বিশ্ব পর্যটন দিবস (World Tourism Day)
আজ ২৭ সেপ্টেম্বর (বুধবার) বিশ্ব পর্যটন দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হবে দিবসটি। বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দিবসটি উপলক্ষ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডসহ বিভিন্ন সংস্থা।বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আজ দিবসটি পালিত হবে। এ বছর পর্যটন দিবস উপলক্ষে প্রতিপাদ্য— ‘ট্যুরিজম অ্যান্ড গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট’। অন্যভাবে বলা যায়, ‘পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ।
এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য-‘পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ’।
পর্যটনের ভূমিকা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উপযোগিতাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া এই দিবসের লক্ষ্য। দিবসটি উপলক্ষ্যে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে সকাল সাড়ে ৭টায় আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের সামনের সড়কে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (ইউএনডব্লিউটিও) উদ্যোগে ১৯৮০ সাল থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
এদিকে, পর্যটন দিবসে সারা দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে এক ছাদের নিচে আনতে চার দিনব্যাপী বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। বুধবার বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন করা হবে।জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (ইউএনডব্লিউটিও) উদ্যোগে ১৯৮০ সাল থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।পর্যটন দিবসে সারা দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে এক ছাদের নিচে আনতে চার দিনব্যাপী বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
পর্যটনের ভূমিকা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উপযোগিতাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া এ দিবসের লক্ষ্য। জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (ইউএনডব্লিউটিও) উদ্যোগে ১৯৮০ সাল থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর দিবসটি পালন করা হয়।বাংলাদেশে বিশ্ব পর্যটন দিবস উদযাপনে নানা ধরনের আয়োজন করেছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চার দিনব্যাপী বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা (ইউএনডব্লিউটিও) এ বছর দায়িত্বশীল, টেকসই এবং সর্বজনীন পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে। এ বছর বিশ্ব পর্যটন সংস্থা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সৌদি আরবে।এ আয়োজনে যোগ দিতে সৌদি আরবে গিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। ইউএনডব্লিউটিও-এর সদস্য দেশগুলো এ আয়োজনে অংশ নেবে।ইউএনডব্লিউটিও-এর সেক্রেটারি-জেনারেল জুরাব পোলোলিকাশভিলি বলেছেন, পর্যটনের সম্ভাবনা বিশাল। তাই এই বিশ্ব পর্যটন দিবসে আমরা পর্যটনের বিকাশের ক্ষমতাকে উদযাপন করি
নানা আয়োজনে উদযাপিত হচ্ছে বিশ্ব পর্যটন দিবস
‘পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বুধবার বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে বিশ্ব পর্যটন দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিবসটি পালিত হয়।দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডসহ বিভিন্ন পর্যটন সংস্থা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ দিবসটির মূল লক্ষ্য পর্যটনের ভূমিকা সম্পর্কে সবার মধ্যে জনসচেতনতা বাড়ানো।এছাড়া পর্যটনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উপযোগিতাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়াও এ দিবসটির অন্যতম উদ্দেশ্য। দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ বাণী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পর্যটন শিল্পের যথাযথ গুরুত্ব অনুধাবন করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই শিল্পের প্রসারে কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পর্যটন শিল্পের জন্য শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করে এই পৃথিবীর টেকসই অবকাঠামো এবং সবুজ রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করতে হবে। তাহলেই উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও উদ্যোক্তার মাধ্যমে পর্যটন শিল্পে সত্যিকারের সমৃদ্ধি আসবে। টেকসই পর্যটন উন্নয়ন ধারণা অনুসরণে জীববৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক পরিবেশ, স্থানীয় ঐতিহ্য ও কৃষ্টির পরিবর্তন না ঘটিয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের উদ্যোক্তা এবং জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশের পর্যটনের বিকাশে সকলকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও জাতীয় অর্থনীতিতে পর্যটনের অবদান বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (ইউএনডব্লিউটিও) উদ্যোগে ১৯৮০ সাল থেকে দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পালন করছে।
ট্যুরিস্ট-ভেসেল, ট্রাভেল এজেন্ট ও ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করবে। অংশগ্রহণ করবে বিভিন্ন জেলার পর্যটন পণ্য ও সেবা প্রদানকারীরা। দেশব্যাপী পর্যটনের বিভিন্ন অফার ও আয়োজন থাকবে এ উৎসবে। দর্শনার্থীদের আগামীর বাংলাদেশে তাদের আকর্ষণীয় ট্যুর প্ল্যান তৈরি করতে এ উৎসব সহায়তা করবে। এ উৎসবে আয়োজন থাকবে বিভিন্ন দেশের খাবারসহ বাংলাদেশের অথেন্টিক ও ঐতিহ্যবাহী খাবারের।কক্সবাজারে কার্নিভ্যাল : কক্সবাজার সৈকতে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে বসছে সাত দিনব্যাপী পর্যটন মেলা-বিচ কার্নিভ্যাল। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আজ থেকে পর্যটকদের কক্সবাজারমুখী করতে মেলায় সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মেলা আজ শুরু হয়ে চলবে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত।
কুয়াকাটায় উৎসব
পর্যটন দিবসটি উপলক্ষ্যে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় তিন দিনব্যাপী উৎসবের আয়োজন করেছে উপজেলা প্রশাসন ও কুয়াকাটা পৌরসভা। আজ থেকে শুক্রবার পর্যন্ত কুয়াকাটা সৈকতের ট্যুরিজম পার্ক সংলগ্ন এলাকায় মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন চলবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশবরেণ্য শিল্পীরা অংশগ্রহণ করবেন। এদিকে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে কুয়াকাটার সব হোটেল-মোটেলে ৫০ শতাংশ ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে মালিক কর্তৃপক্ষ।
পর্যটন হোটেলে ছাড়
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের (বাপক) হোটেল-মোটেলে রুম ভাড়ায় ২৭ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে। ভ্রমণপিপাসুরা আজ পর্যটন কর্পোরেশনের যেকোনো হোটেলে থাকলে এ ছাড় উপভোগ করতে পারবেন। ডিসকাউন্ট ছাড়াও পর্যটন দিবসে লাইভ কুকিং শো এবং স্বল্পমূল্যের প্যাকেজ ট্যুরও দেবে বাপক।পর্যটন দিবসে সারা দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে এক ছাদের নিচে আনতে চার দিনব্যাপী বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। আজ বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ উৎসবের উদ্বোধন করা হবে।
২৭ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর এ উৎসবে এয়ারলাইন্স, হোটেল, রিসোর্ট, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, ট্যুরিস্ট-ভেসেল, ট্রাভেল এজেন্ট ও ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করবে। অংশগ্রহণ করবে বিভিন্ন জেলার পর্যটন পণ্য ও সেবা প্রদানকারীরা। দেশব্যাপী পর্যটনের বিভিন্ন অফার ও আয়োজন থাকবে এ উৎসবে। দর্শনার্থীদের আগামীর বাংলাদেশে তাদের আকর্ষণীয় ট্যুর প্ল্যান তৈরি করতে এ উৎসব সহায়তা করবে। এ উৎসবে আয়োজন থাকবে বিভিন্ন দেশের খাবারসহ বাংলাদেশের অথেন্টিক ও ঐতিহ্যবাহী খাবারের।বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালে এয়ারলাইন্স, হোটেল, রিসোর্ট, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, ট্যুরিস্ট-ভেসেল, ট্রাভেল এজেন্ট ও ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো অংশগ্রহণ করবে। দেশব্যাপী পর্যটনের বিভিন্ন অফারও থাকবে এ উৎসবে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, ‘চার দিনব্যাপী বাংলাদেশ ফেস্টিভালে ২০টি হোটেল রিসোর্ট এবং অঞ্চলভিত্তিক খাবারের স্টল থাকবে ৭০টি। বিদেশি দূতাবাসসহ ১৬০টির বেশি প্রতিষ্ঠান এতে অংশগ্রহণ করছে। এ উৎসবে আয়োজন থাকবে বিভিন্ন দেশের খাবারসহ বাংলাদেশের অথেন্টিক ও ঐতিহ্যবাহী খাবারের। দেশি-বিদেশি ইউনিক ও অথেন্টিক খাবার সম্পর্কে জানার এবং উপভোগ করার সুযোগ থাকবে।’তিনি বলেন, ‘ফেস্টিভ্যালে দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে থাকবে জামতলার সাদেক গোল্লা, নরসিংদীর নকশি পিঠা, নাটোরের কাঁচা গোল্লা, কুষ্টিয়ার কুলফি, পুরান ঢাকার হাজীর বিরিয়ানি, বাকরখানি, মুক্তাগাছার মন্ডা, চট্টগ্রামের মেজবান, খুলনার চুইঝাল, বিসমিল্লাহর কাবাব, কুমিল্লার রসমালাইসহ ৬৪টি জেলা থেকে ৭০টির বেশি ঐতিহ্যবাহী ফুড স্টল থাকবে। এ উৎসবে তাঁত ও জামদানি তৈরির প্রক্রিয়া দেখা যাবে। আমাদের ঐতিহ্য মসলিন পুনরুদ্ধার হওয়ার গল্প এবং মসলিন তৈরির প্রক্রিয়া প্রদর্শন করা হবে। আমাদের সবার মসলিন দেখার অপূর্ব সুযোগ তৈরি হবে এই উৎসবে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, দর্শনার্থীদের আকর্ষণীয় ট্যুর প্ল্যান তৈরি করতে এ উৎসব সহায়তা করবে। তারা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ইতিহাস, ঐতিহ্য, পুরাকীর্তি, পর্যটন-সম্পদ সম্পর্কে জানতে পারবেন। প্রতিটি জেলার পর্যটন বিষয়ে আকর্ষণীয় ছবি দেখার সুযোগ পাবেন।
বিশ্ব পর্যটন দিবস, ৩ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি মহাপরিকল্পনা
দেশের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে তিন বছর আগে মহাপরিকল্পনা নেওয়া হলেও এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি ঠিক কবে এই মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত হবে সেটিও নিশ্চিত করে বলতে পারেননি কেউ।বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে নিরাপত্তা সংকট। এসব স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিয়েও রয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। কক্সবাজার, কুয়াকাটা, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, সুন্দরবনসহ কয়েকটি পর্যটক এলাকার মতো অন্যতম পর্যটকবান্ধব এলাকায়ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, তিনটি ধাপে পর্যটন মহাপরিকল্পনার কাজ চলছে। প্রথম ধাপে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেশের পর্যটনশিল্পের বর্তমান অবস্থা, সম্ভাবনা, সংকট, দুর্বলতাসহ বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করা হবে। বেসরকারি অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে মতামত নেওয়া হয় প্রথম ধাপেই। দ্বিতীয় ধাপে দেশের পর্যটনের লক্ষ্য, পদক্ষেপ, কৌশলগত লক্ষ্য, অগ্রাধিকার ও যোগাযোগের ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়। পর্যটন উন্নয়ন, প্রমোশন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৩, ৫ ও ১৫ বছরমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনাও হয় দ্বিতীয় পর্যায়ে। তৃতীয় ধাপে দেশের নির্দিষ্ট অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনা করা। পর্যটন পণ্যের উন্নয়ন, অর্থায়ন ও বিনিয়োগের কৌশল নিয়ে কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। বিপণন ও প্রচারের কৌশলও উঠে এসেছে এই ধাপে।
এছাড়া মেলা, ফেস্টিভ্যাল, কার্নিভাল, কালচারাল অনুষ্ঠান, ব্র্যান্ডিং, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার, ভিডিও নির্মাণ, ডিজিটাল স্ক্রিনে প্রদর্শনী ও ওশান ট্যুরিজমকে বেসরকারি উদ্যোগে চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে।পর্যটন মন্ত্রণালয় বলছে, পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত। কোনো ভুলত্রুটি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে, ঠিক কবে এই মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে, তা কেউ বলতে পারেননি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মহাপরিকল্পনা তৈরিতে যুক্ত রয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। ৩০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনায় অবকাঠামো উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিবেশ-প্রকৃতি রক্ষা, বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, খুব শিগগিরই বাস্তবায়ন করা হবে মহাপরিকল্পনা। গত বছরের ডিসেম্বরে মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার কথা ছিল। কিন্তু করা যায়নি। শিগগিরই তা চূড়ান্ত করা হবে। দেশের পর্যটনশিল্পকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে আমাদের মন্ত্রণালয় কাজ করছে। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়।
বিটিবিতে লোকবল সংকট
দেশের পর্যটনের অভিভাবক বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড মাত্র ১০ জন কর্মকর্তা নিয়ে চলছে। যেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে থাকার কথা কমপক্ষে ১০০ জন। এছাড়া, জেলা পর্যায়েও নেই কোনো অফিস। প্রধান নির্বাহীর পদটিও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য।বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন বলেছেন, ট্যুরিজম বোর্ডের লোকবল বাড়ানো হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকা বিটিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদটি শিগগিরই পূরণ করা হবে।এমন পরিস্থিতিতে আজ (২৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব পর্যটন দিবস পালিত হবে বাংলাদেশেও। ঘটা করেই ‘বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল’ আয়োজন করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড (বিটিবি)। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ফেস্টিভ্যাল চলবে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এই ফেস্টিভ্যাল স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে পর্যটক ও পর্যটন কেন্দ্রের নিরাপত্তা, আবাসন, অ্যাভিয়েশন পর্যটন খাতে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা এবং পর্যটনশিল্পে নারীর অংশগ্রহণ, খাদ্য পর্যটন, পর্যটন ও অ্যাভিয়েশন সাংবাদিকতা, প্লাস্টিকমুক্ত সেন্টমার্টিন ইত্যাদি বিষয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডসহ বিভিন্ন পর্যটন সংস্থা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ দিবসটির মূল লক্ষ্য হলো পর্যটনের ভূমিকা সম্পর্কে সবার মধ্যে জনসচেতনতা বাড়ানো।এছাড়া সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উপযোগিতাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়াও এ দিবসটির অন্যতম উদ্দেশ্য।
দিবসটিতে বাণী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পর্যটন শিল্পের যথাযথ গুরুত্ব অনুধাবন করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই শিল্পের প্রসারে কাজ করছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, পর্যটন শিল্পের জন্য শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করে এই পৃথিবীর টেকসই অবকাঠামো এবং সবুজ রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করতে হবে। তাহলেই উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও উদ্যোক্তার মাধ্যমে পর্যটন শিল্পে সত্যিকারের সমৃদ্ধি আসবে। টেকসই পর্যটন উন্নয়ন ধারণা অনুসরণে জীববৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক পরিবেশ, স্থানীয় ঐতিহ্য ও কৃষ্টির পরিবর্তন না ঘটিয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের উদ্যোক্তা এবং জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশের পর্যটনের বিকাশে সকলকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।
পর্যটন শিল্পের বহুমাত্রিকতা ও সম্ভাবনা
সারা বিশ্বে পর্যটন শিল্প একটি অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবে সুপরিচিত। পর্যটন শিল্প বর্তমান বিশ্বের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। পর্যটন শিল্পে বিশ্বের বুকে এক অপার সম্ভাবনার নাম বাংলাদেশ। এ দেশের প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্য পৃথিবীর অন্য দেশ থেকে অনন্য ও একক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। পর্যটন বিকাশে বাংলাদেশের রয়েছে অপার সম্ভাবনা।
পর্যটন শিল্প পৃথিবীর একক বৃহত্তম শিল্প হিসেবে স্বীকৃত। পর্যটনের গুরুত্ব সর্বজনীন। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে পর্যটন এখন অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার খাত। ১৯৫০ সালে পৃথিবীতে পর্যটকের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫ মিলিয়ন; যা ২০১৬ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২৩৫ মিলিয়নে। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছর প্রায় ১৩৯ কোটি ৫৬ লাখ ৬০ হাজার পর্যটক সারা পৃথিবী ভ্রমণ করবেন। অর্থাৎ বিগত ৬৭ বছরে পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ৫০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পর্যটকের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিধি ব্যাপকতা লাভ করেছে। পর্যটনের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়ে থাকে। ২০১৭ সালে বিশ্বের জিডিপিতে ট্যুরিজমের অবদান ছিল ১০.৪ শতাংশ, যা ২০২৭ সালে ১১.৭ শতাংশে গিয়ে পৌঁছাবে। এছাড়া ২০১৭ সালে পর্যটকদের ভ্রমণখাতে ব্যয় হয়েছে ১৮৯৪.২ বিলিয়ন ডলার। আর একই বছর পর্যটনে বিনিয়োগ হয়েছে ৮৮২.৪ বিলিয়ন ডলার। পর্যটনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি খণ্ডচিত্র আমরা এর থেকে পেতে পারি।
সারা বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশ এ শিল্পে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের জিডিপি খাতে পর্যটন শিল্পের অবদান ছিল ৮৫০.৭ বিলিয়ন টাকা। এ খাতে কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে ২৪ লাখ ৩২ হাজার। একই বছর পর্যটন খাতে বিনিয়োগ এসেছে ৪৩ বিলিয়ন টাকা। তাছাড়া সঠিক তথ্য-উপাত্ত না পাওয়া গেলেও ধারণা করা হয়, গত বছর বাংলাদেশে প্রায় ৫ লাখ বিদেশি পর্যটক ভ্রমণ করেন। একই বছর প্রায় ৪ কোটি দেশীয় পর্যটক সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়ান।বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা বিরাজমান। কিন্তু এ বিশাল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে আমরা পর্যটন শিল্পে পিছিয়ে আছি। এ শিল্পের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা। পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবপক্ষকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। দেশীয় পর্যটন বিকাশের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে প্রচার-প্রচারণার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। পাশাপাশি এ শিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। সঠিক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে পর্যটন শিল্প অন্যতম ভূমিকা পালন করতে পারবে।
পর্যটন শিল্পের প্রসারে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে
পর্যটন চিত্তবিনোদন বা শিক্ষার উদ্দেশ্যে পরিভ্রমণ। বর্তমানে পর্যটন একটি উল্লেখযোগ্য সেবাখাত এবং পর্যটকদের আকর্ষণ করা বা তাদের আহার ও বাসস্থান সংস্থান, চিত্তবিনোদন ইত্যাদি একটি ভালো ব্যবসা। অনেক দেশে পর্যটন অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় ও বিদেশি মুদ্রা উপার্জনের একটি কার্যকর শিল্পখাত। পর্যটনের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে অন্য যেসব ব্যবসা বিকাশ লাভ করে সেগুলো হচ্ছে স্থল, বিমান ও সমুদ্রপথে যাত্রী পরিবহন, হোটেল ও রেস্তোরাঁ, ব্যাংকিং, ট্রাভেল এজেন্সি ও ট্যুর অপারেটর কোম্পানি, গাড়ি ভাড়া প্রতিষ্ঠান ও নানারকম খুচরা পণ্যের দোকান। ফলে পর্যটনের উন্নয়ন সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে এবং এর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব
এশিয়া মহাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত আমাদের বাংলাদেশকে প্রকৃতি উপহার হিসাবে দিয়েছে চোখে পড়ার মতো নৈসর্গিক বৃক্ষরাজি, দুর্লভ প্রজাতির অনন্য জীব, পশু, পাখি ও উদ্ভিদ। দেশের পশ্চিমাঞ্চলে রয়েছে সবুজ সুন্দরবন দক্ষিণে রয়েছে কক্সবাজারের বিরাট সমুদ্র সৈকত। প্রাচীনকাল থেকেই এ ঐতিহ্যময় বাংলাদেশে বিকশিত হয়েছে নানা ধর্মীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি। বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ঐতিহাসিক কীর্তিস্তম্ভ বা ধ্বংসাবশেষগুলোই প্রমাণ করে দেশটির অতীত শৌর্য-বীর্যের বিশালতা।
এ অনুপম সম্পদ ও সৌন্দর্যগুলো আমরা এতদিন নিজেরাই উপভোগ করে বিভোর হবার পাশাপাশি ‘আমরা গরিব নই’ স্লোগান দিয়ে চলেছি। অথচ, সম পরিমাণের অথবা এরচেয়েও কম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সম্পদ নিয়ে এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলো বিকশিত করে তুলছে নিজের দেশেও পর্যটন শিল্প। তারা সুপরিকল্পিতভাবে সীমিত সম্পদগুলোকে বিশ্বের চোখে এমনভাবে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে যে সেসব দেশে দেশি-বিদেশি পর্যটকের জমজমাট গমনাগমন লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। ফলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে প্রচুর পরিমাণে অর্থ উপার্জন সম্ভব হবার পাশাপাশি পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের পথও খুলেছে। পর্যটনের আনুষঙ্গিক বিষয়ের বাজার সৃষ্টির ফলে দেশগুলোর অর্থনৈতিক দিকে ঘটেছে অভাবনীয় পরিবর্তন। দেশে আসছে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা ।
পর্যটন শিল্প যে সম্প্রতি এক লাভজনক শিল্পে পরিণত হয়েছে তা সমগ্র পৃথিবী জুড়েই স্বীকৃত হয়েছে। এর জন্য প্রয়োজন নেই যথেষ্ট পরিমাণের কাঁচামাল, উচ্চমাপের প্রযুক্তি তথা অভিজ্ঞ মানব সম্পদের। প্রকৃতির সহজাত আর কিছু পরিমাণে মানব সৃষ্ট সম্পদকে কাঁচামাল হিসেবে নিয়ে একে কৌশলপূর্ণভাবে আকর্ষণীয় রূপে বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপন করতে পারলেই বিপণনযোগ্য উৎকৃষ্ট সামগ্রী হয়ে উঠবে। এগুলো করার জন্য প্রয়োজন হয় কিছু সংখ্যক নিষ্ঠাবান মানুষ আর ন্যূনতম পরিকাঠামোর, যাদের উপর ন্যস্ত থাকবে পর্যটনের সম্ভাবনার স্থান নির্বাচনের দায়িত্ব। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উপর চাপ প্রয়োগ করে যাতায়াতের উন্নয়ন, যাত্রী নিবাস স্থাপন, স্থানীয় ঐতিহ্যবহনকারী বিভিন্ন দ্রব্য সামগ্রীর পরিকল্পিত বাজার স্থাপনের দায়িত্ব তাদের উপরে বর্তাবে।
পর্যটনের অর্থনীতি
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরও গতিশীল করতে ও ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরিতে এই শিল্পের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বর্তমানে পৃথিবীর ১০টি কর্মসংস্থানের মধ্যে ১টি কর্মসংস্থান তৈরি হয় পর্যটন খাতে।২০১৭ সালে বাংলাদেশের জিডিপিতে পর্যটন শিল্পের মোট অবদান ছিল ৮৫০ দশমিক ৭ বিলিয়ন টাকা। আর এই খাতে কর্মস্থান তৈরি হয়েছে মোট ২৪ লাখ ৩২ হাজার। বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প বিকাশের সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। এখন এটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হলে এ শিল্প এখানে বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবে। সমুদ্র বেষ্টিত সেন্টমার্টিন দ্বীপ, সোনারগাঁ, সিলেটের জাফলং, মাধবকুণ্ড, হামহাম বা শেরপুরের ঝিনাইগাতি, নকলা বা গজনী আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। স্থানীয়ভাবে জায়গাগুলোর ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। বাংলাদেশের সিলেট, চট্টগ্রাম, পঞ্চগড় এলাকার চা-বাগান, হাওড়-বিল এলাকা বা আকর্ষণীয় স্থানে পর্যটন সুবিধা নিশ্চিত করে এই শিল্পের আরও বিকাশ করা যেতে পারে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ববাহী শিল্প বিকাশের অন্যতম শর্ত সে দেশের প্রশান্ত পরিবেশ।
আগামীতে বিশ্বে পর্যটকদের চাহিদা পরিবর্তন হবে। বিশ্বের মোট পর্যটকের প্রায় ৭০ শতাংশ ভ্রমণ করবে এশিয়া অঞ্চলে। সেই দিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। যে কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আমাদের পর্যটন শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে তা বেগবান করা গেলে এই খাতে আরও উন্নতি করা যাবে। পাশাপাশি নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, বেকারত্বের হারও কমে আসবে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় পর্যটন শিল্পের সংযোজন শুধু আর্থিক সফলতা বয়ে আনবে না। সেই সঙ্গে প্রান্তিক পর্যায়ে এর সুফল ছড়িয়ে দেবে স্থানীয়দের অংশগ্রহণের মাধ্যমে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে পর্যটন শিল্প বাংলাদেশের জন্য হয়ে উঠতে পারে অন্যতম হাতিয়ার হিসাবে। ধারণা করা হচ্ছে, বিগত ৭০ বছরে পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ৫০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
পর্যটকের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ অর্থনৈতিক কর্মকা-ের পরিধি ব্যাপকতা লাভ করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের পর্যটন খাতে আয় প্রায় ৭৬ দশমিক ১৯ মিলিয়ন ডলার। ভারত আয় করেছে ১০ হাজার ৭২৯ মিলিয়ন ডলার, মালদ্বীপ ৮০২ মিলিয়ন ডলার, শ্রীলঙ্কায় ৩৮৫ মিলিয়ন ডলার এবং নেপালে ১৯৮ মিলিয়ন ডলার, যা সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশের তুলনায় অপ্রতুল।
বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২২ সাল নাগাদ পর্যটনশিল্প থেকে প্রতিবছর ২ ট্রিলিয়ন ডলার আয় হবে। ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের ৫১টি দেশের পর্যটকরা বাংলাদেশে ভ্রমণ করবেন, যা মোট জিডিপির ১০ শতাংশ অবদান রাখবে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪ সালে মোট কর্মসংস্থানের ১ দশমিক ৯ শতাংশ হবে পর্যটন শিল্পের অবদান। পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার রোল মডেল।
ভ্রমণ ও পর্যটন কাউন্সিলের (ডব্লিউটিটিসি) তথ্যানুযায়ী, বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই শিল্পের অবদান ৮ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সালে পর্যটন শিল্প বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ২ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার অবদান রাখে, যা বিশ্ব জিডিপির ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করে ১৫৬ কোটি পর্যটক, অর্থাৎ প্রতি সাতজনের একজন পর্যটক। জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের ফলে সাধারণ মানুষের কাছে ভ্রমণ পিপাসা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে বিধায় আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে অনন্য অবদান রাখছে। বাংলাদেশে পর্যটন খাতে সরাসরি কর্মরত আছেন প্রায় ১৫ লাখ মানুষ।
এ ছাড়া পরোক্ষভাবে ২৩ লাখ। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ১১০ কোটি। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২২ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ২০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। আর বিপুলসংখ্যক পর্যটকের প্রায় ৭৫ শতাংশ ভ্রমণ করবে এশিয়ার দেশগুলোতে। বাংলাদেশ যদি এ বিশাল বাজারে টিকে থাকতে পারে, তাহলে পর্যটনের হাত ধরেই বদলে যেতে পারে দেশের অর্থনীতির রূপরেখা। বাংলাদেশের গ্রামগুলো হতে পারে পর্যটন আকর্ষণের অপার সম্ভাবনা। প্রতিবারের মতো এবারও ২৭ সেপ্টেম্বর পালিত হবে বিশ্ব পর্যটন দিবস।
পর্যটনশিল্পের বিকাশে নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিতে হইবে
আকর্ষণীয় পর্যটনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রাকৃতিক উপাদান রহিয়াছে বাংলাদেশে; কিন্তু পর্যটনের বিকাশে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তথা ‘নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করিতে না পারিলে সুফল ঘরে তোলা যাইবে না। এই বিবেচনায় ‘নিরাপদ পর্যটন’ গড়িয়া তুলিতে সংশ্লিষ্ট সকলের আরো আন্তরিকভাবে কাজ করা প্রয়োজন। পর্যটকদের নিরাপত্তার পাশাপাশি পর্যটনকেন্দ্রগুলির সুরক্ষা নিশ্চিত করা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
উল্লেখ্য, সভ্যতার বিকাশের পাশাপাশি পর্যটনের রূপ ও প্রকৃতিতে আসিয়াছে অভাবনীয় পরিবর্তন। বর্তমান সময়ে পর্যটন শুধু দেশভ্রমণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নাই, বরং সমগ্র মানবগোষ্ঠীর জন্য ইহা হইয়া উঠিয়াছে একটি বিশ্বজনীন শখ ও নেশা। আজিকার বিশ্বে ইহা ব্যবসায়-বাণিজ্যের সহিত বহুমাত্রিকভাবে সংযুক্ত। অতএব, বাংলাদেশের পর্যটন খাতের ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনার বিষয়কে মাথায় রাখিয়া ইহার নিরাপত্তাহীনতাসহ এই শিল্পের বিকাশের পথে যেই সকল প্রতিবন্ধকতা রহিয়াছে, তাহা দূরীকরণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে বলিয়া আমরা মনে করি।
দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অক্ষুণ্ন রেখে পর্যটন শিল্পে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করুন
অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব অনুধাবনের পাশাপাশি পর্যটন বিষয়ক কর্মকান্ডে সর্বজনীন অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করবে।বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প বিকাশের অবারিত সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, এদেশের প্রতিটি অঞ্চলের রয়েছে আলাদা সৌন্দর্য। রয়েছে অসংখ্য স্বতন্ত্র পর্যটন সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যমন্ডিত স্থান। এসব অঞ্চলে পর্যটন শিল্প বিকাশ লাভ করলে বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে যা মানুষের জীবন-মান উন্নয়ন ও অর্থনীতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামকের ভূমিকা পালন করতে পারে।তিনি বলেন, পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানকে পরিকল্পিত উপায়ে সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে।
পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা
বিশাল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে আমরা পর্যটন শিল্পে পিছিয়ে আছি। এ শিল্পের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা। পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবপক্ষকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। দেশীয় পর্যটন বিকাশের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে প্রচার-প্রচারণার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। পাশাপাশি এ শিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। সঠিক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে পর্যটন শিল্প অন্যতম ভূমিকা পালন করতে পারবে। আর বাংলাদেশের পর্যটনের টেকসই বিকাশ এবং উন্নয়নে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ পর্যটনের বিকাশে গতি আনতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের পর্যটন শিল্পের প্রচার ও উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ট্যুর অপারেটর, হোটেল ও এভিয়েশন সংশ্লিষ্ট সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
উন্নয়নের স্বার্থে পর্যটন শিল্পের বিকাশ অপরিহার্য
বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দারিদ্র্য দূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য গ্রামীণ পর্যটনশিল্পের উন্নয়ন একান্ত প্রয়োজন। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি-২০৩০) অর্জন ত্বরান্বিত করতে সমবায়ভিত্তিক পর্যটন, গ্রামীণ পর্যটন, কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম, জেলাভিত্তিক পর্যটন, সাংস্কৃতিক পর্যটন ও হাওর পর্যটন উন্নয়নের মধ্য দিয়ে একতা-সাম্য ও সহযোগিতার প্রত্যয় বৃদ্ধি করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে পর্যটনশিল্প বাংলাদেশে জাতীয় উন্নয়নে বড় অবদান রাখতে পারে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে উল্লিখিত পর্যটন প্রসার প্রয়োজন। অল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করলে সমবায় পর্যটন, কমিউনিটি বেইজড পর্যটন আরো সম্প্রসারিত হবে।
এছাড়াও গ্রামের মানুষের মধ্যে মমত্ববোধ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, সহযোগিতা, একতা, সাম্য বৃদ্ধি পাবে যা বর্তমানে চলমান উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে সহযোগিতা করবে এবং বাস্তবায়িত হবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা। এভাবেই নবদিগন্তে ভোরের সূর্যের প্রজ্বলিত শিখার মতো আলোকিত হবে অমিত সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা এবং পর্যটনের একটি উপস্থাপনায় শ্রমজীবী মানুষের জন্য পর্যটন ধারণাটির বিকাশের রূপরেখা দেয়া হয়েছিল, যার উৎপত্তি ফ্রান্সে। এছাড়াও ইউরোপের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে, যেমন গ্রিস, পর্তুগাল, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ড। কিছু দেশে বিদ্যমান ভোক্তা সমবায় ভ্রমণ সংস্থার নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। এমনকি সমবায় থেকে উত্পত্তি জাপান ও কোরিয়ায় তাদের সদস্যদের জন্য সেবা প্রদানের জন্য পর্যটনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়েছে।
মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভিয়েতনাম, চীন ও ভারতে সমবায় পর্যটন রয়েছে। এই ধরনের সমবায় জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে সমবায় পর্যটনকে গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন, যার ফলে একদিকে স্থানীয় লোকদের জন্য কর্মসংস্থান ও কাজের সুযোগ সৃষ্টি এবং অন্যদিকে অধিক বৈদেশিক-মুদ্রা অর্জন সম্ভব। কিছু পর্যটন সমবায়ের সাফল্যের কাহিনি ইঙ্গিত দেয় যে, ইউরোপীয় দৃশ্যপট বাংলাদেশে ছোট আকারে প্রতিলিপি হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি সফল মত্স্য সমবায় যা মাছ উত্পাদনের জন্য বর্জ্য জল ব্যবহার করেছে। সোসাইটি এখন একটি প্রকৃতি পার্ক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে, যা শহরের পর্যটক হট স্পট হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। পার্কটিতে আকর্ষণীয় নৌকাবাইচ সুবিধা রয়েছে এবং একটি বাস্তুতন্ত্র তৈরি করা হয়েছে, যা অসংখ্য পাখিকে আকর্ষণ করে।
আমাদের মনে রাখতে হবে,কোনো দেশের যদি সত্যিকার অর্থে উন্নয়ন করতে হয়, তাহলে অবশ্যই গ্রামীণ পর্যায়ের উন্নয়ন সবার আগে দরকার। ইউএনডিপির মতে গ্রামীণ উন্নয়ন হলো একটি দেশের বা অঞ্চলের বা গ্রামের জনসমষ্টির গড় আয়ু, শিক্ষা ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি। প্রতিটি দেশের বেশিরভাগ মানুষের বসবাস গ্রামে। গ্রামীণ উন্নয়নের ওপরই একটি দেশের জাতীয় উন্নয়ন নির্ভরশীল। গ্রামই হতে পারে পর্যটন শিল্পের প্রাণকেন্দ্র। গ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ, মানুষের সহজ-সরল জীবনযাপন পদ্ধতি, উদ্ভিদ, বিভিন্ন পাখি, নদী, হাওড়, বিল, ঝিল, বিভিন্ন ধরনের লোকজ অনুষ্ঠান, গ্রামীণ পেশা, খেলাধুলা, প্রাচীন বৃক্ষ এসবই হবে পর্যটকদের মনের খোরাক।বিশ্বের প্রায় সব দেশেই পর্যটন এখন অন্যতম প্রধান লাভজনক খাত। ১৯৫০ সালে বৈশ্বিক পর্যটকের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫ মিলিয়ন, যা ২০১৯ সালে এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২৩৫ মিলিয়নে। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছর প্রায় ১৩৯ কোটি ৫৬ লাখ ৬০ হাজার পর্যটক সারা পৃথিবী ভ্রমণ করবেন। যা বিগত ৬৮ বছরে পর্যটকের সংখ্যার প্রায় ৫০ গুণ। পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিধি ব্যাপকতা লাভ করেছে। পর্যটনের মাধ্যমেই অর্থনৈতিক, সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়।
২০১৮ সালে বিশ্বের জিডিপিতে ট্যুরিজমের অবদান ছিল ১০.৪ শতাংশ, যা ২০২৭ সালে ১১.৭ শতাংশে গিয়ে পৌঁছবে। এছাড়া ২০১৮ সালে পর্যটকদের ভ্রমণ খাতে ব্যয় হয়েছে ১৮৯৪.২ বিলিয়ন ডলার। আর একই বছর পর্যটনে বিনিয়োগ হয়েছে ৮৮২.৪ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরো গতিশীল করতে ও ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরিতে এ শিল্পের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বর্তমানে পৃথিবীর চারটি কর্মসংস্থানের মধ্যে একটি তৈরি হয় পর্যটন খাতে। বর্তমানে বাংলাদেশের পর্যটন খাতে আয় প্রায় ৭৬.১৯ মিলিয়ন ডলার। বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২০ সাল নাগাদ পর্যটন শিল্প থেকে প্রতি বছর ২ ট্রিলিয়ন ডলার আয় হবে। ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের ৫১টি দেশের পর্যটকরা বাংলাদেশে ভ্রমণ করবে, যা মোট জিডিপির ১০ শতাংশ অবদান রাখবে।
বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দারিদ্র্য দূরীকরণ ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করাসহ গ্রামকে শহরে রূপান্তরের জন্য গ্রামীণ বিনোদন তথা গ্রামীণ পর্যটন উন্নয়ন একান্ত প্রয়োজন। যেহেতু বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ কম, সেজন্য পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ঘটলে বাংলাদেশের মানুষের, বিশেষ করে গ্রামীণ মানুষের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। এর জন্য গ্রামের যুবসমাজকে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজন পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ গাইডিং, কুকিং, ইন্টারপ্রিটেশনসহ নানা প্রশিক্ষণ। সরকার গ্রামীণ পর্যটন উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য দূরীকরণের দিকে যথাযথ নজর দিলে ২০৩০ সাল নাগাদ সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জন করতে পারে।
পর্যটন শিল্প বাংলাদেশে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। দেশের মানুষও দেশকে দেখতে চায়, বেড়াতে চায়, অবসর সময় বিভিন্ন জেলায় জেলায় বেড়ানো বেশ অভ্যাস গড়ে উঠেছে। এই জন্য বিভিন্ন জেলায় বিনোদন ও থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা থাকলে পর্যটন শিল্প প্রসার লাভ করবে। আর বিদেশিদের জন্য দরকার নিরাপদ সড়ক, সুন্দর থাকা-খাওয়ার হোটেল-মোটেল এবং পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আমাদের দেশ সবুজ। সবুজকে সবাই ভালবাসে। এই সবুজের সঙ্গে কিন্তু বিনোদন যোগ করতে পারলে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়বে। আর এতে করে আমাদের দেশের অর্থনীতি আরও গতিশীল ও শক্তিশালী হবে।
তথ্যসুত্র
পর্যটন শিল্পের বিকাশ, Bd-Journal.
পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন, Sangbad.
পর্যটন শিল্পে উন্নয়ন, BSS News.
পর্যটনশিল্পের বিকাশ, Ittefaq.
পর্যটনের অর্থনীতি, Daily Janakantha.
পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব, Parbatta News.
পর্যটন শিল্পের প্রসার, Ajkaler Kobor.
পর্যটন শিল্পের বহুমাত্রিকতা, Jugantor.
আজ বিশ্ব পর্যটন দিবস, Bd-Journal.
পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগের আহ্বান, Bangla Tribune.
বিশ্ব পর্যটন দিবস, Jugantor.
পর্যটন দিবস, Kaler Kantha.
পর্যটনের ভূমিকা সম্পর্কে, Business Hour24.
উদযাপিত হচ্ছে বিশ্ব পর্যটন দিবস, Ekattor.
বিশ্ব পর্যটন দিবস, Bangla News24.
পর্যটন দিবস আজ, Dhaka Post.
বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ, Somoy News.