বিশ্ব শিক্ষক দিবস (World Teachers Day)

বিশ্ব শিক্ষক দিবস ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী পালন করা হয়। ইউনেস্কোর মতে, বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পালন করা হয়ে থাকে। বর্তমানে বিশ্বের ১০০টি দেশে এই দিবসটি পালিত হয়ে হয়। এই দিবসটি পালনে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রাখে।
১৯৪৪ সালে সর্বপ্রথম শিক্ষক দিবসের পক্ষে কথা বলেন
১৯৪৪ সালে আমেরিকার মৈটে ওয়ারেট উডব্রিজ সর্বপ্রথম শিক্ষক দিবসের পক্ষে কথা বলেন। ১৯৪৬ সালে ইউনেস্কো শিক্ষকদের পেশাগত স্বাধীনতা,অধিকার এবং আর্থ-সামাজিক ও নৈতিক ভিত্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্ব শিক্ষক সনদ নামক একটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করে।বিশ^ শিক্ষক দিবস পালনের যৌতিকতা সম্পর্কে বলা হয়েছে- ১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর ইউনেস্কোর উদ্যোগে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্ত : সরকার সম্মেলনে শিক্ষকদের অধিকার ও মর্যাদা সংক্রান্ত বিশেষ সুপারিশ মালা গ্রহণ করা হয়।১৯৬২ সালে ড.সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। প্রাক্তন এ রাষ্ট্রপতি জন্মদিন পালন করতে চেয়েছিলেন তাঁর বন্ধু-বান্ধব এবং ক’ জন ছাত্র। জন্মদিনের কথা শুনে তিনি বলেন,‘আলাদা ভাবে তাঁর জন্মদিন পালন না করে দেশের সমস্ত শিক্ষকদের জন্য যদি পালন করা হয়- তাহলে তিনি গর্ববোধ করবেন।’
আন্তর্জাতিক শিক্ষক সংগঠন“ এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল” গঠিত হয়
১৯৬২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতি বছর পালন করা হয় শিক্ষক দিবস।১৯৮০ সাল থেকে ৭ মার্চ সারা বিশ্বব্যাপি শিক্ষক দিবস পালন করা শুরু হয়। পরবর্তীকালে মে মাসের প্রথম মঙ্গলবার শিক্ষক দিবস পালন করা শুরু হয়। সিঙ্গাপুরে সেপ্টেম্বরের প্রথম শুক্রবার পালন হয় শিক্ষক দিবস ।১৯৯৩ সালে বিশ্বের ১৬৭ টি দেশের ২১০ টি জাতীয় সংগঠনের ৩ কোটি ২০ লাখ সদস্যদের প্রতিনিধিত্বকারী আন্তর্জাতিক শিক্ষক সংগঠন“ এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল” গঠিত হয় এ আন্তর্জাতিক সংগঠন ।
দেশ ভেদে শিক্ষক দিবস
বিশ্বের ১০০টি দেশে শিক্ষক দিবস পালিত হয়ে থাকে। অনেক দেশে দিবসটি ভিন্ন ভিন্ন তারিখে পালিত হয়। যেমন: ভারতে শিক্ষক দিবস পালিত হয় ৫ সেপ্টেম্বর। অস্ট্রেলিয়ায় অক্টোবর মাসের শেষ শুক্রবার শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়। শেষ শুক্রবার যদি ৩১ অক্টোবর হয়, তা হলে ৭ নভেম্বর শিক্ষক দিবস পালিত হয়। ভুটান শিক্ষক দিবস পালন করে ২ মে, ইন্দোনেশিয়া ২৫ নভেম্বর, মালয়েশিয়া ১৬ মে, ইরান ২ মে, ইরাক ১ মার্চ, আর্জেন্টিনা ১১ সেপ্টেম্বর, ব্রাজিল ১৫ অক্টোবর, চীন ১০ সেপ্টেম্বর, তাইওয়ান ২৮ সেপ্টেম্বর, থাইল্যান্ড ১৬ জানুয়ারি, সিঙ্গাপুর সেপ্টেম্বরের প্রথম শুক্রবার দিনটি পালন করে।
শিক্ষক উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য ইউনেস্কো মদান পুরস্কার’ প্রদান করবে বলে জানা যায়।
১৯৪৬ সালে ইউনেস্কো শিক্ষকদের পেশাগত সদর দফতরে আয়োজিত এ বৈশ্বিক ইভেন্টটি শিক্ষাগত নীতিতে শিক্ষকদের দৃষ্টিভঙ্গি একীভূত করার এবং তাঁদের পেশাগত উন্নয়নের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ গড়ে তোলার গুরুত্বের ওপর জোর দেবে। এ থিম টিচিং পেশার উপর জাতিসংঘের মহাসচিবের উচ্চ-স্তরের প্যানেল দ্বারা হাইলাইট করা উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জগুলির প্রতি সাড়া দেয়া এবং শিক্ষকদের উপর আমাদের সাম্প্রতিক বৈশ্বিক প্রতিবেদন- যার মধ্যে ক্রমবর্ধমান শিক্ষকের ঘাটতি এবং ক্রমহ্রাসমান কর্মপরিস্থিতির মূল নতুন তথ্য উপস্থাপন করা। দিবসটি ইউনেস্কো, আইএলও, ইউনিসেফ এবং এডুকেশন ইন্টারন্যাশনালের উচ্চ-পর্যায়ের বার্তাসহ একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করবে। এটি শিক্ষায় একটি নতুন সামাজিক চুক্তির প্রয়োজনীয়তা এবং সারা বিশ্ব থেকে শিক্ষকদের কণ্ঠস্বর প্রদর্শন করে, নীতি ও অনুশীলনের উন্নতির বিষয়ে তাদের অন্তর্দৃষ্টি ভাগ করে নেয়ার একটি অংশের উপর একটি মূল বক্তব্য অন্তর্ভুক্ত করবে। শিক্ষক উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য ইউনেস্কো-‘ হামদান পুরস্কার’ প্রদান করবে বলে জানা যায়।
১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর শিক্ষকদের মর্যাদা সংক্রান্ত বিশেষ সুপারিশ মালা গ্রহণ করা হয়
১৯৪৬ সালে ইউনেস্কো শিক্ষকদের পেশাগত স্বাধীনতা,অধিকার এবং আর্থ-সামাজিক ও নৈতিক ভিত্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্ব শিক্ষক সনদ নামক একটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করে। বিশ^ শিক্ষক দিবস পালনের যৌতিকতা সম্পর্কে বলা হয়েছে- ১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর ইউনেস্কোর উদ্যোগে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্ত : সরকার সম্মেলনে শিক্ষকদের অধিকার ও মর্যাদা সংক্রান্ত বিশেষ সুপারিশ মালা গ্রহণ করা হয়। ১৯৯৩ সালে বিশ্বের ১৬৭ টি দেশের ২১০ টি জাতীয় সংগঠনের ৩ কোটি ২০ লাখ সদস্যদের প্রতিনিধিত্বকারী আন্তর্জাতিক শিক্ষক সংগঠন “ এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল” গঠিত হয় এ আন্তর্জাতিক সংগঠন ।
শিক্ষকতা হচ্ছে মহান ও একটি মর্যাদাপূর্ণ পেশা
শিক্ষকতা হচ্ছে মহান ও একটি মর্যাদাপূর্ণ পেশা। এখনো সব পেশার মানুষ শিক্ষকদেরকেই বেশি ভক্তি ও শ্রদ্ধা করে। পৃথিবীতে যতগুলো পেশা রয়েছে- তার মধ্যে শিক্ষকতাকে মর্যাদার চোখে দেখা হয়। পৃথিবীতে মা বাবার পরের স্থান হচ্ছে শিক্ষকের। সমাজ ও দক্ষ মানবসম্পদ বির্নিমাণে শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। শিক্ষক সমাজকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার কারিগর। শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের মাঝে মূল্যবোধ ও নৈতিকতা সৃষ্টি করে। যার ফলে একজন শিক্ষার্থী সুন্দর মানুষ হয়ে গড়ে ওঠে এবং সমাজ ও দেশের প্রতি দায়িত্বশীল হয়- শ্রদ্ধাশীল হয়। শিক্ষকের এসব কৃতিত্বের স্বীকারোক্তির জন্য তাদের স্মরণ করতে ও কল্যাণ কামনার জন্য শিক্ষকের যে গুরুত্ব সেটা স্বীকার করার জন্য প্রতিবছর তাদের সম্মানার্থে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ পালিত হয়।
জাতীয় পর্যায়ে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে দেশের যে আর্থসামাজিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য করে যদি একটা শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায় তাহলে শিক্ষককের যেমন মর্যাদা সুরক্ষিত তেমনি শিক্ষার পরিবেশও আন্তর্জাতিক মানের হবে। আমাদের শিক্ষকদের যে বৈষম্য আছে সেটি যদি দূর করা যায় তাহলে আজকের এই শিক্ষক দিবস উদযাপন সার্থক হবে।শিক্ষকতায় স্বীকৃতি খুব গুরুত্বপূর্ণ মোটিভেশন হিসেবে কাজ করে। ফলে শিক্ষকদের প্রতিটি কাজের স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ইদানীং অনেক প্রতিষ্ঠানই শিক্ষকদের কাজের স্বীকৃতি প্রদান করে থাকে। যেমন: বছর শেষে 'সেরা শিক্ষক' পুরস্কার প্রদান করা হয়। এই বছর সরকারের এ টু আই ও গ্রামীণফোনের উদ্যোগে 'সংকটে নেতৃত্বে' শিরোনামে শিক্ষকদের সম্মাননা প্রদান করেছে। এছাড়া আলোকিত টিচার্স 'টিচার্স ইনোভেটরস-২০২১' এর মাধ্যমে শিক্ষকদের উদ্ভাবনগুলোর স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। সারা বাংলাদেশের সব শিক্ষকদের থেকে আসা ইনোভেশনগুলোর মধ্যে সেরা তিনজনকে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। এভাবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষকদের উদ্ভাবন এবং কাজের স্বীকৃতি প্রদান করতে পারে।
তথ্যসুত্র
বিশ্ব শিক্ষক দিবস, Jaijaidin.
৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস, Rising bd.
একটি মর্যাদাপূর্ণ পেশা, Chandpurtimes.
শিক্ষা সময়ের সেরা, The Daily Star.
৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী পালন, Prothomalo.