বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস (World Mental Health Day)

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস (World Mental Health Day)

স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য সুস্থ শরীরের পাশাপাশি সুস্থ মনও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতি বছর ১০ অক্টোবর নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করা হয় বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস।১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে এ দিনটি।

১৯৯২ সালে প্রথমবার এ দিনটি পালন করা হয়েছিল

১৯৯২ সালে প্রথমবার এ দিনটি পালন করা হয়েছিল। সেই থেকে প্রতি বছরই ১০ অক্টোবর দিনটিকে মানসিক স্বাস্থ্য দিবস হিসেবে পালন করা হয়। শুরুতে দিবসটির কোনো নির্দিষ্ট প্রতিপাদ্য ছিল না। এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে কথা বলা এবং জনসাধারণকে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে শিক্ষিত করা।তবে প্রচারণার জনপ্রিয়তা দেখে ১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মতো দিবসটির প্রতিপাদ্য ব্যবহার করা হয়। সংস্থাটি এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে— ‘মানসিক স্বাস্থ্য সার্বজনীন মানবাধিকার’। মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার গুরুত্ব প্রচারে জাতিসংঘে প্রতি বছর অক্টোবর মাসে নানা কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়।

প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী সাত লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে

 বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী সাত লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। আর আত্মহত্যার চেষ্টা করা ব্যক্তির সংখ্যা তার চেয়েও বেশি। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, নারী ও তরুণরা মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।মন ও মানসিক স্বাস্থ্য সঠিক না থাকলে মানুষের কর্মস্পৃহা, কর্মোদ্দীপনা বিনষ্ট হয়ে যায়, হয়ে পড়ে কর্মহীন, কর্মচ্যুত এবং হারায় তার কর্ম (চাকরি)। ফলত তার ও তার পরিবারের জীবনে নেমে আসে অমানিশার কালোরাত্রি। পৃথিবীতে শুধু উদ্বিগ্নতা (Anxiety) ও বিষণ্নতা (Depression) এর কারণে প্রতি বছর ১২ বিলিয়ন কর্মদিবস নষ্ট হয়।ফলে তার মাঝে সৃষ্ট হয় ক্স হীনমন্যতা ক্স মানসিক চাপজনিত সমস্যা ক্স উদ্বিগ্নতা (Anxiety) ক্স বিষণ্নতা (Depression) ক্স মাদকাসক্তি ক্স ব্যক্তিত্ব সমস্যা ক্স অন্যান্য গুরুতর মানসিক রোগ ক্স বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা তৈরি করে।মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এক জরিপে উঠে আসে, বাংলাদেশের ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১২ দশমিক ৬ শতাংশ শিশু-কিশোর মানসিক রোগে ভুগছেন। আক্রান্তদের ৯২ শতাংশই কোনো ধরনের চিকিৎসা নেন না।

বাইপোলার ডিজঅর্ডার দীর্ঘমেয়াদি মানসিক সমস্যা

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, মানসিক রোগ দুই ধরনের। এর মধ্যে গুরুতর হলো সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার, ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশতা, আলঝেইমারস। আর সাধারণ মানসিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা, শুচিবায়ু, ফোবিয়া বা ভীতি ও বিষণ্নতায় ভোগা। বাইপোলার ডিজঅর্ডার দীর্ঘমেয়াদি মানসিক সমস্যা। ওষুধ বা চিকিৎসার মাধ্যমে রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তবে রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয় না।

মানসিক অসুস্থতার জন্য ৮০ শতাংশ কাজ হারান

কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার গুরুত্ব ক্রমেই বাড়ছে। একটি সুষ্ঠু, সমর্থনমূলক এবং সুস্থ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে কর্মীরা যেমন কাজের প্রতি আরো মনোযোগী হবে, তেমনি প্রতিষ্ঠানও হবে লাভবান, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত পরিশ্রম, কম পারিশ্রমিক, কর্মী ছাঁটাই, কর্মক্ষেত্রে অসন্তুষ্টি, সহকর্মীদের অসহযোগিতা, দারিদ্র্য ও সামাজিক অবস্থান হারানোর ভয়ে মূলত কর্মীরা বিষণ্নতায় ভোগেন। কর্মক্ষেত্রে প্রতি পাঁচজনে একজন মানসিক সমস্যায় ভোগেন। আর তাদের মধ্যে গুরুতর মানসিক অসুস্থতার জন্য ৮০ শতাংশ কাজ হারান।

প্রতি ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে কেউ না কেউ আত্মহত্যা করে থাকে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, করোনাকালে মানসিক রোগের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে কেউ না কেউ আত্মহত্যা করে থাকে। অথচ, আত্মহত্যাজনিত মৃত্যুর অধিকাংশই প্রতিরোধযোগ্য। অধিকাংশ ব্যক্তিই আত্মহত্যার সময় কোনো না কোনো মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকেন। সাধারণত সেটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না বা মানসিক রোগ নিশ্চিত হলেও যথাযথ চিকিৎসা করা হয় না বলেই আত্মহত্যা বেড়ে যাচ্ছে। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে আত্মহত্যার এ হার কমিয়ে আনা সম্ভব।

জাতীয় পর্যায়ে গত পাঁচ বছরে কোনো জরিপ বা গবেষণা নেই

বাংলাদেশে বর্তমানে কতজন মানুষ মানসিক রোগে ভুগছেন এ নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে গত পাঁচ বছরে কোনো জরিপ বা গবেষণা নেই। তবে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এ বছরের চলতি অক্টোবর পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন ৭৪ হাজার ৭৪৪ জন। তাদের মধ্যে ৬,৬৫৮ জন শিশু-কিশোর। শতাংশের হিসেবে এ হার ১০ শতাংশ। এদের বেশিরভাগেরই কনডাক্ট ডিজঅর্ডার বা আচরণগত সমস্যা।

প্রতি আট জনের মধ্যে একজন মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা নিয়ে বেঁচে আছেন

মানসিক স্বাস্থ্য মানবতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, যা আমাদের জীবনকে পরিপূর্ণ করার এবং সমাজে পরিপূর্ণভাবে অবদান রাখার সুযোগ করে দেয়। তা সত্ত্বেও সারা বিশ্বে প্রতি আট জনের মধ্যে একজন মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা নিয়ে বেঁচে আছেন। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে এমন মন্তব্য করেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাণীতে বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নারী ও তরুণরা। মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত চার জনের মধ্যে তিন জনই পর্যাপ্ত চিকিৎসা পান না অথবা কোনও সেবাই পান না। আবার অনেকে অসম্মান ও বৈষম্যের সম্মুখীন হন। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষ অধিকার নয়, বরং মৌলিক মানবাধিকার এবং অবশ্যই সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার আওতার অংশ হতে হবে। সব সরকারকে অবশ্যই এমন সেবা প্রদান করতে হবে যা মানুষের সুস্থ হয়ে ওঠায় সহায়ক হয় এবং তাদের অধিকার সমুন্নত রাখে। এর মধ্যে রয়েছে কমিউনিটি-ভিত্তিক সহায়তা জোরদার করা এবং বৃহত্তর স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবায় মনস্তাত্ত্বিক সহায়তাকে অন্তর্ভুক্ত করা।

বর্তমান বিশ্বে শিশু থেকে প্রৌঢ় প্রায় সবাই মানসিক সমস্যায় ভোগে

বর্তমান বিশ্বে শিশু থেকে প্রৌঢ় প্রায় সবাই মানসিক সমস্যায় ভোগে। তবে তরুণদের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় তাঁদের মধ্যে ভুক্তভোগীর  সংখ্যাটা সিংহভাগ। কারণে-অকারণে হুটহাট অনুভূতির ভিন্নতা, হতাশা, বিষণ্নতা যেন পেয়ে বসেছে তরুণ সমাজকে। যার দরুন সমাজে প্রতিনিয়ত অনৈতিক মূলক কাজ, দুর্নীতি, আত্মহত্যা বেড়ে চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি ৪০ সেকেন্ডে বিশ্বের ১৫ জন মানুষ আত্মহত্যা করে। বিশেষ করে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মাঝে এর প্রবণতা বেশি। মানসিক চাপের কারণে শরীরের উপরও বিরূপ প্রভাব পড়ে।যার ফলে অনিদ্রা, উচ্চ রক্তচাপ, পরিপাকে সমস্যা এবং স্নায়ু সমস্যার মত অসুস্থতা দেখা দেয়। আমাদের উচিত এইসব সমস্যা নির্মূলে  মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা, সৃজনশীল কাজে যুক্ত হওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা, পরিমিত ঘুম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস গঠন, বই পড়া ও লেখালেখির প্রতি ঝোঁক সৃষ্টি, যোগ ব্যায়াম করা, পছন্দের কাজ করা, নিজেকে সময় দেয়া, বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-পরিজন পরিবারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, সব সময় শিথিল থাকার চেষ্টা করা ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা এই সমস্যা নির্মূল করতে পারি। তাই আসুন একসাথে সচেতনতা সৃষ্টি করি। 

দিবসটি পালনের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, সাধারণ মানুষের মাঝে মানসিক রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। মানুষের মধ্যে মানসিক রোগ সম্পর্কে বিভিন্ন ভুল ধারণা, অজ্ঞতা এবং নানা রকমের খারাপ ধারণা রয়েছে। এ ধরনের সচেনতামূলক অনুষ্ঠান, এসব সমস্যা কমাতে সহায়তা করবে। স্কয়ার হাসপাতাল বিভিন্ন কমসূচি যেমন র‌্যালি, সিএমই এবং সর্বস্তরের চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সমন্বয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা এবং মতবিনিময় করে। সভায় বক্তারা কর্মক্ষেত্রে মানসিক সমস্যার বিষয়টি বিশেষ করে গুরুত্ব দেন এবং তারা মনে করেন কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার মাঝে যদি মানসিক প্রশান্তি থাকে, তবে সে প্রতিষ্ঠানে সেবা প্রদান মানসম্মত হবে।


তথ্যসুত্র

মানসিক সুস্থতা, The daily campus.

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস, Protidinersangbad.

দিবসটি পালন উপলক্ষে, NTV BD.

সারাবিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য , Banglatribune.

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, Somoynews.

 স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা, Jago New24.

মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার, Kalerkantho.

মন ও মানসিক স্বাস্থ্য, BD-Pratidin,

Subscribe for Daily Newsletter