায়, কুষ্ঠ রোগী শনাক্তকরণ প্রকল্পের অধীনে তাদেরকেও প্রশিক্ষণের আওতায় আনা যেতে পারে। এতে কোনো লোকের মধ্যে কুষ্ঠের আলামত দেখা দিয়েছে বলে প্রতীয়মান হলেই তাকে কালবিলম্ব না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকেন্দ্র কিংবা হাসপাতালে যোগাযোগের জন্য পরামর্শ দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। জনসচেতনতা সৃষ্টিতে দেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলোও বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। সর্বোপরি এটি যেহেতু মূলত একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা, সামগ্রিক পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়নে জনস্বাস্থ্যবিদদের সক্রিয়ভাবে কাজে লাগানো গেলে ভালো ফল আশা করা যেতে পারে।

২৯ জানুয়ারি, রোববার। বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস। কুষ্ঠ একটি জীবাণুঘটিত রোগ। সঠিক চিকিৎসায় কুষ্ঠ রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয়। দেশের সরকারি হাসপাতাল ও এনজিও দ্বারা পরিচালিত কুষ্ঠ ক্লিনিকে বিনামূল্যে এ রোগের চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এই রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। যদিও এই রোগের টিকা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি।দি লেপ্রোসী মিশন ইন্টারন্যাশনাল-বাংলাদেশের তথ্যমতে-  দেশে ৩৫ হাজার মানুষ বর্তমানে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত। সরকার দেশে বিনামূল্যে কুষ্ঠ রোগীদের ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা দিলেও তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছে।

 কুসংস্কারের কারণে অনেকেই আক্রান্ত হওয়ার পরও চিকিতৎসা কেন্দ্রে যেতে চান না বাংলাদেশে অনেক এলাকায় এখনো অনেক মানুষ মনে করে এই রোগটি অভিশাপের ফল। দি লেপ্রোসী মিশন ইন্টারন্যাশনাল-বাংলাদেশ বলছে- এজন্য গণসচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন।কুষ্ঠরোগ হ্যানসেনের রোগ নামেও পরিচিত। এ রোগে মূলত স্নায়ুর মারাত্মক ক্ষতি ও বিকৃতি হয়। এছাড়াও ত্বকে দেখা দেয় বিশেষ ধরনের ঘা।কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ছোঁয়া, ব্যথা এবং তাপমাত্রার প্রতি শরীরের সংবেদনশীলতা হারিয়ে ফেলে। ত্বকে ক্ষত হওয়া, পেশি দুর্বল হয়ে যাওয়া এবং হাত ও পায়ে অসাড়ভাব কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ।চিকিৎসাশাস্ত্রে, এই রোগটি সংক্রামক রোগ। মাইকোব্যাকটেরিয়াম লেপ্রি কুষ্ঠ রোগের ব্যাকটেরিয়া। এই রোগে বিভিন্ন অঙ্গের স্নায়ু, শ্বাসনালীর উপরের অংশ ও নাকের ভেতরের আস্তরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

যারা কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের কথা ভেবে ১৯৫৪ সাল থেকে পালন করা শুরু হয় বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস। এছাড়াও রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো ও রোগীকে ঘিরে সমাজের বৈষম্যের অবসান কমানোর ডাকও দেয়‌ বিশেষ দিনটি। কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সম্মান করার জন্য একসঙ্গে কাজ করাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় দিবসটিতে।

প্রতিবছর জানুয়ারির শেষ রোববার বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস হিসাবে পালন করা হয়। সে হিসাবে আজ বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস। কুষ্ঠরোগের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এ দিবস পালনের লক্ষ্য। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘এখনই কাজ শুরু করি, কুষ্ঠরোগ নির্মূল করি’।

ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব অ্যান্টি-লেপ্রসি অ্যাসোসিয়েশনের (আইলেপ) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রাউল ফোলেরো বিশ্বব্যাপী কুষ্ঠরোগবিষয়ক ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে এবং কুষ্ঠরোগের প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ১৯৫৪ সালে দিবসটি উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক কুষ্ঠবিরোধী সংগঠনগুলোর আন্তর্জাতিক ফেডারেশন ‘আইলেপ’, যা ১৩টি আন্তর্জাতিক এনজিওর সমন্বয়ে গঠিত, এই দিবসটি পালনে উদ্যোগ নেয়। অতীতে কুষ্ঠরোগ ও কুষ্ঠরোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের অভিশপ্ত ও অস্পৃশ্য বলে গণ্য করা হতো এবং অনেককেই দ্বীপান্তরিত, বনবাস, গৃহচ্যুত করা হতো। সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্কগুলো শিথিল হয়ে যেত। হাজার হাজার কুষ্ঠরোগাক্রান্ত মানুষ মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হতো। ১৮৭৩ সালে নরওয়ের চিকিৎসাবিজ্ঞানী ডা. আরমার হ্যানসেন কুষ্ঠরোগের জীবাণু ‘মাইকোব্যাকটেরিয়াম লেপ্রি’ আবিষ্কার করেন। এ আবিষ্কারের ফলে প্রমাণিত হয়, কুষ্ঠ একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ; জন্মগত, বংশগত বা অভিশাপের ফল নয়।

বিশ্বে কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণে অনেক অগ্রগতি হয়েছে

মাল্টি ড্রাগ থেরাপি (এমডিটি) প্রবর্তনের পর থেকে বিশ্বে কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, আশির দশকে যেখানে বিশ্বে কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা ছিল ৫২ লাখ, তা এখন দুই লাখে নেমে এসেছে। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় কুষ্ঠরোগের প্রাদুর্ভাব এখনো রয়ে গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ, ব্রাজিল, ভারত, নেপাল, মোজাম্বিক, এঙ্গোলা, কঙ্গো ও তানজানিয়ায় কুষ্ঠরোগাক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে কুষ্ঠরোগের চিকিৎসা বিনামূল্যে করা হলেও এবং এটি নিয়মিত চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য রোগ হওয়া সত্ত্বেও এখনো রোগটি জনস্বাস্থ্য সমস্যারূপে রয়ে গেছে। দ্য লেপ্রসি মিশন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর মতে, দেশে প্রতিবছর ৩৫০০ থেকে ৪০০০ নতুন কুষ্ঠরোগাক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হচ্ছে। এদের মধ্যে ৮-১০ শতাংশ সময়মতো চিকিৎসার অভাবে পরবর্তীকালে পঙ্গু হয়ে যায়। জাতীয় কুষ্ঠ রোগ নির্মূল কর্মসূচি দেশের ১২ জেলাকে কুষ্ঠ রোগের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। এগুলো হলো-রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, মেহেরপুর, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। এসব জেলায় প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে পাঁচজন বা তার অধিক কুষ্ঠরোগী শনাক্ত করা হয়েছে।

কুষ্ঠ সাধারণত চিকিৎসাবিহীন সংক্রামক ধরনের রোগীর হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায় এবং আক্রান্ত রোগীর প্রান্তিক স্নায়ুর কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। ফলে আঙুল বাঁকা হওয়া, মুখে প্যারালাইসিস, বেদনাহীন ঘা ইত্যাদি বিকলাঙ্গতা দেখা দেয় এবং রোগীর শারীরিক সমস্যার চেয়েও মানসিক ও সামাজিক সমস্যা প্রকটভাবে দেখা দেয়। চামড়ার অবশ দাগ দিয়ে এই রোগ শুরু হয়, অনেক সময় দানা গুটিও দেখা দেয়। চিকিৎসকদের মতে, দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতার অধিকারী মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। দারিদ্র্য, অপুষ্টি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস, প্রচুর আলো-বাতাসের অভাব প্রভৃতি এই রোগ সংক্রমণের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়।

 বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস কুষ্ঠ বা হ্যানসেনস রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের শেষ রবিবার আন্তর্জাতিকভাবে পালন করা হয়। এই তারিখটি ফরাসি মানবতাবাদী রাউল ফোলেরেউ মহাত্মা গান্ধীর জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, যিনি কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। ১৯৫৪ সালে দিবসটি পালন করা শুরু হয়। কুষ্ঠ রোগ বিশ্বের প্রাচীনতম নথিভুক্ত রোগগুলোর মধ্যে একটি। এটি একটি সংক্রামক দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা স্নায়ুতন্ত্রকে কাবু করে, বিশেষ করে শরীরের শীতল অংশের স্নায়ুগুলো হাত, পা ও মুখ।দি লেপ্রোসী মিশন ইন্টারন্যাশনাল-বাংলাদেশের তথ্যমতে দেশে ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত। সরকার দেশে বিনামূল্যে কুষ্ঠ রোগীদের ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা দিলেও তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। আর এর কারণ হিসেবে সংস্থাটি বলছে- অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের কারণে অনেকেই আক্রান্ত হওয়ার পরও চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে চান না।

বছরে আক্রান্ত প্রায় ৪ হাজার মানুষ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভয়, কুসংস্কার ও লোকলজ্জায় চিকিত্সা না নেওয়াই বিকলাঙ্গ হওয়ার মূল কারণ। সময়মতো ও সঠিক চিকিত্সা নিলে এটি পুরোপুরি দূর হতে পারে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় কুষ্ঠ কর্মসূচির তথ্য মতে, গত পাঁচ বছরে (২০১৭-২১) দেশে কুষ্ঠ রোগী শনাক্ত হয় ১৬ হাজার ৭১৭ জন। এর মধ্যে পাঁচ বছরের নিচে এক হাজার সাত শিশু। আক্রান্তদের মধ্যে অঙ্গহানি ঘটেছে এক হাজার ১৩৮ জনের। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আজ সারা দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস। দিবসের এবারের প্রতিপ্রাদ্য ‘এখনই কাজ শুরু করি, কুষ্ঠ রোগ নির্মূল করি’। প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের শেষ রবিবার দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। 

কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ

কুষ্ঠ বা হ্যানসেন রোগটি ম্যাইকো ব্যাকটেরিয়াম লেপরের কারণে ঘটে থাকে। এটি ত্বক ও স্নায়ুর একটি সংক্রমণ। এই ব্যাধি ত্বক, স্নায়ু, চোখ ও শ্বাসযন্ত্রে প্রভাব ফেলে। প্রাথমিক উপসর্গগুলো হলো চামড়ায় ফ্যাকাসে ছোপ দেখা দেওয়া, ত্বকে ছোট ছোট ফুসকুড়ির মতো হয়। চামড়া শুষ্ক ও শক্ত হয়ে যায়। পায়ের পাতার নিচের অংশে ঘা হয়। মুখের বা কানের কিছু স্থানে ফুলে যায়। চোখের পাপড়ি ও ভ্রূ পড়ে যায়। সংক্রমিত স্থানে অসাড়তা অনুভূত হয় ও ঘাম দেখা দেয়। অনেকে পঙ্গু হয়ে যায়। পেশি দুর্বল হয়ে যায়। মুখের স্নায়ুতে প্রভাব পড়ায় অন্ধত্বের ঝুঁকি বাড়ে।

কুষ্ঠ রোগীদের জন্য দেশে সরকারি হাসপাতাল রয়েছে তিনটি। একটি ঢাকায়, একটি নীলফামারীতে ও একটি সিলেটে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় কুষ্ঠ কর্মসূচি শাখার সার্ভেইল্যান্স মেডিক্যাল অফিসার ডা. আদনান রাসেল বলেন, দেশের কুষ্ঠ রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিত্সার সঙ্গে ওষুধ দিচ্ছে সরকার। যাদের পায়ে সমস্যা, তাদের বিনা মূল্যে বিশেষ জুতা বা ক্রাচ দেওয়া হয়। প্রতিবন্ধীদের ভাতা দেওয়া হচ্ছে। 

মৌলভীবাজারে সবচেয়ে বেশি রোগী : দেশের ৯টি জেলায় কুষ্ঠ রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে সীমান্তবর্তী জেলা চা-বাগান ও হাওরাঞ্চল অধ্যুষিত মৌলভীবাজার তালিকার ১ নম্বরে রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে দিনাজপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, পঞ্চগড়, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট ও মেহেরপুর। এসব জেলায় প্রতি লাখ মানুষের মধ্যে পাঁচজন কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত। মৌলভীবাজারের সির্ভিল সার্জন চৌধুরী জালাল উদ্দিন মোর্শেদ জানান, ২০২২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, জেলায় বর্তমানে এই রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৬৬০ জন। এর মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্কের সংখ্যা বেশি।

জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাজেট খুব কম : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘স্কিন টু স্কিন এবং শ্বাসনালির মাধ্যমে কুষ্ঠ ছড়ায়। এটির আবার ছড়াতে পাঁচ থেকে ১০ বছর সময়ও লেগে যেতে পারে। আমাদের দেশে যে পরিমাণ কুষ্ঠ রোগীর কথা বলা হচ্ছে, বাস্তবে এ সংখ্যা আরো বেশি। সঠিক চিকিৎসা নিলে ছয় মাসেই রোগী কুষ্ঠমুক্ত হতে পারে। দেরিতে পঙ্গুত্বের ঝুঁকি থাকে।’ তিনি বলেন, এই রোগের বিষয়ে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাজেট মাত্র ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা, যা খুব কম। এত কম বাজেটে ২০৩০ সালে কুষ্ঠ রোগ নির্মূল সম্ভব নয়।

আসুন, কুষ্ঠমুক্ত দেশ গড়ে তুলি

কুষ্ঠ দূরীকরণে বিশ্বের দেশগুলোকে ক্ষমতায়ন করা ও প্রকৃত প্রতিশ্রুতির জন্য উত্সাহ প্রদান করার বিষয়টিকে এই বছরের প্রতিপাদ্যে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এই বছরের প্রচারাভিযানে সরকারসমূহ, নীতিনির্ধারকবৃন্দ, দাতাগোষ্ঠীসমূহ এবং বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সম্প্রদায়কে কুষ্ঠমুক্ত বিশ্ব অর্জনের জন্য কুষ্ঠ দূরীকরণ প্রচেষ্টাকে অধিকতর গুরুত্ব প্রদানের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এই বছরের প্রতিপাদ্যতে তিনটি মূল বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে। কুষ্ঠ দূরীকরণ সম্ভব—কুষ্ঠ সংক্রমণ বন্ধে এবং এই রোগকে পরাজিত করতে আমাদের ক্ষমতা ওটুট রয়েছে। এখনই সক্রিয় হওয়া দরকার—কুষ্ঠ সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের দরকার সম্পদ ও প্রতিশ্রুতি। কুষ্ঠ দূরীকরণকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করা দরকার। যাদের পৌঁছানো যায় না তাদের কাছে পৌঁছানো। কুষ্ঠ প্রতিরোধযোগ্য ও চিকিত্সাযোগ্য। কুষ্ঠের কারণে দুর্ভোগের প্রয়োজন নেই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে চিহ্নিত হয়। তাদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ মানসিক সমস্যায় পতিত হয়, এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও লক্ষ করা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যেমন এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকাতে অনেকেই রয়েছেন যারা এই রোগের কারণে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।সুইজারল্যান্ড-ভিত্তিক কুষ্ঠ-বিরোধী সংগঠনসমূহের আন্তর্জাতিক ফেডারেশন ‘আইলেপ’, যা ১৩টি আন্তর্জাতিক এনজিওর সমন্বয়ে গঠিত, এই দিবসটি পালনে উদ্যোগ নেয়। আইলেপের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা  রাউল ফোলেরো বিশ্বব্যাপী কুষ্ঠরোগবিষয়ক ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে ও কুষ্ঠরোগের প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ১৯৫৪ সালে দিবসটি উদ্যাপনের জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

কুষ্ঠ মানব ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীন রোগ। মানবসভ্যতার বিকাশ ও সামাজিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে উন্নত দেশগুলোতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব একবারেই কমে এসেছে। কিন্তু আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কুষ্ঠরোগের প্রাদুর্ভাব এখনো রয়ে গেছে।  বর্তমানে বাংলাদেশসহ ব্রাজিল, ভারত, নেপাল, মোজাম্বিক, এঙ্গোলা, কঙ্গো এবং তানজানিয়ায় কুষ্ঠরোগাক্রান্ত ব্যক্তিরা শনাক্ত হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

১৮৭৩ সালে নরওয়ের চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. আরমার হ্যানসেন কুষ্ঠরোগের জীবাণু ‘মাইকোব্যাকটেরিয়াম লেপ্রি’ আবিষ্কার করেন।  এই আবিষ্কারের ফলে প্রমাণিত হয় যে, কুষ্ঠ একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ, জন্মগত, বংশগত বা অভিশাপের ফল নয়। হাজার হাজার বছর ধরে কুষ্ঠরোগ ও কুষ্ঠরোগাক্রান্ত ব্যক্তিগণকে অভিশপ্ত এবং অস্পৃশ্য বলে গণ্য করা হতো এবং অনেককেই দ্বীপান্তরিত, বনবাস, গৃহচ্যুত করা হতো। সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্কগুলো শিথিল হয়ে যেত। হাজার হাজার কুষ্ঠরোগাক্রান্ত মানুষ মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হতো।চিকিত্সকদের মতে, কুষ্ঠরোগ একটি মৃদু সংক্রামক রোগ। দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতার অধিকারী মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। দারিদ্র্য, অপুষ্টি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস, প্রচুর আলো বাতাসের অভাব ইত্যাদি এই রোগ সংক্রমণের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়।

কুষ্ঠ সাধারণত আক্রান্ত রোগীর প্রান্তিক স্নায়ুর কার্যকারিতা নষ্ট করে। ফলে আঙুল বাঁকা হওয়া, মুখের প্যারালাইসিস, বেদনাহীন ঘা ইত্যাদি বিকলাঙ্গতা দেখা দেয় এবং রোগীর শারীরিক সমস্যার চেয়েও মানসিক ও সামাজিক সমস্যা ও বৈষম্য প্রকটরূপে দেখা দেয়।  চামড়ার অবশ দাগ দিয়ে এই রোগ শুরু হয়, অনেক সময় দানা গুঁটিও দেখা দেয়। কুষ্ঠরোগ প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত হলে ও চিকিৎসার আওতায় এলে কুষ্ঠজনিত প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। ব্যাপক সচেতনতা কার্যক্রম এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

গুরুত্বের বিষয় হলেও বিভিন্ন কারণে কুষ্ঠ বিষয়টি বাংলাদেশে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। করোনাকালীন সময়ে এটি আরো গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে। বাংলাদেশে কুষ্ঠরোগের চিকিৎসা বিনা মূল্যে করা হলেও এবং নিয়মিত চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য রোগ হওয়া সত্ত্বেও এখনো রোগটি জনস্বাস্থ্য সমস্যারূপে রয়ে গেছে। দ্য লেপ্রসি মিশন ইন্টারন্যাশনাল—বাংলাদেশ (টিএলএমআই-বি)-এর মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতি বছর প্রায় ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার নতুন কুষ্ঠরোগাক্রান্ত ব্যক্তি বাংলাদেশে শনাক্ত হচ্ছে। এদের  মধ্যে প্রায় ৮-১০ শতাংশ সময়মতো চিকিত্সার অভাবে পরবর্তী সময়ে পঙ্গু হয়ে যায়। এর ফলে এক দুর্বিষহ জীবনের সূত্রপাত হয়। 

বাংলাদেশ কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণে তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, তবে এক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। কম গুরুত্ব দেওয়ার কারণে এই খাতে বাজেট প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম, বাজেট স্বল্পতার কারণে কুষ্ঠ বিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাজেট স্বল্পতার জন্য স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিত্সকদের দক্ষতার উন্নয়ন ঘটানো যাচ্ছে না। কুষ্ঠবিষয়ক প্রায় ৮০ ভাগ স্বাস্থ্যসেবা এনজিও কর্তৃক পরিচালিত হাসপাতালগুলো দিয়ে থাকে। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে তাদের এই সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা যায়। এই পরিস্থিতিতে সরকার এগিয়ে না এলে সমস্যা বাড়বে, প্রতিবন্ধিতা আরো বেড়ে যাবে।

কুষ্ঠ সমস্যা সমাধানের জন্য জাতীয় বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ থাকা দরকার।

কুষ্ঠ সমস্যা সমাধানের জন্য জাতীয় বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ থাকা দরকার। বাজেটে উপজেলা-ভিত্তিক আর্থিক বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন, যাতে করে সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জনরা নিজেদের প্রয়োজন মাফিক বরাদ্দকৃত অর্থ কুষ্ঠবিরোধী কার্যক্রমে ব্যয় করতে পারেন।কুষ্ঠ বিষয়ে গণমাধ্যম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। কুষ্ঠ আমাদের জাতীয় দুর্ভোগের কারণ—এই বিষয়টা আমলে নিয়ে কুষ্ঠ বিষয়ে গণমাধ্যমের ইতিবাচক বার্তা প্রচার এই রোগ নির্মূল কার্যক্রমকে গতিশীল করতে এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখেতে পারে। কুষ্ঠ রোগ জীবাণু দ্বারা হয়, অভিশাপ নয়। নিয়মিত চিকিৎসা নিয়ে এই রোগে আক্রান্তরা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন। সমাজের প্রতিটি মানুষের জন্য সমান স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যাতে নিশ্চিত হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় বার্তা প্রচার করা উচিত। কোথায় চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় সে বিয়য়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত বার্তা এই রোগ নির্মূলের  ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কুষ্ঠ বিষয়টা যেন গুরুত্ব পায় সে বিষয়ে গণমাধ্যমের জোরালো ভূমিকা থাকা উচিত।

Taken From Daily Naya Diganta.

কুষ্ঠমুক্ত দেশ গঠনে একযোগে কাজ করার আহবান

বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস উপলক্ষ্যে আয়েজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা কুষ্ঠকে অন্যতম জাতীয় স্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করে একে নির্মূল করে কুষ্ঠমুক্ত দেশ গঠনে সংশ্লিষ্ট সকলকে একযোগে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন। বক্তারা বলেন, এখনও প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ৩৫০০-৪০০০ লোক নতুন করে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এদের মধ্যে প্রায় শতকরা ৮ ভাগ নারী-পুরুষ প্রতিবন্ধিতার শিকার হচ্ছে এবং এখনও কুষ্ঠ আক্রান্ত ব্যক্তিগণ সামাজিক বৈষম্য, অপবাদ ও কুসংস্কারের শিকার হচ্ছে। তাই কুষ্ঠ রোগ সম্পূর্ণ উচ্ছেদ না হওয়া অবধি; অর্থাৎ কুষ্ঠরোগ, কুষ্ঠ সংক্রমণ, কুষ্ঠজনিত প্রতিবন্ধিত্ব এবং কুষ্ঠ আক্রান্তের প্রতি অপবাদ ও বৈষম্য শূন্যের কোঠায় নামিয়ে না আনা পর্যন্ত আমাদের সকলের একযোগে কাজ করার আহবান জানান তারা।

কুষ্ঠ এখনো দুর্ভোগের কারণ

কুষ্ঠ মানব ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীন রোগ। মানবসভ্যতার বিকাশ ও সামাজিক উন্নতির সাথে সাথে উন্নত দেশগুলোতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব একেবারেই কমে এসেছে। কিন্তু আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কুষ্ঠরোগের প্রাদুর্ভাব এখনো রয়ে গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশসহ ব্রাজিল, ভারত, নেপাল, মোজাম্বিক, এঙ্গোলা, কঙ্গো ও তানজানিয়ায় কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত ব্যক্তিরা শনাক্ত হচ্ছে।

কুষ্ঠ বিষয়ে গণমাধ্যমের ইতিবাচক বার্তা প্রচার এ রোগ নির্মূল কার্যক্রমকে গতিশীল করতে পারে। কুষ্ঠ রোগজীবাণু দ্বারা হয়, অভিশাপ নয়। নিয়মিত চিকিৎসা নিয়ে এ রোগে আক্রান্তরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। সমাজের প্রতিটি মানুষের জন্য সমান স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যাতে নিশ্চিত হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় বার্তা প্রচার করা উচিত। কোথায় চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় সে বিয়য়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত বার্তা এই রোগ নির্মূলের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কুষ্ঠ বিষয়টি যেন গুরুত্ব পায় সে বিষয়েও গণমাধ্যমের জোরালো ভূমিকা থাকা উচিত।আমাদের একযোগে অসহায়, দরিদ্র, নিপীড়িত কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত মানুষগুলোর জন্য কাজ করতে হবে। কারণ এতগুলো মানুষকে বঞ্চিত রেখে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত প্রতিবন্ধী মানুষগুলোর পুনর্বাসন এবং সঠিক যতেœর জন্য তাদের পাশে দাঁড়ানো একান্ত প্রয়োজন, যেন আক্রান্ত ব্যক্তিরা পরিপূর্ণ মর্যাদা ও অধিকারের সাথে সমাজে মাথা উঁচু করে চলতে পারেন।

কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও প্রতিবন্ধীরা দেশের বোঝা নয়, তাদেরও রয়েছে সব নাগরিক সুযোগ সুবিধা পাওয়ার অধিকার। আমাদের জাতীয় সংবিধানে প্রতিটি নাগরিকের সমান সুবিধা নিশ্চিত করে। তাই কোনো নাগরিকের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। অধিকারকর্মীরা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর কুষ্ঠমুক্ত দেশ গঠনের সাম্প্রতিক ঘোষণা বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

রোগীর অধিকার ও সামাজিক মর্যাদা রক্ষায় সচেতন হতে হবে

কুষ্ঠ রোগের নাম শুনলে আজও আতঙ্ক ছড়ায়। কারও এমন রোগ হয়েছে শুনলে আজও অনেকে সেই ব্যক্তির চারপাশে ঘেঁষতে চান না, এড়িয়ে থাকেন। কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক যন্ত্রণা তো থাকেই, পাশাপাশি ওই ব্যক্তি ও তার পরিবারকে নানারকম সামাজিক এবং মানসিক সমস্যায় পড়তে হয়।মানসিক এই জন্য, কারণ কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি অনেক ক্ষেত্রে অচ্ছূত হিসেবে গণ্য হন। এই রোগের কারণে ত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হয়, ত্বকে পচন ধরে। তাই কুষ্ঠ রোগীকে অনেকে ঘেন্না করে। কিন্তু মনে রাখা দরকার কুষ্ঠ কোনও পাপ নয় এবং এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি অপরাধী নন। কুষ্ঠ একটি জীবাণুবাহিত সংক্রামণ। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত এবং উপযুক্ত চিকিৎসায় এই রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব। তাই মানুষের মধ্যে এই বিষয়ে সঠিক জ্ঞান থাকা জরুরি।

বাংলাদেশের বিশিষ্ট গবেষক ও জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডা.এম এম মাজেদ তার কলামে লিখেন… কুষ্ঠ মানব ইতিহাসের সবচেয়ে পুরোনো রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম। পৃথিবীর তিনটি প্রধান ধর্ম, যথা- হিন্দু, খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থগুলোতে এ রোগের উল্লেখ আছে। পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতার লীলাভূমি হিসেবে পরিচিত মিসর, চীন, গ্রিক, রোম, ভারত ইত্যাদি প্রায় সব কটি দেশের ইতিকথায় এর বিবরণ পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, এ রোগের ইতিহাস চার হাজার বছরের পুরনো।

এ রোগের সবচেয়ে পুরনো কংকাল-নির্ভর প্রমাণ মেলে ভারতবর্ষে, যা প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব দুই হাজার সালের সময়কার। তবে, রোগটির সাথে মানুষের পরিচয় কয়েক হাজার বছর আগের হলেও, এর প্রকৃত কারণ তাদের জানা ছিল না। তেমনি এর কোনো চিকিৎসাও তাদের জানা ছিল না। ফলে, শত সহস্র বছর ধরে এ রোগকে কেন্দ্র করে চলে আসে নানাবিধ অলীক ধারণা ও কুসংস্কার, যার নির্মম শিকার হয়ে সমাজে যুগের পর যুগ, বছরের পর বছর নিপীড়িত, নিগৃহীত হয়েছে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা। কোথাও এটাকে মনে করা হয়েছে বিধাতার অভিশাপ, কোথাও বা পাপাচারের ফসল।

এ রোগের কার্যকারণ বা প্রতিকারের বিষয়ে তেমন কিছু না জানলেও লোকজন এটুকু বুঝতে পেরেছিল যে, এ রোগ ছোঁয়াচে, জন থেকে জনান্তরে ছড়াতে পারে। ফলে, সমাজের স্বার্থপরতার বলি হয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হতে হয়েছে অস্পৃশ্য, কোথাও সমাজচ্যুত, এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে লোকালয় থেকে নির্বাসিত। আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে আজ আমরা কুষ্ঠের কারণ, এর উপসর্গ ও ক্রমধারা সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল।এর কার্যকর চিকিৎসাও আমাদের আয়ত্তে। এক্ষেত্রে মাইলফলক ছিল ১৮৭৩ সালে নরওয়ের বিজ্ঞানী গেরহার্ড হ্যানসেনের যুগান্তকারী আবিষ্কার। এই কৃতী বিজ্ঞানী গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেন, কুষ্ঠ আসলে একটি জীবাণুঘটিত রোগ, যা একটি ধীরলয়ে বংশ বিস্তার করা ব্যাকটেরিয়ার কারণে ঘটে। এই ব্যাকটেরিয়াটি আজ আমাদের কাছে মাইকোব্যাকটেরিয়াম লেপ্রে নামে পরিচিত।

সেই থেকে এ রোগটিও হ্যানসেনস ডিজিজ নামে পরিচিতি লাভ করে।আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, প্রতি লাখে পাঁচজন বা তার অধিক কুষ্ঠ রোগী পাওয়া গেলে তাকে উচ্চ ঝুঁকি বলতে হবে।জাতীয় কুষ্ঠ রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সূত্র মতে, দেশে ২০২১ সালে মোট কুষ্ঠরোগী ছিলেন ২ হাজার ৮৭২ জন। তাদের মধ্যে রোগটির কারণে শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েছেন ১৬৫ জন। ২০২০ সালে মোট ২ হাজার ৭২৪ রোগীর মধ্যে প্রতিবন্ধী হয়েছেন ১৩৭ জন। ২০১৯ সালে মোট কুষ্ঠরোগী ছিলেন ৩ হাজার ৬৩৮ জন এবং প্রতিবন্ধী হয়েছেন ২৫২ রোগী। ২০১৮ সালে মোট রোগী ছিলেন ৩ হাজার ৭২৬ জন।

তাদের মধ্যে প্রতিবন্ধী হয়েছেন ২৯৭ জন। ২০১৭ সালে ২ হাজার ৭৫৭ রোগীর মধ্যে ২৯৬ জন, ২০১৬ সালে ৩ হাজার ১ রোগীর মধ্যে ১৯২ জন।২০১৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মোট কুষ্ঠ রোগীর ৬০ শতাংশ রয়েছে ভারতে। তারপরেই রয়েছে ব্রাজিল-১৩ শতাংশ। কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা অনুপাতে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।২০১১ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১০ শতাংশে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে প্রতি ১০ হাজার জনগোষ্ঠীর মধ্যে নথিভুক্ত কুষ্ঠ রোগীর হার একজনের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। এবং ১৯৯৮ সালে ১১ হাজার ৯১ রোগীর মধ্যে ১ হাজার ২৫২ জন প্রতিবন্ধী হয়েছেন।১৯৮৫ সালে ৫২ হাজার ১৬১ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ ছিল প্রতিবন্ধী। দেশে কুষ্ঠ রোগী কমলেও এখনো এ রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে ৯ জেলা।

অন্যান্য জেলার তুলনায় এসব জেলায় সর্বোচ্চ কুষ্ঠ রোগী শনাক্ত হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোর মধ্যে রংপুর বিভাগের ছয়টি জেলা রয়েছে। জেলাগুলো হলো- রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও পঞ্চগড়। এ ছাড়া মেহেরপুর, মৌলভীবাজার ও জয়পুরহাটেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কুষ্ঠ রোগী শনাক্ত হচ্ছে।এসব জেলায় প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে পাঁচজন বা তার অধিক কুষ্ঠ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।আমাদের দেশে সাম্প্রতিক সময়ে প্রতি বছর প্রায় ৩৫০০ কুষ্ঠ রোগী শনাক্ত হচ্ছে এবং এর মধ্যে প্রায় ৪০০ রোগী সময়মতো ও সঠিক চিকিৎসার অভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে যাচ্ছে।গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে কুষ্ঠমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন।

কুষ্ঠ রোগের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে দেশের ৯ জেলায়

সংক্রামক কুষ্ঠ রোগের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে দেশের ৯ জেলায়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পাওয়ায় এ রোগে আক্রান্তের ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন। ২০২১ সালের তুলনায় গত বছর কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।১০ বছর ধরে দেশে বছরে গড়ে তিন হাজার কুষ্ঠ রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। এ রোগের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জেলাগুলো হলো- মৌলভীবাজার, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, পঞ্চগড়, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট ও মেহেরপুর। এসব জেলায় প্রতি লাখে পাঁচজন বা তার বেশি মানুষ কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। মধ্যম ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকাসহ ছয় জেলা। নিম্ন ঝুঁকিতে আছে আরও ৩৪টি জেলা।

চিকিৎসকরা বলছেন, প্রথম পর্যায়ে শনাক্ত ও সুচিকিৎসা পেলে পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুষ্ঠ রোগ নির্মূলে সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি।স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত বছর দেশে ২ হাজার ৯৭৪ জনের কুষ্ঠ শনাক্ত হয়। এর মধ্যে ২০০ জন প্রতিবন্ধিতার শিকার হয়েছেন। ২০২১ সালে শনাক্তের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৮৭২। তাঁদের মধ্যে শারীরিক প্রতিবন্ধিতার শিকার হয়েছেন ১৬৫ জন।২০২০ সালে ২ হাজার ৭২৪ রোগীর মধ্যে প্রতিবন্ধিতার শিকার হন ১৩৭ জন। তবে ২০১৯ সালে কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। ওই বছর ৩ হাজার ৬৩৮ জনের কুষ্ঠ শনাক্ত হয়। প্রতিবন্ধিতার শিকার হন ২৫২ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুষ্ঠ রোগী হিসেবে শনাক্ত হওয়ার ভয়ে আক্রান্ত অনেকে চিকিৎসকের কাছে যান না। কেউ কেউ কবিরাজসহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নেন। এসব কারণে সব রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনতে সময় লাগে। ততদিনে রোগ অনেক দূর গড়ায়। এতে অনেকেই প্রতিবন্ধিতার শিকার হন। এ বিষয়ে মানুষের মাঝে আরও সচেতনতা বাড়াতে হবে।

কুষ্ঠ জীবাণুঘটিত রোগ, অভিশাপের ফল নয়

কুসংস্কারই’ কুষ্ঠ চিকিৎসা ও প্রতিরোধে মূল প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। অথচ সময়মতো ও সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে এটি একটি পূর্ণ নিরাময়যোগ্য রোগ। প্রচলিত কুসংস্কারগুলোর একটি হচ্ছে ‘পাপিষ্ঠ ব্যক্তি বা তাদের বংশধরগণ’ এ রোগে আক্রান্ত হয়। বাস্তবে মাইকোব্যাকটেরিয়াম লেপ্রি নামে একটি জীবাণু এ রোগের জন্য দায়ী।১৮৭৩ সালে নরওয়ের বিজ্ঞানী ডা. আরমান হ্যানসেন এ রোগের জীবাণু আবিষ্কার করেন বলে এটি হ্যানসেন ডিজিস নামে পরিচিত। ১৮৭৩ সালে কুষ্ঠ জীবাণু আবিষ্কারের ফলে এ রোগের কারণ সম্পর্কে মানুষ নিশ্চিত হয়। কিন্তু ১৯৬০ সাল পর্যন্ত কুষ্ঠ রোগের কার্যকর চিকিৎসা মানুষের আয়ত্বের বাইরেই থেকে যায়। ১৯৬০ সালে মার্কিন চিকিৎসা বিজ্ঞানী জন শেফার্ড ইঁদুরের দেহে কুষ্ঠ রোগের জীবাণুর বংশবিস্তার আবিষ্কারের কারণে কুষ্ঠ রোগের কার্যকর ওষুধ আবিষ্কার করা সম্ভবপর হয়েছে। বর্তমানে কুষ্ঠ চিকিৎসায় ব্যবহৃত অত্যন্ত কার্যকর মাল্টি ড্রাগ থেরাপি এ আবিষ্কারেরই ফল, যা ১৯৮২ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে।

কুষ্ঠ রোগে মূলত প্রান্তিক স্নায়ু আক্রান্ত হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চামড়ার মাধ্যমে এ রোগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। জীবাণু সাধারণত ত্বক এবং ত্বকের নিকটবর্তী স্নায়ুকলাকে আক্রান্ত করে। আক্রান্ত স্থান অপেক্ষাকৃত বিবর্ণ হয়ে থাকে। স্নায়ু আক্রান্ত হলে স্থানটি অবশ হয়ে থাকে। কুষ্ঠ হলে হাত, পা বিকলাঙ্গ হতে পারে। চোখ নাড়ানোর ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়। অনুভূতি কমে যাওয়ার কারণে আগুনে পোড়া বা অন্যান্য দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সব বয়সীরাই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে নারীদের চেয়ে পুরুষরা এ রোগে আক্রান্ত হয় বেশি।রোগী ও সমাজকে সচেতন করার মাধ্যমে অনেকাংশেই এ রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। আমাদের দেশে বিনামূল্যে কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের কারণে অনেকেই আক্রান্ত হওয়ার পরও চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে চায় না। এই রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। সময়মতো ওষুধ গ্রহণ করলে কোনো জটিলতা হয় না। তবে জটিলতার কারণে শল্য চিকিৎসা ও ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে।


তথ্যসুত্র

কুষ্ঠ জীবাণুঘটিত রোগ, RisingBd.

কুষ্ঠ নির্মূলে আমাদের করণীয়, Bonik Barta.

কুষ্ঠ এখনো দুর্ভোগের কারণ, Daily Naya Diganta.

সংক্রামক কুষ্ঠ রোগের উচ্চ ঝুঁকি, Bangla.24 Live News Paper.

সামাজিক মর্যাদা রক্ষায় সচেতন, Bangla Pratidin.

কুষ্ঠমুক্ত দেশ গঠন, Daily Inqilab.

কুষ্ঠমুক্ত দেশ গড়ে তুলি, Ittefaq.

বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস, Bhorer Kagoj.

বছরে আক্রান্ত প্রায় ৪ হাজার মানুষ, KaleNews.

আজ বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস।, Jugantor.